ভোটে জিতে নলহাটি তৃণমূলের
দলের জয়েই ‘জয়’ বিপ্লবের
পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে কুর্সি ছাড়তে হচ্ছে বিপ্লব ওঝাকে।
তিন বছর আগে কংগ্রেস ত্যাগ করে নলহাটি পুরসভা এলাকায় তৃণমূলের সংগঠন বাড়ানোর লড়াইটা কিন্তু শুরু করেছিলেন তিনিই। যে তৃণমূল ২০০৭ সালে ১৬টি ওয়ার্ডে সাকুল্যে ৫০০ ভোট পেয়েছিল, সেখানে এ বার নিজের দলকে ৮টি আসনে জিতিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ করার প্রধান ‘কাণ্ডারী’-ও তিনিই। কিন্তু, ৮ এবং ১৩দু’টি ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েও পরাজিত হয়ে পুরপ্রধানের কুর্সি থেকে এ বার হারাতেই হল বিপ্লববাবুকে। স্থানীয় রাজনীতির কারবারিরা যেটাকে ‘ইন্দ্রপতন’ হিসাবেই আখ্যা দিচ্ছেন।
স্বাভাবিক ভাবেই এমন হারে মুষড়ে পড়েছেন বিপ্লববাবু। মুখে তা প্রকাশ করছেন না। বলছেন, “মানুষ তৃণমূলের প্রতি আস্থা রেখেই তৃণমূলকে জয়ী করেছেন। এটা কোনও ব্যক্তিবিশেষের হার বা জিতের বিষয় নয়।” পাশে পাচ্ছেন দলকেও। যে দল এই প্রথম ভোটে জিতে নলহাটি পুরসভার ক্ষমতায় এল।
৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিপ্লববাবু হেরেছেন সেই প্রার্থীর কাছে, যাঁকে তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতেই ভোটের ঠিক আগের রাতে (শনিবার) গ্রেফতার করেছিল নলহাটি থানার পুলিশ। সমাজবাদী পার্টির সেই প্রার্থী সুব্রত দত্তের কাছে হার মানতে হয়েছে বিপ্লববাবুকে। পরাজয়ের ব্যবধান (৭১) হয়তো খুবই সামান্য, কিন্তু খোদ তৃণমূলের পুরপ্রধান পদপ্রার্থীর হার একই সঙ্গে দল হিসাবে তৃণমূলেরও পরাজয়। একই সঙ্গে তাদের মুখ বুজে মেনে নিতে হচ্ছে, ভোটের দিনে কোনও বুথেই পোলিং এজেন্ট দিতে না পারা ওই ওয়ার্ডের ‘ঘরের ছেলে’ সুব্রত দত্তের জয়কেও।
জয়ী সুব্রত দত্ত।
২০০৭ সালের পুরভোটে বিপ্লববাবু কংগ্রেসের টিকিটে ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়েছিলেন। নলহাটির প্রথম কংগ্রেস পুরপ্রধান আইনাল হোদার পরিবর্তে তাঁকেই দেওয়া হয় পুরপ্রধানের কুর্সি। ২০০৯ সালে বিপ্লববাবু-সহ ৮ কংগ্রেস কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় নলহাটির পুরবোর্ড কংগ্রেসের হাত থেকে চলে যায়। ফলে, কংগ্রেসও এ বার মরিয়া ছিল বিপ্লববাবুকে হারাতে। অন্য দিকে, এ বার দলের জয় তো বটেই, নিজের জয়ও খুব বেশি করে চেয়েছিলেন বিপ্লববাবু। কারণ, এক অর্থে তাঁর কাছেও যে এই পুর-নির্বাচন ছিল ‘মর্যাদার লড়াই’! পাশাপাশি প্রমাণ করার ছিল, তিনি ‘বিশ্বাসঘাতক’ নন। কংগ্রেস ছাড়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।
তাঁর নিজের ৪ নম্বর ওয়ার্ড এ বার সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় অন্য ওয়ার্ড থেকেই তাঁকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হত। নিজের ওয়ার্ড ছাড়ায় প্রথম থেকেই খানিকটা ‘ব্যাকফুটে’ ছিলেন বিদায়ী পুরপ্রধান। সব দিক ভেবেই দু’টি ওয়ার্ডে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে দু’টি ওয়ার্ডে প্রার্থী হওয়ার এই সিদ্ধান্তের পিছনে বিরোধী দলের সঙ্গে-সঙ্গে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও জয় সম্পর্কে বিপ্লববাবুর ‘আত্মবিশ্বাসের অভাব’ দেখছিলেন। মঙ্গলবারের ফলাফল সেই ধারণাকেই কার্যত প্রতিষ্ঠিত করল।
৮ নম্বর ওয়ার্ডেই বিপ্লববাবুর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন প্রাক্তন পুরপ্রধান, কংগ্রেসের আইনাল হোদা (নবুদা)। গত দু’বারের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের এই কাউন্সিলরকে বিপ্লববাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে খাড়া করার পিছনে কংগ্রেসের একটি বিশেষ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ ছিল। ২০০৭ সালে তাঁর বদলে বিপ্লববাবুকে পুরপ্রধান করায় দলের উপরে ‘ক্ষুব্ধ’ ছিলেন আইনাল হোদা। ২০০৯ সালে বিপ্লববাবু-সহ কংগ্রেসের ৮ কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিলেও আইনাল কিন্তু কংগ্রেস ছাড়েননি। সেই আইনালকেই ৮ নম্বর ওয়ার্ডে টিকিট দিয়ে কংগ্রেস চেয়েছিল বিপ্লববাবুর ‘বিশ্বাসঘাতক ইমেজ’কে প্রতিষ্ঠিত করতে। কংগ্রেসের এই চাল কিছুটা ‘সফল’। এই ওয়ার্ডে বিপ্লববাবুর হারের অন্যতম প্রধান কারণ হল কংগ্রেস-তৃণমূলের ভোটকাটাকাটি।
নিজে জিততে না পেরেও আইনাল হোদা বড় অংশের ভোট কেটে বিপ্লব ওঝা-র হারের রাস্তাটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন। ৭৭ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী সুব্রত দত্ত। জিতে উঠে সুব্রতবাবুর প্রতিক্রিয়া, “গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। আমাকে চক্রান্ত করে তৃণমূল জেলে ঢোকাতে চেয়েছিল মিথ্যা অভিযোগে। গ্রেফতারও করিয়েছিল। কিন্তু আমি জামিন পেয়ে মানুষের রায়ে জয়ী হয়েছি।”
অন্যদিকে, গত বার কংগ্রেসের জেতা ১৩ নম্বর ওয়ার্ডেও (পরে ওই কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন) হেরেছেন বিপ্লববাবু। এখানে শেষ হাসি হাসলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের নতুন প্রার্থী হাসিবুল রহমান। জয়ের ব্যবধান ৯৯। এ ক্ষেত্রে অবশ্য কংগ্রেস প্রার্থী ভোট কাটতে পারেননি (পেয়েছেন মাত্র ২৫টি ভোট)।
পরাজিত বিপ্লব ওঝা।
যদিও জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বিপ্লববাবুর হারের পেছনে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি’র ‘মিলিত আঁতাত’কেই দায়ী করেছেন। তৃণমূলেরই একাংশের অবশ্য অভিমত, দু’টি ওয়ার্ডে বিপ্লববাবুর দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত দলের বহু নেতা-কর্মী মেনে নিতে পারেননি। দ্বিতীয়ত, বিপ্লববাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ‘পুরনো তৃণমূল’ নেতা-কর্মীদের পাত্তা দেননি। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একটা অংশ যেভাবে বিপ্লববাবুর ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভাবমূর্তি’কে তুলে ধরছিলেন, তা পুরনো কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশকেই ক্ষুব্ধ করেছিল।
তবুও যে তৃণমূল ২০০৭ সালের পুরনির্বাচনে নলহাটিতে মাত্র ৫০০-র মতো ভোট পেয়েছিল, প্রণব-পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে সেই ‘মর্যাদার লড়াই’-এ হারিয়ে এই অভূতপূর্ব জয়ের পেছনে বিপ্লববাবুর যে ভূমিকা, তাকে অস্বীকার করারও উপায় নেই। এখানেই বোধহয় পরাজিত পুরপ্রধানের সবচেয়ে বড় সাফল্য। সাধে কী আর জেলা তৃণমূল সভাপতি বলছেন, “আগামী দিনে রামপুরহাট মহকুমায় তৃণমূল চলবে বিপ্লববাবুর নেতৃত্বেই।”
আর মাত্র ৩টি আসন পাওয়া কংগ্রেসের সান্ত্বনাও একটাইবিপ্লববাবুর ফের পুরপ্রধানের কুর্সি না পাওয়া। যাঁর নেতৃত্বে নলহাটিতে ভেঙেছিল কংগ্রেস, তাঁর পরাজয়েই এখন আনন্দ খুঁজছেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব।

ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.