ভোটে জিতে নলহাটি তৃণমূলের
ঘরে রইলেন অভিজিৎ, রাস্তায় তখন উচ্ছ্বাস তৃণমূলের
সেই কোন সকাল থেকে নলহাটির হরিপ্রসাদ হাইস্কুলের সামনে হাজির উৎসুক জনতা! পুলিশের ব্যারিকেড থাকায় বড় অংশের ভিড় অবশ্য দেখা গেল গণনাকেন্দ্র থেকে ১০০ মিটার দূরে নলাটেশ্বরী মন্দিরের সামনে। এ ছাড়াও ভোটের ফলাফল জানতে মানুষ ভিড় জমালেন গণনাকেন্দ্র লাগোয়া পুরসভার গলি এবং সমবায় ব্যাঙ্ক, নলাটেশ্বরী মন্দির ও হাইস্কুল যাওয়ার রাস্তায়। তীব্র রোদে রাস্তার ধারে দোকানের ছোট্ট বারান্দায় কিংবা রাস্তার ধারের বাড়িগুলির বারান্দাতেও ঠাঁই নিয়েছিলেন অনেকে।
সকাল ৮টা আগেই হরিপ্রসাদ হাইস্কুলের সামনে পুলিশের নিরাপত্তাবলয় পেরিয়ে প্রার্থীরা একে একে ঢুকে পড়লেন গণনাকেন্দ্রে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী দূর্বা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য পৌঁছলেন সবার শেষে। দেরির অবশ্য বিশেষ কারণও ছিল! “আজ মঙ্গলচণ্ডীর পুজো। পুজো সারতে একটু দেরি হয়ে গেল আর কী!” বললেন দূর্বাবাবু। গণনাকেন্দ্রে এলেন না বিদায়ী পুরপ্রধান বিপ্লব ওঝা। গণনাকেন্দ্রের বাইরেও তাঁর খোঁজ মিলল না।
ওদিকে শুরু হয়ে গিয়েছে গণনা। শুরুর দশ মিনিটের মধ্যে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেসপ্রার্থী মিনা মস্করা তাঁর স্বামী কংগ্রেস নেতা বুলু নস্করের সঙ্গে গণনাতকেন্দ্রের দোতলা থেকে নেমে এলেন। জানালেন, ২ ও ৫ দু’টো ওয়ার্ডেই হারছেন কংগ্রেসপ্রার্থীরা। তাঁরা চলে যেতেই গণনাকেন্দ্রের দোতলা থেকেই কেউ চেঁচিয়ে জানালেন, প্রথম রাউন্ডের গণনার শেষে বামফ্রন্টের প্রার্থী সমাজবাদী পার্টির সুব্রত দত্ত তৃণমূলের বিপ্লব ওঝা-র থেকে ৩৬ ভোটে এগিয়ে গিয়েছেন। এই খবরে তৃণমূলের কিছু কর্মী-সমর্থক খানিকটা মুষড়ে পড়লেও কিছুক্ষণের মধ্যে উল্লাসে মেতে উঠলেন তাঁরা।
ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
জিতে গিয়েছেন বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অশোক ঘোষ। এর পরেই একের পর এক ১ থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ের খবর এল। ফলাফল ঘোষণার আগে কংগ্রেস ও বাম সমর্থকরা বেশ খানিকটা হম্বিতম্বি করছিলেন বটে। কিন্তু তৃণমূলের জয়ের খবর যত আসতে লাগল তত তাঁদের উচ্ছ্বাসের মাত্রা কমে যেতে লাগল। তখন চারদিকেই শুধু ‘তৃণমূল’ ‘তৃণমূল’। সমানে চলছে ‘দিদি’র নামে জয়ধ্বনি! অনেকেই ভাবতে শুরু করেছেন গতবার পুরসভার বোর্ড যারা গড়েছিলেন সেই কংগ্রেস কোথায়? পরপর দু’টো পুরনির্বাচনে জেতা সর্বভারতীয় দলের এই প্রাথমিক হাল দেখে তাঁদের মনে ততক্ষণে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি কংগ্রেসকে মানুষ নলহাটিতে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করল?
এরই মাঝে খবর এল বিপ্লব ওঝা দু’টি ওয়ার্ডেই পরাজিত হয়েছেন। বোর্ড দখল যে হচ্ছে না, সেটা বুঝেও কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের এই একটা খবরে অনেক বেশি খুশি হতে দেখা গেল। কেউ কেউ এমন মন্তব্যও ছড়িয়ে দিলেন, “যে বিশ্বাসভঙ্গ করেছিল, সে তা হলে হারলই!” আবার অনেকেই ভোটের আগের দিন তৃণমূলের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সমাজবাদী প্রার্থী সুব্রত দত্তের জয়ে খুশি। এক বাম সমর্থক বললেন, “বিপ্লব ওঝা মুক্তিকে (সুব্রতবাবুর ডাক নাম) পুলিশে দিল। সেই মুক্তিই বিপ্লব ওঝাকে হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিল।”
তত ক্ষণে মোটামুটি ফল ঘোষণা একপ্রকার হয়েই গিয়েছে। তৃণমূল ৮, কংগ্রেস ৩, বামফ্রন্ট ৩, বিজেপি ১।
প্রথমবার জিতে বিজেপিপ্রার্থী পূর্ণিমা ঘোষের সমর্থকেরা গণনাকেন্দ্রের বাইরে ‘বিজেপি জিন্দাবাদ’ ধ্বনিতে এলাকা মাতিয়ে তুলল। তারই ফাঁকে বিজয়ী তৃণমূল সমর্থকেরা আবির খেলার মাধ্যমে শুরু করে দিয়েছে বিজয় উৎসব। তৃণমূলের ছোট একটি বিজয় মিছিলও দেখা গেল। কিন্তু মিছিলে সেই জৌলুস কোথায়? তৃণমূল জিতলেও তাদের এই জয়ের স্বাদ যেন মধুর হল না। তৃণমূলের সম্ভাব্য পুরপ্রধানের পরাজয় তাদের অনেকটাই নিরাশ করে দিল। গণনাকেন্দ্র ছাড়িয়ে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী কংগ্রেসপ্রার্থীর কর্মীদের আবির খেলতে দেখা গেল। একটু এগিয়ে গেলেই ব্লক কংগ্রেস কার্যালয়। কিন্তু সেখানেও লোকজন প্রায় নেই।
দেখা গেল না স্থানীয় বিধায়ক তথা প্রণব-পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কেও। নিজের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ভাড়া বাড়িতে থেকে নজর রেখেছিলেন গণনার দিকে। কংগ্রেসের এই ‘অপ্রত্যাশিত’ ফলের কথা সকালেই বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলেন নলহাটির কংগ্রেস বিধায়ক। প্রণববাবুর জবাব এসেছে, ‘মেনে নাও এই হার’জানালেন অভিজিৎবাবুই।
জয়ের পর নলহাটি পুরসভার গলিতে উল্লাস করতে দেখা গেল তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের। পুরভবনে দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল-সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতৃত্ব ততক্ষণে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। সবাই আছেন, কিন্তু বিপ্লববাবু কোথায়? রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ ঢুকলেন পরাজিত ‘নায়ক’কে নিয়ে। বিপ্লববাবুর মতোই হেরে গিয়েছেন তৃণমূল কাউন্সিলর একরামুল হক। কিন্তু তিনি বললেন, “জয় তো আমাদেরই হয়েছে। কংগ্রেসের আছেটা কী যে, ওরা জিতবে!”
দেড় মাসের ভোট যুদ্ধের আপাতত যবনিকা পড়ল। ক্ষমতায় ‘ফিরল’ তৃণমূল। আপাতত তাদের লক্ষ্য, পুরবাসীর তিনটে মূল দাবি পূরণ করা। ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া, যানজটে ক্লান্ত নলহাটিবাসীকে দ্রুত রেলের রোড ওভারব্রিজের কাজ প্রতিশ্রুতি মতো শেষ করা এবং রাস্তা দখল করে বসা সব্জি ব্যবসায়ীদের সরানো।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.