দল জিতল পুরসভায়। কিন্তু, দু’টি ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েও হেরে গেলেন দলীয় পুরপ্রধান!
২০০২-এ পুরসভার মর্যাদা পাওয়া নলহাটিতে প্রথমবার তৃণমূলের জয় নিয়ে তাই যতটা না চর্চা, তার চেয়ে ঢের বেশি আলোচনা দলের সবচেয়ে ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীর এমন মুখ থুবড়ে পড়াকে ঘিরে। কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যাওয়া যে পুরপ্রধানকে এতদিনের প্রচারে ধারাবাহিক ভাবে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিয়ে এনেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব, সেই বিপ্লব ওঝাকে ‘প্রত্যাখ্যান’ করেছেন নলহাটির ভোটারেরা। যদিও তাঁর দলকে ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টিতে জিতিয়ে পুরবোর্ড গড়ার পথ করে দিয়েছেন সেই ভোটারেরাই।
জয়ের আনন্দে তৃণমূলের ‘চোনা’ যদি বিপ্লববাবুর হার হয়, কংগ্রেসের পক্ষে সেখানে পুরোটাই অগৌরবের। কারণ, বিপ্লববাবুদের সঙ্গে এ বার ‘মর্যাদার লড়াই’-এ নেমেছিলেন খোদ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র, নলহাটির কংগ্রেস বিধায়ক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। পুরভোটের আগে কার্যত মাটি কামড়ে পড়ে থেকে তিনি দোরে দোরে গিয়ে প্রচারও করেছিলেন। শহর জুড়ে বাবা-ছেলের মুখের ছবি সংবলিত হোর্ডিং ও পোস্টার। বাবা-ছেলের নাম নিয়েই দিনরাত প্রচার। প্রদেশ কংগ্রেসের তাবড় নেতা-নেত্রী প্রচারে এসে অভিজিৎবাবু ও প্রণববাবুর নাম করেই ভোট চেয়েছেন। |
কিন্তু, ভোটারেরা অন্য রকম ভেবেছিলেন। তাই তো এই প্রথম বিজেপি একটি আসন পেলেও কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে। ফল বলছে, ২০০৭ সালে যেখানে ১৬টি ওয়ার্ডের (একটি ওয়ার্ড এ বার কম) মধ্যে ১১টিই পেয়েছিল কংগ্রেস, এ বার সেখানে তাদের ঝুলিতে মাত্র ৩টি আসন। অথচ গতবার ১৬টি ওয়ার্ড মিলিয়ে তৃণমূলের প্রার্থীরা ৫০০-রও কম ভোট পেয়েছিলেন! এ বার নলহাটি পুরভোটে কংগ্রেসের ‘মুখ’ অভিজিৎবাবু এই বিপর্যয়ের যাবতীয় দায় মাথা পেতে নিয়েছেন। কংগ্রেসের এই ‘অপ্রত্যাশিত’ ফলের কথা সকালেই বাবাকে জানিয়েছেন।
হারের নৈতিক দায় নিলেও নিজের দলের স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি নলহাটির কংগ্রেস বিধায়ক। বিপর্যয়ের ময়নাতদন্তে বলেছেন, “বিধায়ক হিসাবে গত এক বছরে আমি কী কী কাজ করেছিপুরবাসীর কাছে তা ঠিকমতো তুলে ধরা হয়নি। তা ছাড়া, এক জন বিধায়ক হিসাবে বা প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য হিসাবে আমার যে দায়িত্ব ছিল, তা আমিই শুধু পালন করব আর বাদবাকি দায়িত্ব পালনে অন্যদের সদর্থক ভূমিকা থাকবে না, এ ভাবে হয় না।” তাঁর আরও ক্ষোভ, “এমন কিছু ব্যক্তি এ বার কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়িয়েছিলেন, যাঁরা সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারেননি।” |
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন... |
|
|
যাঁর ‘নেতৃত্বে’ নলহাটিতে এ বার কংগ্রেসকে হারিয়ে জয় তৃণমূলের, সেই বিপ্লব ওঝা গতবার কংগ্রেসের টিকিটে জিতলেও পরে সাত কংগ্রেস কাউন্সিলরকে নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় পুরবোর্ড উল্টে যায়। ফলে, এক অর্থে তাঁর কাছেও এ বারের ভোট ছিল ‘মর্যাদার’ লড়াই! পাশাপাশি প্রমাণ করার ছিল যে, তিনি ‘বিশ্বাসঘাতক’ নন। কিন্তু, দু’টি ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েও শেষরক্ষা হল না! বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল অবশ্য ‘সেনাপতির’ হারেও তাঁর পাশেই দাঁড়াচ্ছেন। বলেছেন, “আগামী দিনে রামপুরহাট মহকুমায় (যার অন্তর্গত নলহাটি) তৃণমূল চলবে বিপ্লববাবুর নেতৃত্বেই।”
|