সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে আটকাল পুলিশ-প্রশাসন। বর্ধমানের কেতুগ্রামে মঙ্গলবার ওই নাবালিকার বিয়ের আয়োজন করেছিল বাড়ির লোকেরা। খবর পেয়ে বিডিও এবং পুলিশ গ্রামে গিয়ে তা আটকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যমজ মেয়েকে নিয়ে কেতুগ্রামের মুরুন্ডি গ্রামে বাপের বাড়িতে থাকেন মিতা দাস। স্বামী দেখাশোনা না করায় বছর পাঁচেক আগে পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদার শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে আসেন তিনি। বাপের বাড়ির আর্থিক অবস্থা বিশেষ ভাল নয়। মিতাদেবী একশো দিনের কাজ করেন। দুই মেয়ে মুন্না ও পায়রা মুরুন্ডি গ্রাম সংলগ্ন মুর্শিদাবাদের সালারের বনওয়ারিবাদ হাইস্কুলের ছাত্রী। মঙ্গলবার বর্ধমানের নাদনঘাটের বাসিন্দা প্রহ্লাদ মণ্ডলের সঙ্গে মুন্নার বিয়ের আয়োজন করেছিলেন মিতাদেবী। প্রহ্লাদ দিল্লিতে গয়নার দোকানে কাজ করেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ দিন সকালে সালার থেকে মিতাদেবীর আত্মীয় পরিচয়ে ফোন করে এক ব্যক্তি কাটোয়ার মহকুমাশাসক ও কেতুগ্রাম ২ বিডিও-কে এই বিয়ের আয়োজনের কথা জানান। মহকুমাশাসক দেবীপ্রসাদ করণমের নির্দেশে পুলিশ নিয়ে বিডিও হেমন্তকুমার ঘোষ গ্রামে গিয়ে দেখেন, বিয়ের আয়োজন সম্পূর্ণ। নাবালিকার বিয়ে দেওয়া আইনবিরুদ্ধ জানিয়ে তা বাতিল করার কথা বলেন বিডিও। তবে মিতাদেবী জানান, মেয়ের বিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই। আর্থিক অবস্থা এতই খারাপ যে এ দিনও সকালে তিনি একশো দিনের কাজে গিয়েছিলেন। গ্রামের মানুষ চাঁদা তুলে বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন। তাই তা ভেস্তে গেলে তিনি সমস্যায় পড়বেন। গ্রামবাসীরাও মিতাদেবীকে সমর্থন করেন। তাঁরা জানান, পড়শিরা খাবারের ব্যবস্থা করলেই খেতে পায় ওই দুই বোন। |
বিডিও তখন প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে তাঁদের বোঝান। শেষে বাসিন্দারা দাবি করেন, বিয়ে না হলে মেয়েটি ও তার মা-বোন যাতে ভাল ভাবে বাঁচতে পারে, প্রশাসনকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। বিডিও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ্বাস দিলে ১৮ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে না দেওয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন মিতাদেবী। নাদনঘাটে পাত্রের বাড়িতে ফোন করে পুলিশ বিয়ে বাতিলের কথা জানায়। পাত্রের বাবা বৃন্দাবন মণ্ডল পুলিশের কাছে দাবি করেন, মেয়ের বয়স ১৮-এর কম, তা তাঁদের জানা ছিল না।
মুন্নার বোন পায়রা বলে, “আমরা পড়াশোনা করতে চাই। কিন্তু আমাদের তো খাবারই জোটে না। পড়াশোনা করব কী করে? তাই মা মুন্নার বিয়ে দিচ্ছিল।” বিডিও হেমন্তবাবু বলেন, “গ্রামে পুলিশি প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বুধবার ওই নাবালিকার পরিবারকে ব্লক অফিসে দেখা করতে বলেছি। সরকারি ভাবে তাঁদের কোনও সাহায্য করা যায় কি না, তা দেখা হবে।”
|
(সহ-প্রতিবেদন: শুভাশিস সৈয়দ)
|