শুধু উচ্চমাধ্যমিকে দ্বিতীয়ই নয়, বর্ধমানের মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের ঝুলিতে এবার একাদশ, দ্বাদশ, পঞ্চদশ ও একবিংশ স্থানও। ফলে সারা বর্ধমান জুড়েই হৈচৈ পড়ে গিয়েছে ওই স্কুলকে ঘিরে। সকলেই তাঁদের ছেলেমেয়েদের এখানে ভর্তি করাতে চান। জানতে চান স্কুলের এই সাফল্যের রহস্যের ‘চাবিকাঠি’টা কী, যা তাকে শহরের অন্য স্কুলগুলির তুলনায় ‘বিশেষ’ করে দিয়েছে।
এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে এখান থেকে দ্বিতীয় হয়েছে কৌস্তভ সাহা, ১১তম হয়েছে অর্ক মিত্র (৪৬৬), ১২তম হয়েছে রাজা মাজি (৪৬৫), ১৫তম স্থান পেয়েছে দেবাদ্রী পাল (৪৬৩) ও ২১তম স্থানে রয়েছে রঙ্গিত ভট্টাচার্য (৪৫৬)। এদের মধ্যে রাজা মাজি জয়েন্টে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে রাজ্যে দ্বিতীয় হয়েছে। |
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই স্কুলকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী ৭ জুন বিকেলে এই কৃতি ছাত্রদের অন্যান্যদের সঙ্গে সম্বর্ধনা দেওয়া হবে কলকাতা টাউনহলে।
কিন্তু এই সাফল্যের রসায়ন নিয়ে কী বলছেন শিক্ষকেরা? স্কুলের প্রধান শিক্ষক শম্ভুনাথ চক্রবর্তী বলেছেন, “রাজ্যস্তরের পরীক্ষায় ভাল ফল আমাদের স্কুলে নতুন নয়। প্রতিবারই স্কুলের ছেলেরা প্রথম ২০ জনের মধ্যে থাকে। আর এই সাফল্যের জন্য সারাবছর ধরে আমরা কিছু বিশেষ পরিকল্পনা নিই। অভিভাবক, পরিচালন সমিতির সদস্য, শিক্ষক, ছাত্র প্রত্যেককেই সামিল করা হয় তাতে। এবারের সাফল্যও মিলেছে এই টিম গেমে।”
তবে এই সারা বছরের প্রস্তুতি যে মোটেই তত্বকথা নয়, তা প্রমান হয়েছিল কয়েক বছর আগের এক ঘটনায়। সে বার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ভাল ফল হওয়ায় রীতিমত সাংবাদিক বৈঠক ডেকে স্কুলের এই প্রধান শিক্ষকই দাবি করেছিলেন, তাঁদের ছেলেদের খাতা ঠিকমত দেখা হয়নি।
স্কুলের এই সাফল্য সম্পর্কে অঙ্কের শিক্ষক সৌমেন ঘোষ বলেছেন, “স্কুলের নিয়মানুবর্তিতা ও পঠনপাঠন পদ্ধতিতে কঠোর নজর দেওয়া হয়। তাতেই মিলেছে সাফল্য।” বিজ্ঞান শাখায় এ বার প্রায় সমস্ত ছাত্রই উচ্চমাধমিকে শতকরা ৯০ ভাগ নম্বর পেয়েছে। এই মেধাবি ছাত্রদের নিয়ে স্কুলের পরেও ক্লাস চলে দাবি সৌমেনবাবুর। বাংলার শিক্ষক ফাল্গুনি মিস্ত্রির কথায়, “উচ্চমাধ্যমিকের ফল অপ্রত্যাশিত নয়। তবে এ বারের ফল আরও দায়বদ্ধ হতে সাহায্য করবে।” তিনি জানান, পাঠ্যবইয়ের সমস্তটাই খুঁটিয়ে পড়াবার জন্য ছাত্রদের সব ধরনের প্রশ্নের উত্তর লেখার মানসিকতা তৈরি হয়েছে। বানিজ্য বিভাগের শিক্ষক কৌশিক রায় বলেন,“কমার্সে এখানে যারা ভর্তি হয় তাদের সকলেই অন্য স্কুলের কৃতি ছাত্র। আরও ভাল ফলের জন্য এখানে ভর্তি হয়।” কৌশিকবাবুর দাবি, স্কুলের পরিবেশ এমনই যে সাধারণ ছেলেরাও এখানে এসে ভাল হয়ে যায়। পরিচালন সমিতির সম্পাদক মজিবর রহমান ও সদস্য তারকনাথ রুদ্রের কথায়, “অনেক স্কুলেই পরিচালন সমিতির সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের সম্পর্ক ঠিক না থাকায় প্রচুর মতানৈক্য দেখা দেয়। এখানে সেসব নেই। এটাও ছাত্রদের ফল ভালো হওয়ার কারণ।” এতো গেল শিক্ষকদের কথা। কিন্তু স্কুলের ছাত্ররা কী বলছে? উচ্চমাধ্যমিকে ১১তম স্থান দখল করা অর্ক বলেছে, “শুধু লেখাপড়াই নয়, স্কুলের স্যারেরা সাংস্কৃতিক বা খেলাধূলায় ব্যাপারেও দারুন উৎসাহ দেন। ফলে আমরা অনেকেই পরবর্তী জীবনেও সাফল্যের চাবিকাঠি পাই এখান থেকে।” জয়েন্টে দ্বিতীয় হওয়া রাজার কথায়, “স্কুলে বা বাড়িতে সবসময় প্রধান শিক্ষকের সাহায্য পাই। এমনকী ছুটির দিনেও প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসেন। অন্য শিক্ষকেরাও কাছেও সবসময় সাহায্য পাই।”
|