ভোটের আগে দলের যুদ্ধে ‘মধ্যমণি’ ছিলেন তাঁরা। ফল বেরোনোর পরেও তাঁরা আলোচনার কেন্দ্রে। দুর্গাপুরে পুরভোটে কংগ্রেস এবং সিপিএমের হারের পাশাপাশি দলের ‘সেনাপতি’দের পরাজয়ও শহরে এখন চর্চার বিষয়।
প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী ছিলেন এ বার বামেদের মেয়র পদপ্রার্থী। তাঁর কাঁধে ভর দিয়েই পুরভোটের বৈতরণী পেরোতে চেয়েছিল সিপিএম। কিন্তু তা হয়নি। বিপ্রেন্দুবাবু নিজে হেরেছেন। বামফ্রন্টও সুবিধা করতে পারেনি। বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের বাবা, প্রয়াত কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়ের পোলিং এজেন্ট হিসেবে ১৯৬৭ সালে রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ বিপ্রেন্দুবাবুর। পরে যোগ দেন সিপিএমে। ১৯৯৭-এ প্রথম পুরভোটে জিতে তিনি কাউন্সিলর হন। ২০০২ সালে পুনর্নিবাচিত হন। শুরু থেকেই তিনি মেয়র পারিষদ। ২০০৬-এ তৃণমূলের অপূর্ব মুখোপাধ্যায়কে হারিয়ে বিধায়ক হন বিপ্রেন্দুবাবু। ২০০৭-এ পুরভোটে আর প্রার্থী হননি। গত বিধানসভা নির্বাচনে অপূর্ববাবুর কাছে প্রায় ১৬ হাজার ভোটে হারেন তিনি। এই পুরভোটে তিনিই ছিলেন সিপিএমের প্রধান মুখ। কিন্তু ইন্দ্রপতন হল। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের চন্দন সাহার হারলেন ১১১৭ ভোটে। ফল নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “আমার ওয়ার্ডের অনেক বুথে এজেন্টদের বসতে দেওয়া হয়নি। প্রচারে বাধা, ভোটারদের ভয় দেখানো তো ছিলই। এ সব সত্ত্বেও মোটে১১০০ ভোটে হেরেছি।” |
|
|
|
|
বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী। |
তারাশঙ্কর সুকুল। |
বংশীবদন কর্মকার। |
বংশীধর সাহা। |
|
সিপিএম এ বার যে দুই মেয়র পারিষদকে টিকিট দিয়েছিল তাঁদের অন্যতম দেড় দশকের কাউন্সিলর তথা পুরসভার বিদায়ী মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য, নিকাশি ও কঠিন বর্জ্য) তারাশঙ্কর সুকুল। বেনাচিতির এই প্রবীণ সিপিএম নেতার উপরে ভরসা রয়েছে উচ্চ নেতৃত্বের। অসুস্থতার কারণে বহু দিন ধরে তিনি পুরসভায় অনিয়মিত। তবু তাঁকে টিকিট দিয়েছিল সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদক অমল হালদার জানিয়েছিলেন, তারশঙ্করবাবু পুরসভার কাজে অভিজ্ঞ। এ বার অধিকাংশই নতুন প্রার্থী। বামফ্রন্ট বোর্ড গঠন করলে নতুনেরা তাঁর কাছে কাজ শিখে নেবে। কিন্তু ইন্দ্রপতন এখানেও। বামফ্রন্টের বোর্ড গড়া হচ্ছে না। তৃণমূলের বিদ্যুৎ মণ্ডলের কাছে ৬৪৭ ভোটে হেরে আর কাউন্সিলরও হচ্ছেন না তারাশঙ্করবাবু।
পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর বংশীবদন কর্মকার এ বার প্রার্থী হয়েছিলেন ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে। ১৯৯৭ ও ২০০২ সালে তিনি জিতেছিলেন ২৬ নম্বর থেকে। দুর্গাপুর মহকুমা আইএনটিইউসি-র সভাপতি বংশীবাবু দীর্ঘদিন ধরে প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী কমিটির সদস্য। ২০০২-এ এক মাত্র কংগ্রেস কাউন্সিলর হিসেবে পুরসভায় গিয়েছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়। সেখানে প্রার্থী হন তাঁর স্ত্রী শাশ্বতীদেবী। সে বার কংগ্রেসের যে তিন জন নির্বাচিত হন, শাশ্বতীদেবী তাঁদের অন্যতম। এ বারও তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। কংগ্রেসের হয়ে এক মাত্র জয়ী প্রার্থী তিনিই। তবে পাশের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে হেরে গিয়েছেন তাঁর স্বামী বংশীবাবু। শুধু হার নয়, প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে তিনি তৃতীয় স্থানে।
নোটিফায়েড এরিয়া থেকে পুরসভা হওয়ার পরে প্রথম নির্বাচনে যে ছ’জন কংগ্রেস থেকে জিতেছিলেন বংশীধর সাহা তাঁদেরই এক জন। ডিএসপি-র শিবাজি রোড হাইস্কুলের শিক্ষক বংশীধরবাবু ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছিলেন। ২০০২-এ তিনি সিপিএমের কাছে হারেন। তবে ২০০৭-এ ফের জেতেন তিনি। ২০০২ সালে অবসর নেওয়ার পর থেকে দু’বেলাই যান বেনাচিতি পাঁচ মাথার মোড়ের দলীয় কার্যালয়ে। ওয়ার্ডের বাসিন্দারা দরকারে সেখানেই দেখা করেন তাঁর সঙ্গে। ‘মাস্টারমশাই’ ফের জিতবেন, প্রায় নিশ্চিত ছিলেন দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা। তা আর হল না। তৃণমূলের পল্লবকান্তি নাগের কাছে অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক হারলেন ১২০২ ভোটে।
দল গেল, গেলেন সেনাপতিরাও।
|