‘ত্রিমুখী’ নয়। তার বাইরেও যে ‘মুখ’ আছে, তা আবিষ্কার করে একটু চমকেই গেল দুর্গাপুর।
দুই মুখের এক জন পুরনো, অন্য জন আনকোরা নতুন। প্রথম জনের দল ছিল, কিন্তু আপাতত নেই। দ্বিতীয় জনের দু’দিন আগেও দল ছিল না, কিন্তু এখন আছে। প্রথম যদিও বা কখনও জিতবেন ভেবে থাকেন, দ্বিতীয় জন কল্পনাই করেননি।
অরবিন্দ নন্দী চেয়েছিলেন, পুরভোটে তৃণমূলের হয়ে দাঁড়াবেন। নিজের হাতে সংগঠন গড়েছেন তিনি, অনেক মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছেন। কিন্তু টিকিট দেওয়ার সময়ে দল তাঁকে মনে রাখেনি। মনের দুঃখে দলের জামা খুলে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে ‘নির্দল’ হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। জিতেছেন সামান্য ভোটে, কিন্তু দলের কিছু নেতার (যাঁরা টিকিট না দেওয়ার পিছনে ছিলেন) মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছেন।
অরবিন্দবাবু আসলে ছিলেন কংগ্রেসের লোক। ২০০৭ সালের পুর নির্বাচনে সিপিএমের হাত থেকে ৩৮ নম্বর আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছিল কংগ্রেস। দলের প্রার্থী আলো সাঁতরা জেতেন ৩২৯ ভোটে। এই জয়ের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন অরবিন্দবাবু। পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু তারা তাঁকে প্রার্থী করেনি। অরবিন্দবাবু ‘নির্দল’ হিসাবে দাঁড়ানোয় ওই ওয়ার্ডে লড়াই থেকেই ছিটকে যায় তৃণমূল। এমনকী তৃতীয় স্থানেও তারা থাকতে পারেনি। |
|
|
অরবিন্দ নন্দী |
মনোজকুমার সিংহ |
|
অরবিন্দবাবু যেখানে ১৪৭৩ ভোট পেয়েছেন, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের সত্যবান ঘোষ পেয়েছেন ১৩৯৪। জয় এসেছে মাত্র ৭৯ ভোটে। আগের বারের কাউন্সিলর, কংগ্রেসের আলো সাঁতরা ১২৪৪ ভোট পেয়েছেন। সেখানে তৃণমূলের সুকুমার বর্ধন পেয়েছেন মোটে ৩১৯ ভোট। স্থানীয় সূত্রের খবর, কংগ্রেসের একটি গোষ্ঠী কাউন্সিলরের কাজকর্মে অখুশি ছিল। তারাও অরবিন্দবাবুর হয়েই ভোটে খেটেছে। যার ফল ঘরে তুলেছেন পুরনো নেতা। কিন্তু এ বার তিনি কী করবেন? একাই থাকবেন, নাকি ফিরবেন তৃণমূলে? অরবিন্দবাবু বলেন, “দু’তিন দিনের মধ্যেই অনুগামীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।”
২০০২ সালে ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে জিতেছিল বিজেপি। বছর দুয়েক পরে বিজেপি কাউন্সিলর সুদীপ্ত গুন সিপিআইয়ে যোগ দেন। পরের ভোটে আসনটি দখল করে আরএসপি। এ বারও তারা সেই আসন ধরে রেখেছে। কিন্তু চমক লুকিয়ে ছিল ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে। বিজেপি সেখানে কিছু পাওয়ার আশা করেনি। প্রচারও করেনি তেমন করে। কিন্তু সেখানেই টেক্কা মেরে গেলেন এলাকার কেব্ল অপারেটর মনোজকুমার সিংহ। ক’দিন আগে যাঁরা বুঝিয়ে-সুজিয়ে তাঁকে রাজি করিয়েছিলেন, সেই নেতারাও ভাবতে পারেননি। বিজেপির আসানসোল জেলা সহ-সভাপতি লক্ষ্মণ ঘড়ুই বলেন, “আমরা সে ভাবে ওখানে প্রচারও করিনি। তবু যে মানুষ আমাদের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, তাতে আমরা কৃতজ্ঞ।” |
নবীনে-প্রবীণে। দলের কনিষ্ঠতম কাউন্সিলর গৌরী বিশ্বাসের
সঙ্গে তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অপূর্ব মুখোপাধ্যায়। |
কাজের সুবাদে মনোজবাবু এলাকায় বেশ পরিচিত মুখ। পাড়ায় সুনাম আছে। মানুষের বিপদে-আপদে পাশে থাকেন। খেলাধুলো ভালোবাসেন। আদৌ রাজনীতির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না। বিজেপি নেতারা বাড়িতে গিয়ে তাঁকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। অথচ রাজ্যের দলগুলিকে তিনি ফ্রন্টফুটেই খেলে দিয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, সিপিএমের জয়প্রকাশ সিংহকে হারিয়েছেন ৩৩১ ভোটে। তৃণমূল প্রার্থী, দলের সংখ্যালঘু সেলের শিল্পাঞ্চল সভাপতি মুর্শেদ মির রয়েছেন তৃতীয় স্থানে। মনোজবাবুর কথায়, “এলাকার মানুষের দাবি-দাওয়া পূরণের জন্য পুরসভায় দরবার করে কাজ আদায় করাই আমার লক্ষ্য।”
কথা বলে পরে বদলে ফেলা রাজনীতিকদের কাছে জলভাত। দেখা যাক, মনোজবাবুর পুরোদস্তুর রাজনীতিক হয়ে উঠতে কত দিন লাগে!
|