রাজ্যে পালাবদলের এক বছর পরেও ‘পরিবর্তনে’র পক্ষেই রায় দিল দুর্গাপুর।
দেড় দশক আগে পুরসভা হওয়া ইস্তক রাশ যাদের হাতে ছিল, সেই বামেদের প্রত্যাখ্যান করে তৃণমূলকে দায়িত্ব দিল কলকাতার বাইরে রাজ্যের অন্যতম
প্রধান শহর। শুধু আসন নয়, ভোট শতাংশের বিচারে গত বছরের চেয়েও পিছিয়ে পড়ল বামেরা।
রাজ্যে ‘পরিবর্তনের হাওয়া’ ওঠার আগে, ২০০৭ সালের পুরভোটে দুর্গাপুরের ৪৩টি আসনের মধ্যে ৩৭টিই পেয়েছিল বামফ্রন্ট। কংগ্রেস এবং তৃণমূলের কপালে জুটেছিল মোটে তিনটি করে। এ বার একা লড়েই তৃণমূল ছিনিয়ে নিয়েছে ২৯টি আসন। জিতেছেন তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়া এক ‘নির্দল’ও। বামফ্রন্ট আটকে গিয়েছে ১১টিতে। একটি আসন পেয়ে কোনও রকমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে কংগ্রেস। দশ বছর পরে ফের আসন পেয়েছে বিজেপি। |
জয়ের খবর জানার পরে আবির খেলায় মেতেছেন তৃণমূল সমর্থকেরা। দুর্গাপুরে মঙ্গলবার বিশ্বনাথ মশানের তোলা ছবি। |
দুর্গাপুর মূলত শিল্পাঞ্চল হলেও ডিএসপি টাউনশিপ থেকে বেনাচিতি বা ঝাঁ চকচকে সিটি সেন্টার নাগরিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষায় ফারাক আছে। কিন্তু শিল্পাঞ্চল থেকে ‘আধুনিক’ দুর্গাপুর, প্রায় সর্বত্র একচ্ছত্র জিতেছে তৃণমূল। দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে এখনও সিটু-র যথেষ্ট প্রভাব। কংগ্রেস প্রভাবিত আইএনটিইউসি শক্তি হারালেও মুছে যায়নি। কিন্তু ৩ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ডিএসপি টাউনশিপে শুধুই ফুটেছে ঘাসফুল। শুধু ডিপিএল এলাকার তিনটি ওয়ার্ড সিপিএম ধরে রাখতে পেরেছে। কিন্তু রাতুরিয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুকে তারা জিততে পায়নি।
শুধু শিল্পাঞ্চল নয়। পুরনো বাজার এলাকা বেনাচিতির ১৪ থেকে ২১ নম্বর ওয়ার্ডেও বামেদের উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। শপিং মল-মাল্টিপ্লেক্সে ঝকঝকে সিটি সেন্টারে জিতেছেন তৃণমূলের মেয়র পদপ্রার্থী তথা বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়। শহরের প্রাণকেন্দ্র বিধাননগরেও তাঁদেরই ধ্বজা উড়ছে। তিন বারের মেয়র রথীন রায়কে সরিয়ে সিপিএম যাঁকে যুদ্ধের সেনাপতি করেছিল, সেই বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী পরাজিত। কংগ্রেসের প্রধান নেতা বংশীবদন কর্মকার শুধু হেরেছেন তা-ই নয়, হাজারেরও কম ভোট পেয়ে দৌড় শেষ করেছেন তৃতীয় স্থানে। গোটা শহরে কংগ্রেসের শেষ সলতে শুধু তাঁর স্ত্রী শাশ্বতী কর্মকার।
ছ’টি পুরসভার মধ্যে এক মাত্র দুর্গাপুরেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ঘোষণা করেছিল তৃণমূল। আসনরফা না হওয়ায় তা ভেস্তে যায়। তাতে কংগ্রেসের যা ক্ষতি হওয়ার হয়েছে। তৃণমূল বলছে, একলা চলে তারা কী করতে পারে তা প্রমাণ হয়ে গেল। ‘ভাবী মেয়র’ অপূর্ববাবুর কথায়, “জোট ভেস্তে যাওয়ার পরে পিছন ফিরে তাকাইনি। তারই ফল পেয়েছি।” কিন্তু ঘটনা হল, অন্তত সাতটি আসনে দুই শরিকের ভোট কাটাকাটির কারণে জিতেছে সিপিএম। গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের ওয়ার্ডভিত্তিক ফলাফলেই দেখা গিয়েছিল, মাত্র ১০টি ওয়ার্ডে এগিয়ে আছে বামফ্রন্ট। ভোট কাটাকাটির সুবাদে সেই তুলনায় একটি আসন তারা বেশি পেয়েছে বটে, কিন্তু প্রাপ্ত ভোট প্রায় আড়াই শতাংশ কমে ৪০% হয়েছে। তৃণমূল পেয়েছে ৪৫ শতাংশ ভোট, কংগ্রেস মোটে ৯ শতাংশ।
সিপিএম গোড়া থেকেই সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছিল। হেরেও তারা বলছে, ভয়ে তাদের বহু ভোটার বুথমুখো হননি।
সেটাই যে বিপর্যয়ের কারণ নয়, তা অবশ্য বাম নেতারা ভালই জানেন। |