কিছুকাল আগে পর্যন্তও তার ইচ্ছে ছিল সংস্কৃত-চর্চা। ভাললাগা ছিল বাংলা নিয়েও।
উচ্চ মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া সেই সৌরভ দাস যদিও এখন ডাক্তারি পড়তে চায়। বিটি রোড গভর্নমেন্ট স্পনসরড উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র সৌরভ এ বারের উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৭৯ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকার শীর্ষে। রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স-এ মেডিক্যালে দশম স্থান তার।
প্রথম হবে, এমনটা না ভাবলেও ভাল ফলের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল সৌরভ। সোমবার সকালে টিভিতে ছেলের স্কুলের নাম শুনে উত্তর কলকাতার কাশীনাথ দত্ত রোডের বাসিন্দা বাদলচন্দ্র দাস ও শুভ্রা দাস আঁচ পেয়েছিলেন, সৌরভই প্রথম হয়েছে।
দশম শ্রেণি পর্যন্ত বরাহনগর রামকৃষ্ণ মিশনে পড়েছে সৌরভ। মাধ্যমিকে পঞ্চদশ স্থান অধিকার করেছিল সে। উচ্চ মাধ্যমিকে প্রতিটি বিষয়েই গৃহশিক্ষক ছিল তার। ডাক্তারি পড়তে চায় বলে জীববিদ্যায় দু’জন। সৌরভ বলে, “উচ্চ মাধ্যমিক এবং মেডিক্যালের কথা মাথায় রেখেই পড়াশোনা করেছি।” টিউশন বাদ দিয়ে দিনের বাকিটা পড়ত সৌরভ। প্র্যাকটিক্যাল ছাড়া স্কুলে তেমন একটা যায়নি সে।
অবসর কাটানো বলতে বেহালা বাজানো। মায়ের ইচ্ছেতেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে বেহালা শেখা শুরু। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় সংস্কৃত আর বাংলা চর্চার ইচ্ছে জাগে সৌরভের। মায়ের কথায়, “ভাষাচর্চার ইচ্ছে থাকলেও ডাক্তারিই ওর লক্ষ্য। বাংলা ভাল লাগে বলে বন্ধুরা ইংরেজিতে পড়াশোনা করলেও উত্তর লিখেছে বাংলাতেই।” |
|
|
|
|
সৌরভ দাস |
কৌস্তভ সাহা |
সৌম্য ভট্টাচার্য |
সুস্মিতা হালদার |
|
বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল স্কুলের কৌস্তভ সাহা অবশ্য ৪৫০-এর বেশি নম্বর আশা করেনি। ৪৭৭ পেয়ে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করার পরে সে বলে, “র্যাঙ্ক নিয়ে আমার মাথাব্যথা ছিল না। শুধু চেয়েছিলাম উচ্চ মাধ্যমিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় ভাল ফল করতে।”
বর্ধমানে বাবুরবাগের ইন্দ্রপ্রস্থে বাড়ি কৌস্তভের। মাধ্যমিকে চতুর্থ স্থান পেয়েছিল সে। বাবা স্বপন সাহা অন্ডাল হাইস্কুলের শিক্ষক। মা সাধনাদেবী ব্যাঙ্ককর্মী। কৌস্তভ এখন চিকেনপক্সে আক্রান্ত। দিনে ৭-৮ ঘণ্টা পড়েই সাফল্য এসেছে বলে জানায় সে। প্রতি বিষয়ে এক জন করে গৃহশিক্ষক ছিলেন। কৌস্তভ জানায়, ইতিমধ্যে কেরলের তিরুঅনন্তপুরমে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ সেন্টারে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স নিয়ে পড়ার সুযোগ এসেছে। তবে সেখানে যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে এই কিশোর। খড়্গপুর আইআইটি-তে ইলেকট্রনিক্স
ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার ইচ্ছা রয়েছে তার। তার বাবা-মা বলেন, “আমরা ছেলের পড়াশোনা নিয়ে বিশেষ নাক গলাতাম না। এর পরে ও কী পড়বে, তা-ও নিজেই ঠিক করবে।”
দু’বছর আগে মাধ্যমিকের ফল খুশি করতে পারেনি সৌম্য ভট্টাচার্যকে। সেই আক্ষেপ সুদে-আসলে মিটিয়ে দিল উচ্চ মাধ্যমিক। ৪৭৫ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে বাঁশবেড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রটি। বাবা নিখিলেশ ভট্টাচার্য এই স্কুলেই পড়তেন। তিনি পেশায় অঙ্কের শিক্ষক। সৌম্য বলে, “পড়ার জন্য ধরাবাঁধা কোনও সময় ছিল না। তবে, সবসময় মাথায় ঘুরত যে, এমন নম্বর পেতে হবে, যাতে সকলের নজর কাড়তে পারি।” পদার্থবিদ্যা এবং অঙ্ক সৌম্যর প্রিয় বিষয়। ভবিষ্যতে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স নিয়ে গবেষণা করতে চায়। পড়াশোনার ফাঁকে দাবা খেলেছে সৌম্য। ক্রিকেট খেলা দেখেছে। ফুরসত পেলে রং-তুলি হাতে বসে পড়েছে। নিখিলেশবাবু বলেন, “ছেলে যে ভাল ফল করবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম। তবে, রাজ্যে তৃতীয় হবে, এতটা ভাবিনি।”
এ বারের উচ্চ মাধ্যমিকে মেয়েদের সেরা ঝাড়গ্রামের সুস্মিতা হালদার অবশ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষাই দেয়নি। ঠাকুরদা আইনজীবী ফণীন্দ্রনাথ হালদারের মতো আইনজীবী হতে চায় সে। তার কথায়, “ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ায় আমার ঝোঁক নেই। আইনজীবী হয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।”
ঝাড়গ্রাম শহরের শ্রীরামকৃষ্ণ সারদাপীঠ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী সুস্মিতার প্রাপ্ত নম্বর ৪৭৪। সুস্মিতার জবাব, “সত্যি বলতে এতটা ভাল ফল হবে আশা করিনি। জানতাম ৯০ শতাংশের উপর নম্বর পাব। কিন্তু ৪৭৪ পাব ভাবিনি।” ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবায় বাড়ি সুস্মিতাদের। বাবা নারায়ণ হালদার পুরুলিয়া জেলা হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। মা অনুপমাদেবী সংসারের পাশাপাশি একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির দায়িত্ব সামলান। ঘড়ি ধরে কখনও পড়েনি সুস্মিতা। সে বলে, “এই সময়টায় পড়তেই হবে, এমন নিয়ম ছিল না। তবে পড়ার সময় পড়েছি।” |
ছবি: সুমন বল্লভ, উদিত সিংহ, তাপস ঘোষ এবং দেবরাজ ঘোষ |