স্টিয়ারিং চালকের হাতে। অথচ দুর্ঘটনা ঘটলে জরিমানা দিতে হয় বাস-মালিককে।
দীর্ঘদিনের এই ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে চলেছেন রাজ্যের নতুন সরকারের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় বাসের চালক-কন্ডাক্টরের উপরেই পুরোপুরি চাপবে বলে সোমবার জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
বিভিন্ন বাস-মালিক সমিতির কর্তা এবং পুলিশ-প্রশাসনের আমলাদের সঙ্গে এ দিন বৈঠকে বসেন মদনবাবু। পরে তিনি জানান, বাসের বেপরোয়া দৌড় নিয়ন্ত্রণ করে দুর্ঘটনা কমাতেই এই ব্যবস্থা। মন্ত্রী বলেন, “এই ধরনের পদক্ষেপ না-করলে বাসে বাসে রেষারেষি বা বেপরোয়া বাস চালানো বন্ধ করা যাবে না। রাস্তায় কী হচ্ছে, বাস-মালিকেরা তার কিছুই জানেন না। অথচ বেপরোয়া বাসচালকদের জন্য তাঁদেরই জরিমানা গুনতে হয়। এটা চলতে পারে না।”
রাস্তায় দুর্ঘটনার জন্য জরিমানা কেন তাঁদেরই গুনতে হবে, কয়েক বছর ধরে সরকারের কাছে এই প্রশ্ন করে আসছেন বাস-মালিকেরা। মহাকরণ সূত্রের খবর, পরিবহণ শ্রমিক সংগঠনগুলি এত দিন সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর ছত্রচ্ছায়ায় ছিল। পূর্বতন বাম সরকার তাই দুর্ঘটনার দায় শ্রমিকদের উপরে চাপাতে চায়নি। পরিবহণমন্ত্রী এ দিন বলেন, “৯ জুন লোক-আদালত বসছে। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের বলেছি, এই ধরনের আদালতে যেন যান-আইন ভঙ্গের বিষয়গুলির দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হয়। করের বকেয়া মামলা মেটাতে পুরসভা যেমন ‘ওয়েভার’ প্রকল্প চালু করেছে, সেই ভাবেই পথ-দুর্ঘটনার বকেয়া মামলাগুলি মিটিয়ে ফেলা যায় কি না, সেই ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা চলছে।” বাসের বিভিন্ন সমস্যা দেখতে পুলিশ-প্রশাসন, বাস-মালিকদের নিয়ে একটি কমিটিও গড়া হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।
বাস-মালিক সংগঠনগুলির বক্তব্য কী? পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের সাধারণ সম্পাদক সাধন দাস বলেন, “চালকেরা বাস চালান। আইন ভাঙলে চালকেরই শাস্তি পাওয়া উচিত। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও কমবে। মন্ত্রীকে আমরা এ কথাই জানিয়েছি।” বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের ভাইস প্রেসিডেন্ট দীপক সরকারের অভিযোগ, কোনও কোনও চালকের কাছে ৩-৪টি লাইসেন্স পাওয়া যায়। ডাক মারফত চালকদের বাড়িতে লাইসেন্স পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হলে এ সমস্যা মিটবে। মন্ত্রী তাঁদের বক্তব্য গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন বলে জানান বাস-মালিক সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা।
পরিবহণ শ্রমিক সংগঠনের সুর অবশ্য আলাদা। ওয়েস্ট বেঙ্গল রোড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সম্পাদক সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক বা তাঁর পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হয় মালিককেই। সেই যুক্তিতে গাড়ি-দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়িত্ব মালিকের উপরেই বর্তানো উচিত। গরিব শ্রমিক ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন কোথা থেকে?”
বাসের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টিও ওঠে এ দিনের বৈঠকে। মালিক সংগঠনগুলির নেতারা জানান, মন্ত্রীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এখনই ভাড়া না-বাড়ালে বাস চালানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। আর্থিক সঙ্কটে ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ বাস কমে গিয়েছে। মন্ত্রী তাঁদের প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। এ মাসের শেষে সরকারের সঙ্গে ফের তাঁদের বৈঠক হতে পারে। সাধনবাবু বলেন, “নতুন সরকার বাস-মালিকদের সমস্যা মেটাতে উৎসাহী। পরিবহণমন্ত্রীকে জানিয়েছি, ভাড়া না-বাড়ালে ক্ষতি স্বীকার করে আর বাস চালানো যাবে না।” তাঁরা চান বাসে ন্যূনতম ভাড়া পাঁচ টাকা করা হোক। মন্ত্রীকে তা জানিয়েছেন তাঁরা। পরের পর্যায়ে ভাড়া পুনর্বিন্যাসের আর্জিও জানাতে পারে সংগঠনগুলি। |