৬ পুরসভার দখল কার হাতে উঠবে তা জানা যাবে আজ দুপুরের মধ্যেই। তবে পুরভোটের ফল তাঁদের অনুকূলে আসবে বলেই তৃণমূল নেতৃত্ব আশাবাদী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা এবং তাঁর সরকারের কাজকর্মের কিছু সমালোচনা হলেও তা সংবাদমাধ্যমেই ‘সীমিত’ বলে তৃণমূল নেতৃত্বের ধারণা। তাঁদের মতে, আম জনতার বড় অংশ এখনও মমতার উপরেই ‘ভরসা’ করছে। পুরভোটে তৃণমূল ‘প্রত্যাশিত’ ফল করতে পারলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতিতে তারা আরও ‘আত্মবিশ্বাসী’ হতে পারবে। দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “পুরভোটে সন্ত্রাস নিয়ে বিরোধী এবং সরকারের শরিক দলের একাংশ অনেক অভিযোগ করেছেন। কিন্তু মানুষ কী বলছেন? বুথে গিয়ে তাঁরা ভোট দিতে পারেননি, এমন অভিযোগ কী তাঁরা করেছেন? অনেক লড়াই করে বাংলার মানুষ এ রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছেন। কী ভাবে সেই পরিবেশ বজায় রাখতে হয়, তাঁরা জানেন!” উল্টো দিকে, প্রধান বিরোধী দল সিপিএম তথা বাম শিবির বিশেষ ‘আশাবাদী’ নয়। মোট ৬টির মধ্যে তিনটি পুরসভার বোর্ড (ধূপগুড়ি, হলদিয়া ও দুর্গাপুর) ছিল বামেদের দখলে। তার মধ্যে উত্তরবঙ্গের ধূপগুড়ি পুরসভায় দুর্গ রক্ষা করতে পারলে তারা খুশি হবে। হলদিয়া এবং দুর্গাপুরকে তৃণমূল ‘বিরোধীশূন্য’ করে দিতে চাইলেও বাস্তবে তা হবে না বলেই সিপিএম নেতৃত্বের ধারণা। তবে পুরভোটে বিশেষ আশাবাদী না-হতে পারার জন্য সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য দায়ী করছেন প্রধান শাসক দলের ‘সন্ত্রাস’কে। বিশেষত, হলদিয়া ও দুর্গাপুরে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “বহু জায়গাতেই বাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়িয়েছে। অনেক জায়গায় দুপুর ১২টার পরে তৃণমূল তাদের মতো ভোট করে নিয়েছে!”
ফলপ্রকাশের প্রাক্কালে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা অবশ্য স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে পরিষ্কারই বলে দিয়েছেন, “এক পক্ষের দিকেই ফল হবে! যাদের দিকে হাওয়া চলছে, সেই রকমই চলবে।” ধূপগুড়িতেও কি বামেদের কোনও আশা নেই? কলকাতা প্রেস ক্লাবে সোমবার একটি অনুষ্ঠানে প্রশ্নের জবাবে রেজ্জাক বলেন, “ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, শিলিগুড়ি সব গুড়িই এক রকম!” বামেদের প্রতি মানুষের আস্থা কি এখনও ফেরেনি? রেজ্জাকের জবাব, “বৌ চলে গেলেই এক বছরের আগে ফেরানো যায় না! এ তো মানুষের ভোট!” দুর্গাপুরের মতো ‘শক্ত ঘাঁটি’ ভেঙে পড়ছে কেন? রেজ্জাকের বক্তব্য, “শক্ত ঘাঁটি হলেও লোহা দিয়ে তো তৈরি নয়! লোহার দুর্গেও ফুটো থাকে!”
এ বারের পুরভোটে ৬টির কোনওটিতেই তৃণমূল-কংগ্রেসের জোট হয়নি। ফলে, একক ভাবে কংগ্রেস কতটা দাগ কাটতে পারে, বা তাদের সঙ্গে তৃণমূলের ভোট কাটাকাটির ফলে বামেদের সুবিধা হয়ে যায় কি না তার দিকেও নজর আছে রাজনৈতিক শিবিরের। দু’বছর আগে কলকাতা পুরভোটে তৃণমূলের সঙ্গে জোট ভেঙে যাওয়ায় একক ভাবে লড়েছিল কংগ্রেস এবং তাদের ফল হয়েছিল শোচনীয়। এই পুরভোট তাই কংগ্রেসেরও ‘পরীক্ষা’।
ভোটগণনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে প্রশাসনিক তৎপরতা চলছে। ধূপগুড়ির ভোটগণনা ও তার পরবর্তী সময়ে আইন শৃঙ্খলা নিয়ে পুলিশ প্রশাসন-সহ সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ দিন বিডিও অফিসে বৈঠক করেন জলপাইগুড়ির মহকুমাশাসক সাগর চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “৭টা ৫৫ মিনিটে স্ট্রংরুম খোলা হবে। ১৪টা টেবিলে গণনার কাজ চলবে। আশা করি দুপুরের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করা সম্ভব হবে।” ফলাফল ঘোষণার পরে এক সপ্তাহ পর্যন্ত বিজয় মিছিলের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। সাত দিন পরে পুলিশের অনুমতি নিয়ে বিজয় মিছিল করা যাবে বলে এ দিন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার সুগত সেন জানান, গণনা-কেন্দ্রে পাহারায় থাকবে একশো পুলিশ। গণনার সময়ে যাতে শহরে কোনও গোলমাল না-হয়, সেই জন্য আরও দু’শো পুলিশ বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোতায়েন করা হবে।
পূর্ব মেদিনীপুরে হলদিয়া ও পাঁশকুড়ার ভোটগণনা নিয়ে প্রশাসন ‘সতর্ক’। জেলা শাসক পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকীর বক্তব্য, “পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গণনা শুরুর দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল জানা যাবে।” দুর্গাপুর, কুপার্স ক্যাম্প ও নলহাটির ভোটগণনার জন্য নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। |