কলকাতাতেও লু, গ্রীষ্মের দাপটে দক্ষিণবঙ্গে মৃত ১৭
ক্ষিণবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোয় রবিবার থেকেই তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতি শুরু হয়েছিল। মধ্যপ্রদেশ-ছত্তীসগড়-ওড়িশা-ঝাড়খণ্ড থেকে বয়ে আসা তপ্ত, শুষ্ক বাতাস ক্রমশ চেপে বসছিল সেখানকার পরিমণ্ডলে। সোমবার ওই সব অঞ্চলে ভয়াল চেহারা নেওয়ার পাশাপাশি তা কলকাতাতেও পৌঁছে গেল। এবং তার প্রকোপে সারা রাজ্যে এ দিন প্রাণ গেল মোট ১৭ জনের।
শুকনো, গরম হাওয়ার দাপটে এ দিন কলকাতার তাপমাত্রা দাঁড়িয়েছে ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজারহাট-দমদম-সল্টলেকের মতো নগরের প্রান্ত-এলাকায় অবশ্য সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছুঁয়েছে, ফলে বইতে শুরু করেছে তাপপ্রবাহ। বাইরে বেরোলে চামড়ায় ছ্যাঁকা লেগেছে। রীতিমতো লু বয়েছে খাস কলকাতাতেও। ঝাড়খণ্ড লাগোয়া পশ্চিমাঞ্চলের অবস্থা সহজেই অনুমেয়।
গরমে সুনসান বি বা দী বাগ। সোমবার রাজীব বসুর তোলা ছবি।
আর ঝলসে দেওয়া এই শুকনো বাতাসের আঁচই অনেক ক্ষেত্রে সহনসীমার বাইরে চলে গিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে মারণ চেহারাও নিয়েছে। বাইরের তাপ শরীরে ঢুকে পড়ছে, পাশাপাশি শরীর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে অতিরিক্ত পরিমাণে জল ও প্রয়োজনীয় মৌল। এতে বহু লোক অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এ দিনই কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় গরমজনিত কারণে মোট ১৭ জন মারা দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে ‘হিট স্ট্রোকে’ মৃত্যু হয়েছে কয়েক জনের। কয়েক জন আগে থেকে ভুগছিলেন, অস্বাভাবিক গরম তাঁদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। গরমে অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে বেশ কিছু মানুষ চিকিৎসাধীন। বিপর্যয় এড়াতে পোশাক ও খাদ্যাভ্যাস বদলানোর পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তারেরা।
এ দিন সকালটা প্যাচপেচে গরম দিয়ে শুরু হলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে গনগনে তাপ গ্রাস করছে কলকাতাকে। তাতেই তাপমাত্রা রবিবারের চেয়ে এক লাফে প্রায় তিন ডিগ্রি বেড়েছে। সেই মারমুখী তাপমাত্রার দৌলতে এ দিন কলকাতার অস্বস্তি-সূচকও ১৭ মে’র ৬৯ ডিগ্রির বেড়া টপকে পৌঁছে গিয়েছে ৭০ ডিগ্রিতে! যত দিন ইস্তক অস্বস্তি-সূচক পরিমাপ হচ্ছে (গত সাত বছর), তার মধ্যে মহানগরে আবহাওয়াজনিত অস্বস্তির মাত্রা এত বেশি কখনও হয়েছে কি না, সে তথ্য আলিপুরের দস্তাবেজে নেই। আজ, মঙ্গলবার তাপমাত্রা আরও বাড়লে এবং পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ এক থাকলে সূচক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেই হিসেব কষতে আপাতত আলিপুরের আবহবিদেরা ব্যস্ত।
তাপমাত্রা কোথায় কত
এলাকা সর্বোচ্চ*
তাপমাত্রা
কত**
বেশি
আলিপুর ৪০.২ +৪
দমদম ৪১.১ +৫
শ্রীনিকেতন ৪৬.০ +৯
পুরুলিয়া ৪৫.৭ +৭
বাঁকুড়া ৪৬.০ +৭
পানাগড় ৪৬.৫ +৭
মালদহ ৪২.০ +৫
খড়্গপুর ৪৪.০ +৫
* ডিগ্রি সেলসিয়াস **স্বাভাবিকের থেকে
তবে না-বাড়লেও আজ কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে তাপমাত্রা অন্তত কমবে না বলে তাঁদের অনুমান। আবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আর এক ডিগ্রি বাড়লে খাস কলকাতাতেও তাপপ্রবাহ বইতে শুরু করবে। দক্ষিণবঙ্গের সাত জেলা এ দিন যার শিকার হয়েছে। এ দিন বীরভূমের শ্রীনিকেতনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৬ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। বাঁকুড়া-পুরুলিয়ায় তা ৪৬ ডিগ্রির আশপাশে ঘোরাফেরা করেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠে গিয়েছে ৪৪ ডিগ্রিতে। বর্ধমান শিল্পাঞ্চলের পানাগড়ে ৪৫ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। এই সব জেলার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের মালদহও এ দিন পড়েছে তাপপ্রবাহের কবলে। হিমালয় সংলগ্ন অঞ্চলে অবশ্য বৃষ্টি হচ্ছে। আরও বৃষ্টির পূর্বাভাসও আছে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে?
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, চড়চড়িয়ে তাপমাত্রাবৃদ্ধির জন্য স্থানীয় ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ সৃষ্টির সুবাদে দক্ষিণবঙ্গে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তবে ভারী বৃষ্টি পেতে ভরসা সেই বর্ষা। মৌসুমি বায়ু নিজের ছন্দে ফিরে এলে প্রাক-বর্ষার বৃষ্টি নামতে পারে। বর্ষা কবে ছন্দে ফিরবে?
এ প্রসঙ্গে কিছুটা স্বস্তির বার্তা দিয়েছে দিল্লির মৌসম ভবন। তাদের তথ্য: আট দিন এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে অবশেষে বর্ষা কিছুটা নড়েছে। মৌসুমি বায়ুর উত্তর প্রান্তটি মায়ানমারের উত্তরে তার পুরনো অবস্থানে স্থবির থাকলেও দক্ষিণ প্রান্তটি এ দিন শ্রীলঙ্কার অনেকটা ভিতরে সরে এসে আরব সাগরের দিকে এগিয়ে গিয়েছে। পথে বাধা না-পেলে আজ, মঙ্গলবার অথবা কাল বুধবারের মধ্যে তা কেরলে ঢুকে পড়বে। এবং সব ঠিকঠাক থাকলে কেরল-প্রবেশের আট দিনের মাথায় বর্ষার দক্ষিণবঙ্গে ঢুকে পড়া উচিত। কেরলে ইতিমধ্যে প্রাক-বর্ষার বৃষ্টিও শুরু হয়ে গিয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.