|
|
|
|
শোলার মালায় বন্ধুতার উৎসব চন্দ্রকোনার গ্রামে |
সুমন ঘোষ • চন্দ্রকোনা |
শোলার মালা পরালেই নতুন বন্ধু। সাক্ষী মা মনসা।
এ ভাবেই হাজার হাজার মানুষ বন্ধুতার সম্পর্কে বাঁধা পড়লেন। দু’বছরের শিশু থেকে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা নতুন বন্ধুর খোঁজে ঘুরে বেড়ালেন মিষ্টির প্যাকেট ও শোলার মালা হাতে। মনের মতো বন্ধুর সন্ধান পেতেই মনসার সামনে গিয়ে হল মালা বদল আর মিষ্টিমুখ। যিনি মনমতো বন্ধু পেলেন না, তিনিও নিরাশ হননি। মা মনসাকেই শোলার মালা পরিয়ে বন্ধু হিসেবে বরণ করে নিয়েছেন।
রবিবার এমনই এক বন্ধুতার উৎসব হয়ে গেল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা থানা এলাকার পরমানন্দপুর গ্রামে। উৎসবের নাম ‘সইলা’। সই অর্থাৎ বন্ধু থেকেই শব্দটির জন্ম। ‘সইলা’ নিয়ে নানা জনশ্রুতিও রয়েছে। গ্রামের রঙ্কিনী দেবীর মন্দির রয়েছে। সেখানেই রয়েছে শিব ও মনসার মূর্তি। কথিত আছে, পুরোহিতকে স্বপ্ন দিয়ে নিজের অস্তিত্বের কথা জানান দেবী মনসা। আর তারপরই গ্রামে হয় ‘সইলা’। |
|
—নিজস্ব চিত্র। |
বেশ কয়েক বছর পর পর জ্যৈষ্ঠ মাসে কালীপুজোর পরদিন এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। রীতিমতো মেলা বসে যায়। আশপাশের ২০-২৫টি গ্রাম তো বটেই দূরদূরান্ত থেকেও বহু মানুষ আসেন। উদ্যাপন করেন বন্ধুত্বের দামি সম্পর্ক।
অরকুট, ফেসবুক, ট্যুইটারের মতো নানা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের দৌলতে বন্ধু খোঁজা এখন অনেক সহজ। তবে তার আঁচ পড়েনি বন্ধুত্বের এই উৎসবে। বয়স্কদের পাশাপাশি চন্দ্রকোনার গ্রামে ভিড় জমিয়েছিল কলেজ পড়ুয়ারাও। কেন এত জনপ্রিয় এই উৎসব? মেলা কমিটির উদ্যোক্তা রাজকুমার ঘোষ, নিখিল ঘোষেরা বলেন, “এটা একটা ঐতিহ্য। গ্রামীণ সংস্কৃতি।” বিকেল চারটে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মানুষ এই উৎসব ঘিরে এমন ভিড় হয়, যে হাঁটাচলা দায় হয়ে ওঠে। বৃদ্ধা কল্পনা ঘোষ, স্কুলপড়ুয়া চামেলি পাল, স্বপন কারকেরা বন্ধু পাতানোর উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। এই বন্ধুরা হারিয়ে যাবে না তো? ষাটোর্ধ্ব পূর্ণিমা ঘোষের জবাব, “না। পরস্পরের বাড়িতে যাতায়াত, মনের কথা বলা চলবেই। শোলার মালার বন্ধু এ ভাবেই প্রাণের বন্ধু হয়ে উঠবে।” |
|
|
|
|
|