রেল-মানচিত্রে আরামবাগ, অনুষ্ঠানে ত্রুটিতে ক্ষুব্ধ মমতা
রামবাগে রেল সংযোগের ‘ঐতিহাসিক’ দিনে রেলের ‘অব্যবস্থা’য় ‘ক্ষুব্ধ’ হয়ে প্রকাশ্যে জনতার কাছে ক্ষমা চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্বাধীনতার পর এই প্রথম রেল ঢুকল আরামবাগে। আশ্চর্য নয় যে, রাস্তায় রাস্তায় হোর্ডিং পড়েছিল, ‘ভারতের প্রথম রেলযাত্রী রাজা রামমোহন রায়ের ভিটে আরামবাগে রেল চালুর ঐতিহাসিক দিন’ বা ‘১৪৮ বছরের স্বপ্নপূরণের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ’। সেই মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে মানুষও এসেছিলেন ঝেঁটিয়ে।
কিন্তু ‘ঐতিহাসিক’ অনুষ্ঠানের তাল সামান্য হলেও কেটে গেল ‘ব্যবস্থাপনা’য় ত্রুটির জন্য। তারকেশ্বর-আরামবাগ ট্রেনের উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখতে হাজির জনতার জন্য ‘ছাউনি’র ব্যবস্থা না-দেখে বিরক্ত হলেন মমতা। গনগনে রোদে জনতার দাঁড়াতে যাতে কষ্ট না-হয়, সে জন্য ছাউনির ব্যবস্থা রাখতে বলেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু দুপুরের অসহনীয় এবং বেনজির গরমে কাতারে কাতারে মানুষকে (কার্যত গোটা আরামবাগ মহকুমাই হাজির) রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রেলমন্ত্রী মুকুল রায় ও হাওড়ার ডিআরএম পার্থসারথি মণ্ডলের সামনেই রেলকে দুষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রেল এই অনুষ্ঠানটা একটু অগোছালো করে ফেলেছে। রেল আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে এমন হত না। এত মানুষ এসেছেন। পদপিষ্ট হওয়ার মতো অবস্থা! এই রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে আপনাদের কষ্ট হচ্ছে।” তারপরেই মমতা বলেন, “রেলের উচিত ছিল এই গরমে এত মানুষের দাঁড়ানোর জন্য ছাউনির ব্যবস্থা করা। রেল কিছুই করেনি। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।” হাওড়ার ডিআরএম-কে মঞ্চেই মমতা বলেন, “ডিএম, এসপি তো বলেছিলেন, সভাটা বাঁ-দিকে ঘুরিয়ে করতে। তা হলে এই অসুবিধাটা হত না। শোনেননি কেন?”
অনুষ্ঠান-মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আরামবাগে সোমবার মোহন দাসের তোলা ছবি।
হুগলির আরামবাগ মহকুমা এমনই এক এলাকা, যা দীর্ঘদিন সিপিএমের ‘মুক্তাঞ্চল’ ছিল। তৃণমূলের নেতারা সেখানে ঢুকতে পারতেন না। এমনকী, মমতার সভায়ও জনতা আসত ভয়ে ভয়ে। কিন্তু গত বিধানসভা ভোটে তা আমূল বদলে গিয়েছে। আরামবাগ, পুরশুড়া, খানাকুলের মতো আসন জিতেছে তৃণমূল! যা ‘অভাবনীয়’। সেই জনতার কাছেও মমতা ‘কৃতজ্ঞ’। তাঁদের হয়রানি মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ক্ষুব্ধ’ করেছে।
ইদানীং মুখ্যমন্ত্রীর যে কোনও প্রকাশ্য সভায় জনতার জন্য ছাউনির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু এ দিন তার ব্যত্যয় ঘটনায় ‘ক্ষুণ্ণ’ মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবার্তা, “এর পর থেকে আমাদের নিজেদের অনুষ্ঠান নিজেরাই আয়োজন করব।” তারকেশ্বর থেকে আরামবাগ ট্রেন চালু হওয়ার ‘স্বপ্নপূরণ’-এর দিনে আগত জনতার জন্য অবশ্য কয়েক হাজার জলের পাউচের ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু বিপুল ভিড়ের চাপে তাও নিমেষে ফুরিয়ে যায়। বসন্তপুর মৌজায় আরামবাগ স্টেশন সংলগ্ন মাঠে পুলিশের হিসেবে অন্তত এক লক্ষ (তৃণমূলের দাবি, প্রায় দু’লক্ষ) মানুষ ছিলেন। বাইরে আরও ৫০ হাজার। বস্তুত, চড়া রোদ মাথায় নিয়েও বাড়ির ছাদে, গাছে, দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের মাথায়, স্টেশনের নাম-ফলকের উপরে সর্বত্রই শুধু উৎসাহী জনতার ঢল। ভিড়ে ঠেলাঠেলিতে একসময় উত্তেজনা শুরু হলে মঞ্চ থেকে নিজে ভিড় সামলান মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাতেও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
রেলের ‘অব্যবস্থা’ স্বীকার করে রেলমন্ত্রী মুকুলও জনতার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, “ছাউনির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু দেখছি হয়নি। আপনাদের অসুবিধার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।” ডিআরএম অবশ্য দাবি করেছেন, “রবিবার শেষ মুহূর্তে জেলা প্রশাসন ছাউনির কথা বললেও ছুটির দিনে ডেকরেটর পাওয়া যায়নি। অব্যবস্থার জন্য আমি ক্ষমা চেয়েছি।”
আরামবাগকে ট্রেন ‘উপহার’ দেওয়ার কাজ মমতা শুরু করেছিলেন ২০০০ সালে এনডিএ-তে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন। তা জানিয়ে মমতা বলেন, “তারকেশ্বর থেকে বিষ্ণুপুর রেললাইন নেই। ২০০০ সালে আমি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই প্রকল্প অনুমোদন করি। আমি মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর আট-ন’ বছর কোনও কাজ হয়নি। ২০০৯-এ আবার নতুন করে কাজ শুরু করি। আমাদের সরকার আসার পর মুকুলকে বলি দ্রুত এই লাইনের কাজ শেষ করতে। এখন আপনাদের স্বপ্ন পূরণ হল।”
তবে স্বপ্ন ছোঁয়ার দিনে রেলের অব্যবস্থায় ‘ক্ষুণ্ণ’ মমতা নিজে উদ্বোধন না-করে মুকুলকে দিয়েই উদ্বোধন করান। আরামবাগ-তারকেশ্বরের (২৪.৫ কিলোমিটার) মধ্যে ট্রেন চলাচলের সূচনায় সবুজ পতাকাও হাতে নেননি তিনি। তবে রেলকে অনুরোধ করেছেন, “দিনে চারবার যেন এই লাইনে এক জোড়া করে ট্রেন চালানো হয়।”
তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্পে যুক্ত হল আরামবাগ। তবে বিদ্যুদয়নের কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় এখনই এক ট্রেনে হাওড়া-আরামবাগ জুড়ছে না। হাওড়া-তারকেশ্বরের মধ্যে ইএমইউ ট্রেন চলে। তারকেশ্বর-আরামবাগের মধ্যে বিদ্যুদয়ন অসম্পূর্ণ থাকায় ওই পথে ডিজেল ইঞ্জিন চালিত ট্রেন চলবে বলে পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। অর্থাৎ, হাওড়া-আরামবাগের মধ্যে যাতায়াত করতে হলে তারকেশ্বরে ট্রেন বদলাতে হবে। অবশ্য অগস্টের মধ্যে বিদ্যুদয়নের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পূর্ব রেলের কর্তারা।
তবে তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর প্রকল্পে গোঘাটের কামারপুকুর লাগোয়া এলাকা ও বাঁকুড়ার জয়রামবাটি ও সংলগ্ন এলাকায় জমি অধিগ্রহণের সমস্যা চিন্তায় রেখেছে তৃণমূলকে। কামারপুকুর সংলগ্ন গোঘাট-২ ব্লকের অমরপুর মৌজায় ইতিমধ্যে জমির ‘ন্যায্য’ দামের দাবিতে তৃণমূলের নেতৃত্বেই গড়ে উঠেছে ‘রেল চালাও-গ্রাম বাঁচাও কমিটি’। বাঁকুড়ার গোপীনাথপুর ও জয়রামবাটি এলাকার কিছু জায়গায় বাসিন্দারা জমির বদলে পরিবারের এক জনের রেলে চাকরির দাবি তুলছেন। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন রেলমন্ত্রী মুকুলকে ওই সমস্যা দ্রুত মিটিয়ে কাজ শুরুর অনুরোধ করার পাশাপাশি মঞ্চে উপবিষ্ট কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন এবং জয়রামবাটির সন্ন্যাসীদের সহযোগিতাও চেয়েছেন।
আরামবাগ-তারকেশ্বরের মধ্যে রেলপথে পড়ছে তিনটি স্টেশন তালপুর, তকিপুর এবং মায়াপুর। মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা মেট্রোর আদলে স্টেশনগুলির নামকরণ করে বলেন, “কামারপুকুর স্টেশন মন্দিরের আদলে হবে। আরামবাগ স্টেশন প্রফুল্লচন্দ্র সেনের নামে, মায়াপুর স্টেশন রাজা রামমোহন রায়ের নামে, তালপুর স্টেশন কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং তকিপুর মহম্মদ মহসীনের নামে হবে।” গরমের জন্য বক্তব্য দীর্ঘ করেননি মমতা। তবে তার মধ্যেই সিঙ্গুরে কৃষি মহাবিদ্যালয়, চুঁচুড়ায় আইটি হাব, আরামবাগে পলিটেকনিক কলেজ-সহ হুগলি জেলার জন্য একগুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা করেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.