|
|
|
|
বিরল সৌজন্য, বলছে দু’দলই |
ছেলের বিয়ে, বাড়ি গিয়ে সনিয়াকে নিমন্ত্রণ গডকড়ীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
রাজনৈতিক ভাবে দু’পক্ষ দুই প্রান্তে। প্রতিদিন দু’জনের দল একে অন্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে গরম করে তোলে রাজনীতির হাওয়া। সনিয়া গাঁধী এবং নিতিন গডকড়ী। একজনের ‘বিদেশিনি’ পরিচয় নিয়ে সরব হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ভোটে লড়েছিল অন্য জনের দল। আজ সেই ‘বিদেশিনি’ সনিয়ার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে নিজের ছেলের বিয়েতে আমন্ত্রণ জানিয়ে এক অন্য রকম রাজনৈতিক সৌজন্যের নজির রাখলেন বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী। যা সাম্প্রতিক কালের ভারতীয় রাজনীতিতে একবারে বিরল না হলেও ক্রমহ্রাসমান বলেই মনে করছেন অনেকে।
আজ সন্ধ্যায় সনিয়ার সঙ্গে দেখা করতে তাঁর বাসভবনে যান নিতিন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে কংগ্রেস সভানেত্রীর বাড়িতে প্রধান বিরোধী দলের সভাপতির এই আচমকা ‘যাত্রা’য় গুঞ্জন ছড়ায় রাজধানীর রাজনৈতিক শিবিরে। প্রশ্ন উঠতে থাকে, তা হলে কি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে কোনও সমঝোতার পথে হাঁটতে চলেছেন দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব? নাকি অন্য কোনও বিষয়ে সমঝোতা হতে চলেছে দু’জনের মধ্যে? বিশেষ করে আজ প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়াতে গিয়ে সনিয়া যে ভাবে বিরোধীদের আক্রমণ করেছেন। কিন্তু যাবতীয় জল্পনায় জল ঢেলে কংগ্রেস সূত্রে পরে জানানো হয়, সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার ছিল এটা। ছেলে সারঙ্গের বিয়ের নিমন্ত্রণ জানাতেই সনিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন নিতিন। গডকড়ী শিবিরও জানিয়েছে, আগামী ২৪ জুন নাগপুরে সারঙ্গের বিয়ে। সেই উপলক্ষে ২ জুলাই দিল্লিতে একটি প্রীতিভোজের আয়োজন করেছেন নিতিন। সনিয়া যাতে বিয়ে এবং প্রীতিভোজ দুই অনুষ্ঠানেই উপস্থিত থাকেন, সেই অনুরোধ জানাতেই ১০ জনপথ গিয়েছিলেন নিতিন। এর মধ্যে রাজনৈতিক কোনও সমীকরণের ভাবনাকে পুরোপুরি উড়িয়ে দুই শিবিরই বলছে, এটা হল হারিয়ে যাওয়া সৌজন্যের প্রত্যাবর্তন।
নিতিন আজ যে ভাবে কংগ্রেস সভানেত্রীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন, তা সাম্প্রতিক কালের জাতীয় রাজনীতিতে কিছুটা বিরলই। বিশেষ করে এই বিজেপিই এক সময় সনিয়া গাঁধীর ‘বিদেশিনি’ পরিচয় নিয়ে সবথেকে বেশি সরব ছিল। ১৯৯৯-এর লোকসভা নির্বাচনে সেই তকমাকে হাতিয়ার করে ময়দানেও নেমেছিলেন বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ। নির্বাচনে তিনি হারলেও এ নিয়ে অবস্থান বদলায়নি বিজেপি। সেই অবস্থান থেকে সরে এসে আজ এই নিমন্ত্রণ পর্ব ভারতীয় রাজনীতির পক্ষে শুভ লক্ষণ বলেই মনে করছেন সকলে।
অবশ্য শুধু নিতিন নন। বিরোধ থাকলেও গাঁধী পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে এসেছেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। তাঁর আত্মজীবনী ‘মাই কান্ট্রি মাই লাইফ’ প্রকাশিত হওয়ার পরে সস্ত্রীক আডবাণী বইটি উপহার দিতে গিয়েছিলেন সনিয়া গাঁধীকে। কফির উষ্ণতায় কমাতে চেয়েছিলেন রাজনৈতিক শত্রুতাকে। স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় রাজনীতিতে মতাদশর্গত বিরোধ থাকলেও পারস্পরিক সৌজন্যের নজিরের অভাব ছিল না। পঞ্চাশের দশকে লর্ড ম্যাউন্টব্যাটেন সস্ত্রীক ভারতে আসার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। যা নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহওরলাল নেহরুর বিরুদ্ধে সংসদের মধ্যেই ব্যক্তিগত আক্রমণ শানিয়েছিলেন সিপিআই নেতা পি সুন্দরাইয়া। যদিও এর রেশ টেনে সেই রাতে জহওরলালের ডাকা নৈশভোজ বাতিল করেননি সুন্দরাইয়া। সেখানে দুই নেতা পরস্পরের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন। এমন নজির পরেও মিলেছে। ইন্দিরা গাঁধীর দুই পুত্রবধূ সনিয়া এবং মানেকার মধ্যে দূরত্ব থাকলেও মানেকা-পুত্র বরুণের সঙ্গে সনিয়া-রাহুল-প্রিয়ঙ্কার যথেষ্ট সুসম্পর্ক। কিন্তু এমন উদাহরণ যথেষ্টই কম। যেখানে নিতিন ব্যতিক্রম হয়েই রইলেন। |
|
|
|
|
|