নির্বিবাদী বলে পরিচিত বোলপুরের মিস্ত্রিপাড়ার যুবক ফেকনা ওরফে স্বপন দাসের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়। কেউ কেউ ক্ষুব্ধ, কেউ হতবাক। অনেকেই সকালে তাঁকে বাড়ি থেকে কাজে বেরিয়ে যেতে দেখেছেন। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই স্বপনের যে এমন ‘নির্মম’ মৃত্যু হবে, তা যেন কারও বিশ্বাসই হচ্ছে না।
বোলপুরের পুরপ্রধান সুশান্ত ভকতের নিজের ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্বপন রেলে হকারি করেই সংসার টানতেন। সম্প্রতি স্ত্রীর মৃত্যুর পর সাত বছরের ছেলে দেব আর মাকে নিয়ে কোনও রকমে সংসার চলত। ছেলের অকাল মৃত্যুতে কেমন করে সংসার চলবে, কেমন করেই বা পিতৃমাতৃহীন দেবকে মানুষ করবেন, কিছুতেই ভেবে উঠতে পারছেন না স্বপনের বৃদ্ধা মা মীরা দাস। তিনি জানালেন, স্বপনের বাবাও রেলে হকারি করতেন। বাবাকে দেখেই স্বপন ও তাঁর অন্য দুই ভাই রুজিরুটির জন্য রেলের হকারির রাস্তাই বেছে নেয়। |
স্বপনবাবু থাকতেন মায়ের সঙ্গেই। মীরাদেবীর দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। অন্য দুই ছেলেও আলাদা সংসার করেন। নিজে শাড়ি ফেরি করলেও অনেকটাই নির্ভর ছিলেন ছেলে স্বপনের উপর। মীরাদেবী বলেন, “সংসারে প্রতিবাদহীন এবং লাজুক স্বভাবের ছিল স্বপন। অসৎসঙ্গে পড়ে নেশা করলেও কোনওদিন কারও সঙ্গে বচসা করেনি। সেই ছেলে আমার এমন ভাবে চলে যাবে তা মেনে নিতে পারছি না।”
স্বপনবাবুর মা জানান, অন্যান্য দিনের মতো এ দিনও স্বপনবাবু সকালে বাড়ি থেকে কাজে বেরিয়ে যান। সাঁইথিায় শাড়ি বেঁচার কাজে বেরিয়ে যান মীরাদেবীও। দুপুরে খবর পান ছেলে আর নেই। তাঁর আক্ষেপ, “স্বপনের বাবা ৪৫ বছর রেলে হকারি করেছেন। সেই রেলের স্টেশনে রেল পুলিশ ছেলেকে এ ভাবে খুন করবে আমি ভাবতে পারছি না। কারও সঙ্গে কোনও বিবাদ ছিল না স্বপনের। তাকে পিটিয়ে খুন করল কেনও?”
রেলের কাছে প্রশ্ন সন্তানহারা এই মায়ের। |
মৃত স্বপনবাবুর দিদি সবিতা উপাধ্যায় বলেন, “সকালেই ভাই আমার হাটতলার বাড়িতে এসেছিল। হাতে দশটা টাকা দিয়ে বলল ‘এটা রাখ পরে আসছি’। ও যে আর কোনওদিনই ফিরবে না বিশ্বাস হচ্ছে না।” মৃত মায়ের বিস্ময়, “সংসারে সামান্য কিছু উপার্জন করে দিত। তাকে এমন নির্মম ভাবে মেরে ফেলে রাখল। কেউ হাসপাতালে নিয়েও গেল না!” মীরাদেবী মনে করেন, সেই সময় হাসপাতালে নিয়ে গেল হয়তো বেঁচে যেত তাঁর ছেলে।
স্বপনবাবুর সাত বছরের সন্তান দেব এলাকার একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। কিছুদিন আগেই হারিয়েছে মাকে। আজ বাবকেও। অল্প বয়স এখনও ঠিক ভাবে বুঝে উঠতে পারেনি কী হারালো। সেই ছেলের মুখে কোনও ভাষা নেই। তবে তার চোখ থেকে অজান্তে গড়িয়ে পড়া জল যেন বলে দিচ্ছিল অনেক কিছুই। |