তোলা দিতে অস্বীকার করায় বোলপুর স্টেশনের এক হকারকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল রেল সুরক্ষা বাহিনীর (আরপিএফ) এক এএসআইয়ের বিরুদ্ধে। ঘণ্টাখানেক ধরে ওই হকারের দেহ স্টেশনে পড়ে থাকতে দেখে ক্ষিপ্ত জনতা আরপিএফ ও জিআরপি-র দফতরে ভাঙচুর চালায়। দোষী আরপিএফ আধিকারিকের শাস্তি ও তাঁর খোঁজে জনতা আরপিএফের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। অবরোধে প্রায় এক ঘণ্টা আটকে পড়ে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস। সব মিলিয়ে সোমবার দুপুরে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় স্টেশন চত্বর। পরে হাওড়ার রেল পুলিশ সুপার মিলনকান্ত দাস জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তের পরে অভিযুক্ত এএসআই এ কে চৌধুরীর বিরুদ্ধে ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। যদিও ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।
|
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম স্বপন দাস (৩২)। বাড়ি বোলপুরের মিস্ত্রিপাড়ায়। তিনি স্টেশন চত্বরে তেলেভাজা বিক্রি করতেন। স্থানীয় হকারদের অভিযোগ, অভিযুক্ত ওই এএসআইয়ের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক বার স্টেশন চত্বরে তোলা তোলার অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও রেল ব্যবস্থা নেয়নি। সকালে ওই এএসআই স্টেশনে ঢুকে ফের তোলা তুলছিলেন। সেই সময় স্বপন তোলা দিতে অস্বীকার করলে কথা কাটাকাটি হয়। এরপরেই স্বপনকে মারতে মারতে নিয়ে যান ওই এএসআই। গরমে স্টেশনের কোলাপসিবল গেটের বাইরে টিকিট কাউন্টারের সামনে স্বপনকে ফেলে রেখে চলে যান। |
মৃতের দিদি সবিতা উপাধ্যায়ের অভিযোগ, “ভাইকে আরপিএফের এএসআই এ কে চৌধুরী মারধর করেন। পরে অন্যান্য হকাররা ভাইকে পড়ে থাকতে দেখে ওর কাছে যায়। তখনই বুঝতে পারে ভাই মারা গিয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, “ভাইকে নির্মম ভাবে মেরে খুন করা হয়েছে। জিআরপিতে লিখিত অভিযোগ করেছি।” হকারদের অভিযোগ, “চিকিৎসা করতে পারলে হয়তো স্বপন বেঁচে যেত। আরপিএফ কিংবা জিআরপির কাছে গিয়েও সাহায্য পাওয়া যায়নি।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামী জানান, রেলও পৃথক তদন্তের নির্দেশ জারি করেছে। তদন্তে অভিযুক্ত এএসআই দোষী প্রমাণিত হলে দ্রুত তাঁর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মৃতের পরিবারবর্গকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে রেল। ক্ষুব্ধ আইএনটিটিএউসির রেলওয়ে হকার্স ইউনিয়নের কর্মীরাও। তাঁদের দাবি, “আরপিফের ওই দোষী কর্মীর শাস্তি চাই।” তবে তোলার বিষয়টি নিয়ে পুলিশ বিশেষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
অভিযুক্ত এএসআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে মৃতদেহটি আটকে রেখে রেল অবরোধ করা হয়। বোলপুর থানার এএসআই মানবেন্দ্র চক্রবর্তী-সহ কয়েক জন পুলিশ জনতার হাতে নিগৃহীত হন। মারধর করে তাঁর মোটরবাইকে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তপ্ত জনতা। বোলপুর থানা থেকে পুলিশ বাহিনী যায়। এরপরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন জেলা পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা। তাঁর নির্দেশে আশপাশের কয়েকটি থানার ওসি ও পুলিশ বাহিনীকে স্টেশনে চত্বরে মোতায়েন করা হয়। বেলা ৩টে নাগাদ মৃতদেহটি ময়না-তদন্তের জন্য বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার হষিকেশ মিনা বলেন, “মৃতের পরিবারকে জিআরপিতে অভিযোগ জানাতে বলেছি। অভিযোগ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অভিযুক্ত এ কে চৌধুরীর ডিউটি সকাল ৮টায় শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে জানান বোলপুর আরপিএফের ইন্সপেক্টর ডি বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ৮টায় ডিউটি শেষ হলেও এ কে চৌধুরী ১১টা পর্যন্ত বোলপুর স্টেশনে কোন ‘ডিউটি’ করছিলেন তার সদুত্তর দিতে পারেননি রেল আধিকারিকরা। ডি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনার পর থেকে ওই অফিসারকে পাওয়া যাচ্ছে না। মোবাইলে যোগাযোগ করেও তাঁকে পাইনি।” |