বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ-র বেজিং সফরের ঠিক আগে চিনা-নাগরিকদের ভারত সফরের ব্যাপারে সতর্ক করে একটি নির্দেশিকা জারি করল সে দেশের সরকার।
এই ‘বিরল’ নির্দেশিকায় (এর আগে এমন ধরনের কোনও সতর্কবার্তা চিন সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়নি বলেই জানাচ্ছে সাউথ ব্লক) যথেষ্টই বিস্মিত বিদেশ মন্ত্রক। প্রাথমিক অস্বস্তি কাটিয়ে একে ‘শঠে শাঠ্যং’ কূটনীতি বলেই ব্যাখ্যা করছেন ভারতীয় কূটনীতিকরা। তাঁদের বক্তব্য, দু’সপ্তাহ আগে বেজিংয়ে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। গত জানুয়ারি মাসে পূর্ব চিনের ইয়ু প্রদেশে বাণিজ্য সংক্রান্ত বিতর্কের জেরে তিন জন ভারতীয় ব্যবসায়ীকে অপরহণ করে চিনের স্থানীয় পণ্য সরবরাহকারীরা। সেই ঘটনার পর ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ইয়ু প্রদেশে ব্যবসা করার ব্যাপারে সতর্ক করে ওই বিজ্ঞপ্তিটি জারি করা হয়েছিল। তারই ‘জবাব’ দিতে বেজিঙের এই পদক্ষেপ বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।
কৃষ্ণ আগামী ৫ থেকে ৭ জুন বেজিংয়ে ‘সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন’ (এসসিও)-এর শীর্ষ বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। ওই বৈঠকে আলোচ্যসূচির বাইরে চিনের সতর্কবার্তার প্রসঙ্গটিও তুলবে নয়াদিল্লি। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে ওই সতর্কবার্তাটিতে বলা হয়েছে, ‘ভারতের বহু জায়গায় তেলের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভ চলছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকেও এই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। অনেক জায়গাতেই রেল এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে রয়েছে। অনেক দোকানও বন্ধ। বিশেষ করে যে এলাকাগুলি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে দিল্লি, বেঙ্গালুরু, মুম্বই, পটনা, পশ্চিমবঙ্গ, এলাহাবাদ, বারাণসী, হিমাচলপ্রদেশ, ওড়িশা ইত্যাদি’। ভারতের এই সার্বিক ‘অচলাবস্থার’ চিত্রটি তুলে ধরে ওই সতর্কবার্তায় আরও বলা হয়েছে, “ভারতে অবস্থিত চিনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হচ্ছে, ভারত সফরকালে চিনের নাগরিকরা যাতে তাঁদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দিকে অবশ্যই নজর রাখেন।”
বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, কৃষ্ণর সফরের সঙ্গে এই নির্দেশিকার সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই ঠিকই। কিন্তু তাঁর চিন সফরের আগে এমন একটি ঘটনা দু’দেশের কূটনীতিতে নিঃসন্দেহে প্রভাব ফেলবে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, তেলের দাম বাড়ার জেরে এমন কোনও পরিস্থিতি ভারতে তৈরি হয়নি যার জন্য এক জন বিদেশি নাগরিক ‘নিরাপত্তার অভাব’ বোধ করতে পারেন। শীর্ষ স্তরে আলোচনার মাধ্যমে চিন যাতে ওই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করে, তার চেষ্টা করা হবে।
এসসিও-র শীর্ষ বৈঠকে চিন ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন রাশিয়া, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তানের নেতারাও। ভারত এসসিও-র অন্তর্ভুক্ত না হলেও পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে প্রত্যেক বারই উপস্থিত থাকে। মূল বৈঠকের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের বিদেশমন্ত্রীদের সঙ্গে পার্শ্ববৈঠকও হবে কৃষ্ণর। |