পুরভোটের দিন পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে পুলিশ। দুর্গাপুরে এমনই অভিযোগ তুলল বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। দু’পক্ষেরই অভিযোগ, পুলিশের সামনেই তাদের কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সমর্থকদের ভয় দেখানো হয়েছে, ক্যাম্প ভাঙচুর হয়েছে। কিন্তু পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি। দুর্গাপুরের এডিসিপি শুভঙ্কর সিংহ সরকার অবশ্য বলেন, “কোনও অভিযোগ পেলেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
ভোটের দিন সকাল ৬টা নাগাদ ২১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রথম গন্ডগোল শুরু হয়। এই ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছিলেন সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক ও মেয়র পারিষদ বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী। নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শহরের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে এ বার বামেদের প্রার্থী প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী। তাঁর অভিযোগ, ভোটের দিন ১০টি বুথের মধ্যে ৭টিতে তাঁদের এজেন্টকে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে তাঁরা ঢুকলেও দুপুর ১২টা নাগাদ ফের তিনটি বুথের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। |
১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী লক্ষ্মী কর্মকারের অভিযোগ, ৪২ নম্বর বুথে তাঁকে ধাক্কা মেরে বের করে দেওয়া হয়। তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট মনোতোষ সরকারকে মারধর করা হয়। ৪২ নম্বরের সিপিএম প্রার্থী অসীমকুমার ঘোষ অভিযোগ করেন, সুকুমারনগরে ১ ও ২ নম্বর বুথ দখল করে নিয়েছে তৃণমূল। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএমের একটি ক্যাম্প ভাঙচুর করা হয়। এই ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী বংশীবদন কর্মকারের নির্বাচনী এজেন্ট গৌতম অধিকারীকে মারধর করা হয়। তাঁর চশমা ভেঙে যায়। বিকালে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভারতী রোডের নতুনপল্লিতে সিপিএম ও তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। তৃণমূলের অভিযোগ, রাস্তার ধারে তাদের একটি ক্যাম্প অফিস ও এক সমর্থকের বাড়িতে হামলা চালায় সিপিএম। তিন জনকে মারধরও করা হয়।
মহকুমা নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুথ পিছু অন্তত দু’জন করে সশস্ত্র পুলিশের ব্যবস্থা ছিল। একাধিক বুথে চার জন সশস্ত্র ও চার জন লাঠিধারী পুলিশকর্মী ছিলেন। এ ছাড়া দিনভর পুলিশি টহলও চলে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ভোট চলাকালীন শহরের নানা প্রান্তে বিক্ষিপ্ত গণ্ডগোলের অভিযোগ উঠেছে। কংগ্রেস একটি ওয়ার্ডে এবং বামফ্রন্ট একটি ওয়ার্ড ও ১৯টি বুথে পুননির্বাচনেরও দাবি করে। যদিও নির্বাচন কমিশন তা মানেনি। জেলাশাসক ওঙ্কারসিংহ মিনা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলির কাছে অভিযোগ পাওয়ার পরেই আধিকারিকেরা সেই সমস্ত বুথে গিয়েছেন। দেখা গিয়েছে, অধিকাংশরই কোনও ভিত্তি নেই। যে সব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে, তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” দুর্গাপুরের এডিসিপি শুভঙ্কর সিংহ সরকার জানান, ভোটের দিন অশান্তি পাকানোর অভিযোগে মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ-প্রশাসনের এমন বক্তব্য অবশ্য মানতে নারাজ বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদারের দাবি, “সারা দিনই নানা ওয়ার্ডে গোলমাল হয়েছে। অথচ পুলিশ নির্বিকার দর্শক হয়ে থেকেছে। পুলিশের একাংশ রাজনৈতিক রং দেখে কাজ করেছে।” একই রকম দাবি করেছেন কংগ্রেসের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি সুদেব রায়ও। তাঁর অভিযোগ, “আমাদের কর্মীদের হুমকি দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনী এজেন্টকে মারধর করা হয়েছে। অথচ পুলিশ কিছুই করেনি।”
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অবশ্য তৃণমূলের বিশেষ কোনও ক্ষোভ নেই। তাদের ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর বা এক কর্মীর মাথা ফাটলেও দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলছেন, “ছোট-খাটো কিছু ঘটনা ঘটেছে ঠিকই। কিন্তু পুলিশ প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করেছিল বলেই এত মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরেছেন।” |