সিআইএসএফ প্রহরা উঠে যেতেই কারখানা থেকে উধাও হতে শুরু করেছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি। আশপাশের বাসিন্দাদের বক্তব্য অনুযায়ী, কার্যত চোরেদের লাইন পড়েছে এমএএমসি কারখানায়। পুলিশ এখনও পর্যন্ত চার জনকে গ্রেফতার করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে টালবাহানার পরে গত বুধবার কারখানার পাহারার দায়িত্ব থেকে সরে যায় সিআইএসএফ। ভোরে কারখানার গেট ‘সিল’ করে চলে যান জওয়ানেরা। পুলিশের দাবি, সিআইএসএফ প্রহরা উঠে যাওয়া নিয়ে সরকারি ভাবে কোনও তথ্য না পাওয়ায় তারা কোনও বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা রাখেনি। যদিও বাসিন্দাদের ক্ষোভ, যে হারে কারখানা চত্বরে দুষ্কৃতীরা আনাগোনা করছে, তাতে পুলিশ কোনও ভাবেই দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। এলাকাবাসী জানান, সন্ধ্যা নামতে না নামতেই হানা দেয় চোরেরা। বস্তুত, রবিবার রাত পর্যন্ত প্রায় অরক্ষিত ছিল এই কারখানা। এর মধ্যে লোহাচোরেরা বহু যন্ত্রপাতি সরিয়ে ফেলেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। তবে চুরি যাওয়া সামগ্রীর পরিমাণ নিয়ে কেউই নিশ্চিত নন। |
দুর্গাপুরে স্ট্রংরুমের সামনে পাহারা। সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
এর আগে সিআইএসএফ পাহারা উঠে যাওয়ার পরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভারত অপথ্যালমিক গ্লাস লিমিটেডেও দেদার যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনা ঘটেছিল। এমএএমসি-রও সেই একই হাল হতে পারে বলে আশঙ্কা বাসিন্দাদের। ২০০২ সালে বন্ধ হয়ে যায় এই কারখানাটি। এর পরে ২০১০ সালের ১৮ অগস্ট তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিইএমএল, সিআইএল এবং ডিভিসি-র কনসর্টিয়াম কলকাতা হাইকোর্টে নিলামে সর্বোচ্চ দর দিয়ে এমএএমসি-র দায়িত্ব পায়। লিক্যুইডেটরের হাত থেকে কারখানার দায়িত্বও বুঝে নেয় কনসর্টিয়াম। সম্প্রতি দুর্গাপুরে এসে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, “দিন কয়েকের মধ্যেই ওই তিন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক হবে। সেখানেই কারখানা খোলার বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।” কিন্তু তার দিন দুয়েক পরেই সিআইএসএফ প্রহরা উঠে যাওয়া এবং লোহাচোরেদের দাপটে আতঙ্কিত বাসিন্দারা।
কারখানার আইএনটিইউসি নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যা হয়েছে তা হতাশাজনক। শিল্পমন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছি।” সোমবার সিটু নেতা বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তী আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনারের কাছে এই পরিস্থিতিতে উপযুক্ত পুলিশি প্রহরার আর্জি জানান। তিনি বলেন, “সিআইএসএফ উঠে যাওয়ায় এবং পুলিশ ভোট নিয়ে ব্যস্ত থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়েছে চোরেরা।” তবে সোমবার থেকে বিশেষ পুলিশি প্রহরা রাখা হচ্ছে বলে জানান এডিসিপি (পূর্ব) শুভঙ্কর সিংহ সরকার। তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত চার জন চোর সন্দেহে ধরা হয়েছে। আপাতত সর্বক্ষণের জন্য ১৫ জন পুলিশকর্মী রাখা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি টহলের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে বলে জানান এডিসিপি। |