সব্জি বাজারে হাত জোড় করে ব্যবসায়ীদের আবেদন করছেন হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ)-এর কর্মকর্তারা---‘‘শিলিগুড়ি প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত শহর, এটা আমাদের গর্ব। দয়া করে এই সুনাম নষ্ট করবেন না। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করবেন না। খদ্দেররা কেউ চাইলেও দেবেন না।” বিধান মার্কেটের পঞ্চাশোর্ধ্ব সব্জি বিক্রেতা হাসিমুদ্দিনের দিকে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা এগিয়ে যেতেই তিনি কাপড়ের ক্যারিব্যাগ বার করে দেখান। বলেন, “কখনই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দিই না। খদ্দেরদের এই ব্যাগ দিচ্ছি।” প্রচারকারীরাও তাঁকে সাধুবাদ জানান। সুভাষপল্লির বাসিন্দা হেমন্ত সাহা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে করে মুড়ি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন দেখে তাঁকে ঘিরে ধরেন প্রচারকারীরা। তার মতো পড়াশোনা জানা যুবক যদি সচেতন না হন তা হলে শহরের এই সুনাম ক্ষুন্ন হবে জানালে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। নিজেই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগগুলি বের করে প্রচারকারীদের হাতে তুলে দেন। শিলিগুড়ি শহরকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত রাখার জন্য রবিবার সকালে বিধান মার্কেটের ব্যবসায়ী, ক্রেতাদের কাছে ন্যাফের তরফে এ ভাবেই সচেতনতা প্রচার চালান অনিমেষ বসুরা। প্রচার চালানো হয় বিধান মার্কেট সব্জি বাজার, মাছ, মাংসের বাজারে। ক্ষুদিরামপল্লির ফল এবং সব্জি বাজারে। ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষবাবু বলেন, “রাজ্যর মধ্যে একমাত্র শিলিগুড়ি প্লাস্টিকের ক্যরিব্যাগ মুক্ত শহর। এটা আমাদের গর্ব। দু একজন অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য সেই সম্মান কখনই যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য সকলকেই সচেতন হতে হবে। |
সে কারণেই প্রচার অভিযান চালানো হচ্ছে।” আগামীতে অন্যান্য বাজারগুলিতেও একই রকম ভাবে তাঁরা প্রচার অভিযান চালাবেন বলে জানান। ক্ষুদিরামপল্লির বাজারে একটি দোকানে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে আঙুর ঝুলিয়ে রাখা ছিল। তা দেখে ন্যাফের সদস্য সুজিত রাহা, অপর সদস্য তথা উদ্যান পালন বিভাগের আধিকারিক অরুণাচল বসুরা দোকানি লাল বাহাদুরের কাছে যান। তাঁকে বোঝালে দোকানি দুঃখ প্রকাশ করেন। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ আর ব্যবহার করবেন না বলে আশ্বাস দেন। ধুনো দেওয়ার জন্য নারকেলের ছোবা কেটে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের মোড়কে বিক্রি করছিলেন নকুল রায়। অনিমেষবাবুরা তাঁকে বোঝালে তিনি লজ্জিত হন। আর প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে জিনিস বিক্রি করবেন না বলে জানান। সম্প্রতি জবরদস্তি প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে বিধান মার্কেট, ক্ষুদিরামপল্লি, ঘোঘোমালি বাজারে কয়েকজন ফল, সব্জি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং পুরসভার যৌথ অভিযানে বাধা দেওয়ায় ক্ষুদিরামপল্লির এক ব্যবসায়ীর নামে পুলিশে অভিযোগও জানানো হয়েছে। শহরকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত রাখা কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য আসরে নামে ন্যাফ। এ দিন থেকে তারা শহরের বিভিন্ন বাজারগুলিতে সচেতনতা অভিযান শুরু করেন। বছর দু’য়েক আগে শিলিগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষ শহরকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত করতে উদ্যোগী হলে তখন থেকেই সহায়তার হাত বাড়িয়েছে তারা। শীঘ্রই ঘোঘোমালি বাজার, নিউ জলপাইগুড়ি গেটবাজার, হায়দরপাড়ার মতো বিভিন্ন বাজারেও তারা প্রচার অভিযান চালাবেন। ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করে এ ব্যাপারে সচেতন করতে বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তাদের কাছে ন্যাফের তরফে প্রচার অভিয়ানের সময় চিঠি দিয়ে আহ্বান জানানো হয়। শিলিগুড়ি খুচরা ফল ও সব্জি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুবল রাহা জানান, কোনও ব্যবসায়ী প্লাস্টিকের ক্যারিব্যগ যাতে ব্যবহার না করেন ইতিমধ্যেই সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। দু’ এক দিনের মধ্যে ফের তারা সকলকে নিয়ে বৈঠক করবেন। বিধান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বাদল গুহ বলেন, “ন্যাফের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে অনুরোধ করা হয়েছে। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ চুপি সাড়ে কেউ যাতে ব্যবহার না করেন সে জন্য আমরা ব্যবসায়ীদের ফের সাবধান করব। শিলিগুড়িকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত রাখতে আমরা সব রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত।” |