এ যেন লন্ডনের পথে আর এক ধাপ এগোনোর চেষ্টা।
লন্ডনের বিখ্যাত হাইড পার্কে গাছেদের দত্তক নেওয়ার প্রথা চালু আছে দীর্ঘ দিন। গাছের সঙ্গে আত্মীয়তা গড়ে তুলতে নবজাতক বা ছোট শিশুর নামে বৃক্ষরোপণ করা হয় লস অ্যাঞ্জেলেসেও। অনেকটা সেই পথ ধরেই শহরের প্রতিটি নবজাতকের মা-বাবাকে একটি গাছের ভার নিতে উদ্বুদ্ধ করছে কলকাতা পুরসভা।
‘আ চাইল্ড ইজ বর্ন, আ ট্রি ইজ বর্ন!’ এই প্রকল্পে নবজাতককে স্বাগত জানাতে পুর-উপহার একটি চারা গাছ। শিশুটির নামেই রাখা হবে যার নাম। শিশু বড় হতে হতে গাছও মহীরূহে পরিণত হবে। শিশুটির অভিভাবকদের যত্নেই গাছ বাড়বে। ইতিমধ্যে শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল-নার্সিংহোমের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে শুরু হয়েছে পুর-প্রকল্প। নবজাতকের নামের একটি ফলক থাকবে চারাগাছের কাছে। কলকাতার কংক্রিট-বুকে এই গাছ-শিশুদের ছড়িয়ে দিতে পুরসভার সহযোগী একটি রিয়েল এস্টেট গোষ্ঠী।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমারের কথায়, “নিজের বাচ্চার নামের গাছের প্রতি এমনিতেই মা-বাবার মায়া জন্মাবে। গাছের যত্নে তাই সমস্যা হবে না।” চিত্তরঞ্জন সেবা সদনের ভাইস-প্রিন্সিপাল আশিস মুখোপাধ্যায় বলছেন, “নবজাতকদের মা-বাবারা অনেকেই একটি গাছ-শিশুর ভার নিতে উৎসাহী।” কয়েকটি নির্দিষ্ট পার্ক বা বুলেভার্ড ছাড়াও অভিভাবক দম্পতি ইচ্ছেমতো তাঁদের বাড়ি বা পাড়ার কোনও কোণ বেছে নিতে পারবেন। পরিবেশ দিবসের (৫ জুন) প্রাক্কালে আজ, সোমবার শহরের প্রথম গাছ-শিশুটির বীজ রোপণ। চারাটি আলিপুরের হর্টিকালচার গার্ডেনে ঠাঁই পাবে। গাছের মা-বাবা হতে ইচ্ছুক অনেকেই সেখানে থাকবেন।
টালিগঞ্জের অভিরূপ ভদ্র ও তাঁর স্ত্রী বৈশাখী সেন ভদ্র আপাতত বৃক্ষ-শাবকের কথা ভেবে উত্তেজনায় ফুটছেন। ওঁরা দু’জনেই আইটি পেশাদার। অভিরূপ-বৈশাখীর প্রথম সন্তান আলেখ্য জন্মেছে গত ২৯ মে। একরত্তি ওই শিশুর নামেই রোপণ হবে চারাগাছ। অভিরূপের কথায়, “ছেলে একটু বড় হলে আমরা ওকে গাছটা দেখাতে নিয়ে যাব। আলেখ্য পরে যেখানেই থাকুক গাছটার জন্যই ওর কলকাতাকে মনে পড়বে।”
এ দেশের গ্রামীণ সমাজে কোথাও কোথাও মেয়ে জন্মালে তার প্রতিপালনের জন্য বৃক্ষরোপণের দস্তুর আছে। জামশেদপুরে জেআরডি টাটা পার্কে প্রয়াত প্রিয়জনকে মনে করেও গাছ লাগানো হয়। লন্ডনে হাইড পার্ক বা অন্য কয়েকটি পার্কে গাছ দত্তক পেতে হলে সামান্য অর্থ দিতে হয়। লন্ডনের রয়্যাল পার্ক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ বিষয়টির দেখভাল করেন। এ দেশেও কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে হিমালয়ের পার্বত্য এলাকায় গাছ দত্তক নিয়ে থাকেন সমতলের বাসিন্দা বিভিন্ন শহরের মানুষ।
পুর-প্রকল্পে কলকাতার মাটিতে যে গাছ-শিশুরা শিকড় গাড়বে, তারা অবশ্য সাত ভাই চম্পা বা পারুল বোন নয়। এ শহরে প্রধানত নিম-মেহগনি গাছ বসানো হচ্ছে। এই প্রকল্পের শরিক রিয়েল এস্টেট সংস্থাটির তরফে ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জয় জৈন বলছেন, “সামাজিক দায়িত্বের (কর্পোরেট সোশাল রেসপনসিবিলিটি) অঙ্গ হিসেবে আমাদের লক্ষ্য ২০১৪ সালের মধ্যে ৫০ হাজার গাছ লাগানো। কলকাতার বাইরে বাংলার অন্যত্রও সবুজ বাড়ানোর এই কাজটা চালিয়ে যেতে চাই।” |