ভোটাভুটিতে জিতে শনিবার ভদ্রেশ্বর পুরসভায় ফের চেয়ারম্যান হলেন তৃণমূলের দীপক চক্রবর্তী। কিন্তু তা নির্বিঘ্নে হল না।
দলীয় কাউন্সিলর মহেন্দ্রপ্রতাপ সিংহের নেতৃত্বে গত ২০ মার্চ দীপকবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন কয়েক জন তৃণমূল কাউন্সিলর। কংগ্রেস, সিপিএম এবং নির্দলদের একাংশও ওই প্রস্তাবে সই করেন। এ দিন আস্থা-ভোট মিটতেই দলীয় কাউন্সিলরদের দু’পক্ষের মধ্যে বচসা থেকে হাতাহাতি বেধে যায় বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। তাতে কংগ্রেস এবং নির্দল কাউন্সিলররাও জড়িয়ে পড়েন। এক তৃণমূল কাউন্সিলর তাঁর জামা ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। এক নির্দল মহিলা কাউন্সিলরকে দরজায় লাথি মারতে দেখা যায়। ওমপ্রকাশ চৌধুরী নামে আর কংগ্রেস কাউন্সিলর জানান, তিনি ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ সতর্ক থাকায় ভোটাভুটিকে কেন্দ্র করে এই গোলমাল বড় আকার নেয়নি। ১০-৮ ব্যবধানে জিতে ফের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন দীপকবাবু। |
তখনও রয়েছে উত্তেজনা। ছবি: তাপস ঘোষ। |
দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের নির্দেশে হুগলি জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে সভাপতি তপন দাশগুপ্ত এবং কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব আগাগোড়া ভদ্রেশ্বরে ছিলেন। দলীয় কাউন্সিলরদের আকচা-আকচি নিয়ে তাঁরা অবশ্য মুখ খুলতে চাননি।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, দীপকবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার পর থেকেই পুরসভায় অচলাবস্থা তৈরি হয়। পরিষেবা মাথায় ওঠে। সাধারণ মানুষ নাজেহাল হন। অনাস্থার প্রেক্ষিতে ভোটগ্রহণ হয় ২৪ মার্চ। দু’পক্ষই দাবি করে, তারাই জিতেছে। এ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। মহকুমা প্রশাসনের তরফে জেলা প্রশাসনে রিপোর্ট পাঠানো হয়। দীপকবাবুরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। পাল্টা মহেন্দ্রপ্রতাপবাবুও আদালতে যান। দু’পক্ষের শুনানি হয়। এর প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র পাল গত ১৮ মে চেয়ারম্যানের প্রতি আস্থা-ভোটের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশেই এ দিন চেয়ারম্যান পদে ভোট হয়।
ভদ্রেশ্বর পুরসভার আসন সংখ্যা ২২। এর মধ্যে তৃণমূলের দখলে রয়েছে ১২টি আসন (সম্প্রতি এক তৃণমূল কাউন্সিলরের মৃত্যু হয়েছে। ওই আসনে নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা হয়নি)। কংগ্রেস ৫টি এবং সিপিএম ৩টি আসন পায়। দু’টি আসন রয়েছে নির্দলের দখলে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দীপকবাবুর পক্ষে তৃণমূলের ৮ জন, সিপিএম এবং কংগ্রেসের এক জন করে কাউন্সিলর ভোট দেন। মহেন্দ্রপ্রতাপবাবুর পক্ষে তৃণমূলের ৩ জন, কংগ্রেসের ৪ জন এবং এক নির্দল কাউন্সিলর ভোট দেন। একটি ভোট বাতিল হয়। প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিপিএমের দেবগোপাল ভট্টাচার্য এবং গৌতম সরকার ভোটাভুটিতে অংশ নেননি।
নির্বাচন জিতে পুরপ্রধান বলেন, “গোপন ব্যালটে ভোট হয়েছে। কাউন্সিলররা পুরসভায় আমার কাজের প্রতি আস্থা রেখেছেন। তাঁদের ধন্যবাদ।” |