প্রধানমন্ত্রী বললেন, তিনি যেন তাঁদের সঙ্গে থাকেন। তাঁরা ইউপিএ-র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শরিক। এক সঙ্গে কাজ করতে চান।
তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পাল্টা বললেন, তাঁরা তো থাকতেই চান। এবং থাকবেনও। সে ব্যাপারে তাঁরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু মন্ত্রক এ রাজ্যের সঙ্গে ‘চূড়ান্ত অসহযোগিতা’ করছে! এমন হলে শরিকি সম্পর্কের ‘অবনতি’ হয়।
দেশের প্রধান প্রশাসক রাজ্যের প্রশাসককে ‘আশ্বাস’ দিলেন, বিষয়টি অবশ্যই তিনি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।
অতঃপর রেসকোর্স হেলিপ্যাডে মমতার তরফে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে আকাশি নীল উত্তরীয় (যা সরকারের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে মমতা-সহ মন্ত্রীদের গলায় দেখা গিয়েছিল) প্রদান। এবং মনমোহনের পাল্টা সহাস্য মন্তব্য তিনি জানেন, আকাশি নীল মমতার প্রিয় রং। মমতার জবাব, আকাশ অসীম। তাই তাঁর প্রিয়। একটু বিরতি দিয়ে আবার বললেন, মনমোহনও তো আকাশি নীল পাগড়িই পরেন। তাঁরও নিশ্চয়ই প্রিয় রং ওটা।
তার আগেই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের আবেদনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর পাশের আসনে গিয়ে বসেছেন মুখ্যমন্ত্রী (ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, সৌজন্যের খাতিরেই তাঁর ওই সিদ্ধান্ত) সেখানে বসেই পেট্রোলের বর্ধিত মূল্য পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। মনমোহন আশ্বাস দিয়েছেন। |
তখনও অবশ্য মমতা জানতেন না, প্রধানমন্ত্রী দিল্লি ফেরার পর পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি মাত্র দু’টাকা করে কমবে। যা নিয়ে তিনি আবার ‘ক্ষুব্ধ’ হবেন। মঞ্চে মমতা জানিয়েছিলেন বাংলার জন্য সামগ্রিক উন্নয়নের দাবিও।
মমতার মূল দাবি অবশ্য রাজ্যের ঋণ শোধের উপরে তিন বছরের জন্য ‘মোরাটোরিয়াম’। তবে তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ দিন নির্দিষ্ট করে তাঁর কোনও কথা হয়নি বলেই মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি। কিন্তু তিনি কেন্দ্রের একাংশের অসহযোগিতার কথা স্পষ্ট করেই বলেছেন। ওই সূত্র আরও জানাচ্ছে, মমতা কেন্দ্রীয় সরকারের উপর এমনই নরমে-গরমে ‘চাপ’ বজায় রেখে যাবেন। প্রথম সারির এক তৃণমূল নেতার বক্তব্য, “কেন্দ্র তিন বছরের জন্য ঋণের সুদ ও আসল নেওয়া থেকে বিরত থাকে কি না, আপাতত সে দিকেই তাকিয়ে আমরা।”
বাজার থেকে নেওয়া দু’লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ঋণের বোঝা মেটাতে রাজ্যের কোষাগার থেকে ফি-বছর ২২ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। চলতি আর্থিক বছরে ঋণের আসল ও সুদ বাবদ কিস্তির টাকার পরিমাণ আরও বাড়বে। কেন্দ্রীয় সরকারে ‘বিশেষ প্যাকেজে’র মোড়কে রাজ্যকে সহায়তা করলেও মমতার মূল দাবি, আগামী তিন বছরের জন্য ওই আর্থিক দায় ‘মকুব’ করুক কেন্দ্র। |
রাজ্য অর্থ দফতরের বক্তব্য, কেন্দ্র ওই ‘ছাড়’ না-দিলে সংসারে কার্যত ‘তালা’ পড়ে যাবে। সরকারি কর্মীদের বেতন-পেনশনও গুরুতর সমস্যার মুখে পড়বে।
রাজ্য বাজেটে পরিকল্পনা খাতে যে অর্থ বরাদ্দ থাকে, তা কখনও অন্য খাতে ব্যয় করা যায় না। একই ভাবে বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার যে টাকা দেয় রাজ্যকে, তারও অন্যথা করা যায় না। সমস্যা পরিকল্পনা বহির্ভূত খরচ নিয়ে। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল সরকারি কর্মীদের বেতন, অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশন এবং ঋণের সুদ ও আসল বাবদ কিস্তির টাকা পরিশোধ করা। প্রতি বছর বেতন ও পেনশন দিতে রাজ্যের খরচ প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি, সরকারের দৈনন্দিন কাজ চালানোর ব্যয় বছরে কয়েকশো কোটি টাকা। তার উপর ঋণ পরিশোধের জন্য দরকার ২২ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে অঙ্কটা ৬০ হাজার কোটির কাছাকাছি। ফলে রাজ্য চালাতে প্রতি মাসে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের অন্তত ৫০০০ কোটি টাকার প্রয়োজন।
আর্থিক বছর শুরুর প্রথম দিকে রাজ্যের নিজস্ব রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কম। বর্ষাকালেও রাজস্ব আদায় বেশি হয় না। ফলে অর্থমন্ত্রী আর্থিক বছরের শুরু থেকেই বাজার থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছেন। এপ্রিল ও মে মাসে ঋণ নিয়েছেন ৫০০০ কোটি টাকা। চলতি মাসেও তাঁকে দেড় থেকে দু’হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে হবে বলে মনে করছে অর্থ দফতর। কিন্তু তাতেও অবস্থা সামলানো যাচ্ছে না। তাই ‘মোরাটোরিয়াম’ পেতে মরিয়া রাজ্য। |