স্নিগ্ধা নন্দীপতি। বয়ঃক্রম চৌদ্দো বৎসর। একটি আন্তর্জাতিক বানান প্রতিযোগিতায় বর্তমান বৎসরের বিজয়ী। স্নিগ্ধার পূর্বে পর পর চার বৎসর এই প্রতিযোগিতায় ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা বিজয়ী হইয়াছে। অতঃপর, গোটা দুনিয়ায় একটি বিশ্বাস তৈরি হওয়া সম্ভব যে ভারতীয়রা বানানে অতি পটু। বঙ্গজননীর সন্তানদের বানানের বহর সচরাচর এই দুর্ভাগা রাজ্যের সীমানা অতিক্রম করিতে পারে না, তাহাই রক্ষা। নচেৎ, বিশ্ববাসী সবিস্ময়ে বঙ্গবাসীর বানানপটুত্ব দেখিত। বাঙালির আক্ষরিক অর্থেই ণ-ত্ব, ষ-ত্ব জ্ঞান নাই। কেন শ, ষ এবং স থাকিবে; অথবা র, ড়, ঢ়; বা ণ এবং ন বাঙালি এই বাহুল্যের অর্থোদ্ধার করিতে পারে নাই। ফলে, তাহারা নিজের মতো বানান নির্মাণ করিয়া লহিয়াছে। পরা এবং পড়ার মধ্যে কী ফারাক, ম্যাগাজিন পাঠরত বঙ্গসন্তান তাহা জানে না। বহু জায়গাতেই লেখা থাকে, ‘জুতা খুলিয়া প্রবেশ করুণ’। ঘরের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা হইলেই হইল, ভাষার হাল যত ‘করুন’ই হউক না কেন। ‘অর্জন’ শুদ্ধ হইলেও ‘অর্পন’ কেন অশুদ্ধ, তাহার খবর কে রাখে? স্বয়ং বিদ্যাসাগর মহাশয়ও বাংলার এই ‘দুরাবস্থা’ দূর করিতে পারেন নাই। অবশ্য, বাংলায় দুর্বল (না কি, দূর্বল) হওয়া এখন কেতাদুরস্ত হওয়ার প্রথম ধাপ। না হইলে, মায়েরা আদুরে গলায় বলিবেন কী করিয়া, ‘আমার সোনা তো বাংলায় বিসোন উইক!’ |