সম্পাদকীয়...
অগ্রবর্তিনী
শ্চিমবঙ্গে ২০১০ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৪৯ শতাংশের কিছু বেশি। ২০১১’র মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্র ও ছাত্রীর সংখ্যা সমান হইয়াছিল। ২০১২ সালে পরীক্ষার্থিনীর সংখ্যা পরীক্ষার্থীর সংখ্যাকে অতিক্রম করিয়াছে। সর্বশিক্ষা অভিযান যে তাহার নানা ত্রুটি ও ব্যর্থতা সত্ত্বেও সমাজের অবহেলিতদের একটি বড় অংশকে প্রথাগত শিক্ষার সহিত যুক্ত করিতে পারিয়াছে, ইহা তাহারই ইঙ্গিত। অন্য দিকে, মেয়েদের পাশের হার ছেলেদের তুলনায় প্রায় দশ শতাংশ কম। এই পার্থক্য মেয়েদের পড়াশোনার প্রতি পরিবার তথা সমাজের অবহেলার প্রমাণ। অর্থাৎ স্কুল শিক্ষা সম্পূর্ণ করিবার সুযোগ মেয়েদের নাগালে আসিলেও, পড়াশোনায় যথেষ্ট ‘বিনিয়োগ’-এর সামর্থ্য তাহাদের নাই। সময় এক জরুরি বিনিয়োগ। পাঠাভ্যাসে যথেষ্ট সময় দেওয়া প্রয়োজন, কিন্তু মেয়েদের সময়ের উপরে তাহাদের পরিবারের দাবি সর্বাধিক। গৃহকর্ম, শিশুদের লালনপালন, কৃষিকাজ বা হস্তশিল্পের কাজে বড়দের সহায়তা করিয়া পরিবারের রোজগার বাড়ানো, এই সকলই মেয়েদের জন্য ‘স্বাভাবিক’ বলিয়া মনে করা হয়।
এই সব কাজে যে সময় এবং পরিশ্রমের প্রয়োজন, সেটি বালিকাটির পড়াশোনার সময় হইতে বাদ পড়িলে পরিবার বিশেষ বিচলিত হয় না। তৎসহ আছে বালিকাবিবাহের প্রথা। কয়েক দিন পরেই যাহাকে অন্য সংসারে পাঠানো হইবে, তাহার জন্য অর্থ বা শ্রম বিনিয়োগ করা পরিবারের নিকট অর্থহীন বলিয়া প্রতিপন্ন হইতে পারে। তাই পরিবারের পুত্রসন্তানটির বিদ্যালয়ের শেষ পরীক্ষার জন্য বাড়তি শিক্ষক, বাড়তি পুষ্টি বা প্রযত্নের ব্যবস্থা হইয়া থাকে, কন্যাটির জন্য তাহা নিষ্প্রয়োজন বিবেচিত হয়। তাই জীবনের দশ-বারোটি বৎসর পড়াশোনায় ব্যয় করিয়াও, পরীক্ষায় পাশ নম্বর তুলিবার মতো শিক্ষা লাভ হইয়া ওঠে না মেয়েদের।
সম্প্রতি সর্বভারতীয় কয়েকটি বোর্ডের পরীক্ষার ফলও বাহির হইয়াছে। অনেকগুলিতেই মেয়েরা প্রথম সারি অধিকার করিয়াছে। এ রাজ্যেও। ইহার সহিত মাধ্যমিকের ফলের তুলনা করিলে স্পষ্ট হয়, দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা দুই ভাবে অন্যায়ের শিকার। এক, তাহারা পুরুষ ছাত্রদের তুলনায় পিছাইয়া পড়িতেছে। দুই, দারিদ্রের কারণে উচ্চ বর্গের ছাত্রীদের তুলনায় নিম্ন বর্গের ছাত্রীরা পিছাইয়া পড়িতেছে। লিঙ্গবৈষম্য এবং শ্রেণিবৈষম্য নামক দুই প্রাচীন অন্যায়ই পরীক্ষার ফলে প্রতিফলিত। ইহা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার বৃহৎ পরাজয়। যে কোনও সমাজে বৈষম্য থাকে, কিন্তু উন্নত সমাজব্যবস্থায় শিক্ষাই বৈষম্য হইতে মুক্তির উপায়। যাহার মেধা আছে, পরিশ্রমের শক্তি আছে, শিক্ষা তাহার সম্মুখে উন্নতির পথ খুলিয়া দিবে। বিত্ত কিংবা বর্ণের কারণে সমাজে যে সকল অন্যায় ঘটিয়া থাকে, শিক্ষাকে তাহা স্পর্শ করিতে পারিবে না, সেখানে সকলের জন্য জয় করিবার সমান ক্ষেত্র থাকিবে, এমনই প্রত্যাশা। প্রতি বৎসরই জেলায় জেলায় মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা মেধা তালিকায় স্থান করিয়া প্রমাণ করিতেছে, সেই প্রত্যাশা অমূলক নহে। কিন্তু শিক্ষায় অসাম্য যে আজও প্রবল, তাহা দরিদ্র বালিকা-কিশোরীদের ব্যর্থতার উচ্চহার হইতে স্পষ্ট।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.