আন্দোলন করে কলকাতা বিমানবন্দর আধুনিকীকরণের দায়িত্ব ‘আদায়’ করেছিলেন যাঁরা, সেই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের (এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) কর্মীদেরই ‘শৃঙ্খলাপরায়ণ’ করতে এ বার কড়া নোটিস জারি হল। সম্প্রতি ওই নোটিসে কতৃর্র্পক্ষের তরফে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, কাজ ফেলে কেউ যত্রতত্র ঘুরে বেড়ালে তাঁর বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কলকাতায় নতুন টার্মিনাল চালু হওয়ার দিন যত এগিয়ে আসছে, তত চাপ বাড়ছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের উপরে। চাপ মূলত এক শ্রেণির কর্মী-অফিসারকে নিয়ে। কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, বিশ্বমানের বিমানবন্দর চালাতে গেলে এঁদের দীর্ঘলালিত ‘সরকারি চাকরি’র কর্মসংস্কৃতি ছেড়ে বেরোতে হবে। বস্তুত ওই ‘সরকারি’ চাকরি করা কর্মীদের পক্ষে নতুন টার্মিনাল সাফসুতরো রাখা সম্ভব নয়, কর্তারা তা ইতিমধ্যেই বুঝেছেন। তাই সে দায়িত্ব বেসরকারি হাতে দেওয়া হচ্ছে। আর এক ধাপ এগিয়ে এ বার কর্মীদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনতে নোটিস জারি করেছেন কর্তৃপক্ষ। ঠিক কী বলা হয়েছে তাতে?
নোটিসের বক্তব্য, ‘দেখা যাচ্ছে, এক শ্রেণির কর্মী নিজের দফতর ছেড়ে অন্য দফতর বা ইউনিয়ন অফিসে ঘোরাফেরা করছেন, যেখানে তাঁদের তেমন কোনও প্রয়োজন নেই। অথচ কাজের সময় ডাকলে ওঁদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগ, এঁরা অন্যত্র যাওয়ার আগে নিজের দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের অনুমতিও নিচ্ছেন না। এখন থেকে কারও বিরুদ্ধে এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” আচমকা এমন নোটিস?
কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মার ব্যাখ্যা, “নতুন টার্মিনাল হলে দায়িত্ব বাড়বে। বাড়তি কাজ আমাদের কর্মীদেরই করতে হবে। ওঁদের তখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী-অফিসারদের মতোই পেশাদার হতে হবে। তাই এখনই ওঁদের সতর্ক করা হচ্ছে।” কাজের সময়ে বিনা অনুমতিতে অন্যত্র যাওয়ার অভিযোগে ইতিমধ্যে কয়েক জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের অধিকর্তা।
কিন্তু এই ‘অসুখ’ তো নতুন নয়! কর্তৃপক্ষ এত দিন কী করছিলেন?
বিমানবন্দর-সূত্রে বলা হচ্ছে, ইউনিয়নের বিরোধিতার আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ এ যাবৎ বিষয়টি নিয়ে সে ভাবে সক্রিয় হতে পারেননি। কর্তাদের একাংশের মতে, বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে তিন দিন কলকাতা বিমানবন্দর কার্যত অচল করে দিয়েছিল যারা, বাম-ঘেঁষা সেই ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যাওয়াটা এত দিন কর্তৃপক্ষের পক্ষে কঠিন ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে সেই ইউনিয়নের ক্ষমতা যেমন কমেছে, তেমন তার নেতারাও এখন ‘সুস্থ কর্মসংস্কৃতি’র প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেছেন। তাই এখন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের একটি মহলের দাবি। সংশ্লিষ্ট কর্মী ইউনিয়নের নেতা দীপঙ্কর ঘোষ বলছেন, “কর্মীদের একাংশকে আমরাও বোঝাতে পারছি না। তাঁরা নিয়মিত কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন। এ বার শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কারও বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নিলে আমরা তা সমর্থনই করব।”
পাশাপাশি বিমানবন্দরে এখন তৃণমূল-ঘেঁষা ইউনিয়নও তৈরি হয়েছে। তার কিছু সদস্যের বিরুদ্ধেও রয়েছে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ। তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী দোলা সেনও জানাচ্ছেন, “শ্রমিকদের স্বার্থ আমরা দেখব। তবে কেউ কাজ না-করে ঘুরে বেড়িয়ে ইউনিয়নের আড়ালে থেকে পার পেয়ে যাবেন, এটা বরদাস্ত করা হবে না। কাজ তাঁকে করতেই হবে। তার পরে ইউনিয়ন করুন না!”
অর্থাৎ, যাঁদের ছত্রচ্ছায়ায় বিমানবন্দরে ‘সরকারি কর্মসংস্কৃতি’র চেনা ছবিটা তৈরি হয়েছিল, তাঁরাই এখন ‘ফাঁকিবাজ’ কর্মীদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। সাহস পেয়ে ওঁদের চেপে ধরেছেন কর্তৃপক্ষও। |