বর্ধমান-কাটোয়া রেললাইন ন্যারো গেজ থেকে ব্রডগেজে রূপান্তরের কাজ শেষ করার জন্য এনটিপিসি-র কাছে টাকা চাইলেন রেল কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে বর্ধমান থেকে বলগোনা পর্যন্ত লাইন ব্রডগেজ করার কাজ হয়ে গিয়েছে। বাকি রয়েছে বলগোনা-কাটোয়া লাইনের কাজ। এনটিপিসি-র তরফে জানানো হয়, টাকা দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এনটিপিসি সূত্রে জানা যায়, কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পকে সামনে রেখে রেল মন্ত্রক বর্ধমান-কাটোয়া ন্যারোগেজ লাইন ব্রডগেজ করতে রাজি হয়। তখন ওই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার কাজে নিযুক্ত ছিল পিডিসিএল। ২০০৬ সালে রেল কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য সরকার যৌথ ভাবে এই কাজের খরচ বহন করবে বলে চুক্তিবদ্ধ হয়। দু’পক্ষই ৫০ শতাংশ করে টাকা দেবে বলে জানা যায়। পরে পিডিসিএলের থেকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার ভার যায় এনটিপিসি-র হাতে। বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে এই লাইন দিয়েই মালগাড়িতে করে কয়লা আনা হবে।
২০০৭-এ তৎকালীন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব কাটোয়ায় এসে বর্ধমান-কাটোয়া রেললাইন ব্রডগেজে রূপান্তরের কাজের শিলান্যাস করেছিলেন। রাজ্য সরকার তখন রেল কর্তৃপক্ষকে ১০ কোটি টাকা দেয়। গত বিধানসভা ভোটের আগে বর্ধমানে প্রকল্পের সূচনা করে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, শীঘ্রই এই লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে।
এই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক ভাবে ২৪৫ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ৫৩ কিলোমিটার এই রেলপথের মধ্যে বর্ধমান-বলগোনা ২৬ কিলোমিটার ইতিমধ্যে ব্রডগেজ হয়েছে। বেশ কয়েক মাস আগে বৈদুতিকরণের কাজও হয়ে গিয়েছে। এখন লাইন পরীক্ষার কাজ চলছে। কাটোয়া থেকে বলগোনা পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার রেললাইন ব্রডগেজ করার জন্য প্রাথমিক ভাবে এনটিপিসি-র কাছে ১১২ কোটি টাকা দাবি করে চিঠি পাঠিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
বর্ধমান থেকে বলগোনা কোনও ট্রেন চলাচল করে না। তবে কাটোয়া-বলগোনা লাইনে এখনও প্রতি দিন চার জোড়া ছোট রেল চলাচল করে। এই ২৭ কিলোমিটার রাস্তা যেতেই ওই ট্রেনের প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। কোনও স্টেশনেই প্ল্যাটফর্ম বলে কিছু নেই। বলগোনায় ঝাঁ চকচকে স্টেশন তৈরি হয়েছে। বসছে ব্রডগেজ লাইন। তার পাশেই রয়েছে ন্যারোগেজ লাইন। ছোট রেলের যাত্রীদের অবশ্য ট্রেন থেকে ঝকঝকে স্টেশনে নয়, মাটিতেই নামতে হয়। কাটোয়া থেকে শ্রীখণ্ড, নিগন থেকে বলগোনা, সব এলাকার বাসিন্দাদেরই দাবি, যত শীঘ্র সম্ভব ব্রডগেজ লাইনের কাজ শেষ করা হোক।
মঙ্গলকোটের সিপিএম বিধায়ক শাহাজাহান চৌধুরীর কথায়, “এই লাইনের কাজ দ্রুত শেষ করার আবেদন জানিয়ে রেল থেকে রাজ্য প্রশাসন, বিভিন্ন জায়গায় চিঠি পাঠিয়েছি। বিধানসভাতেও দাবি জানিয়েছি।” কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “২০১২ সালের মার্চের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অর্ধেক কাজ হয়ে পড়ে রয়েছে। বাকি কাজ কবে হবে, কে জানে!” তৃণমূলের জেলা নেতারা অবশ্য এ প্রসঙ্গে কোনও কথা বলতে চাননি।
এই প্রকল্পের খরচ সংক্রান্ত চুক্তির বিষয়টি নিয়ে রেলের সঙ্গে এনটিপিসি-র ইতিমধ্যে কয়েক বার বৈঠক হয়েছে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সমীর গোস্বামীর আশ্বাস, “শীঘ্রই বলগোনা-কাটোয়া লাইন ব্রডগেজ করার কাজ শুরু হবে।” এনটিপিসি-র কাটোয়া প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার রামানুজ মিশ্র বলেন, “বর্ধমান-কাটোয়া লাইন ব্রডগেজ করার কাজ শেষ করতে রেল কর্তৃপক্ষ টাকা দাবি করে চিঠি পাঠিয়েছেন। আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।” |