|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
‘তাহলে তোমার সুমতি হয়েছে!’ |
বিশ্বনাথ মাজী তাঁর সম্পাদিত প্রজ্ঞার আলো/জ্যোতিভূষণ ভট্টাচার্য স্মরণগ্রন্থ-এর (রেডিয়্যান্স, ১৭৫.০০) শুরুতেই জ্যোতিবাবু সম্পর্কে জানিয়েছেন ‘লেখনী দক্ষতার সৌকর্যে ও ভাবনা প্রকাশের গুণে তিনি সর্বদাই আমাদের জন্য নিত্য নতুন “বোধিভুবন” তৈরি করে দিতেন।’ জ্যোতিবাবুর প্রবন্ধ, অনুবাদ, তাৎক্ষণিক চিন্তা, সাক্ষাৎকার, জীবনপঞ্জি-র সমাহার এই স্মরণগ্রন্থটি। সঙ্গে তাঁর লেখা গ্রন্থাদিরও মূল্যায়ন। তাঁকে নিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রচনার একটিতে অশোক মিত্রের জ্যোতিবাবু সম্পর্কে মন্তব্য: ‘বিদ্বান, বিদগ্ধ অথচ স্বল্পবাক্। রাজনীতির বাইরে সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস ইত্যাদি নানা অলিন্দে তিনি বিহার করে ফেরেন। সুন্দর সুচারু ব্যবহার, তাঁর মতো ব্যক্তির উপস্থিতি বাম আন্দোলনের মর্যাদা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল।’ সুকুমারী ভট্টাচার্য লিখেছেন ‘জ্যোতি... সর্বদাই চাইত একটি বিতর্কের থেকে উভয়পক্ষই যেন কিছু জ্ঞান আহরণ করে।’ ‘দীর্ঘদিন ধরে নিরলস রবীন্দ্রচর্চা করে চলেছেন নিত্যপ্রিয় ঘোষ। তার বাইরেও তাঁর লেখালেখি ইংরেজি-বাংলা দুই ভাষাতেই রয়েছে, তারও পরিমাণ কম নয়। অধ্যাপনাকে তিনি পেশা করেননি, অধ্যয়ন তাঁর নিজের আনন্দেই।’ ভূমিকায় লিখেছেন সুতপা ভট্টাচার্য, নিত্যপ্রিয় ঘোষ-সম্মাননা গ্রন্থ নির্জনসজনে নিত্যপ্রিয় (একুশ শতক, ২৫০.০০) সম্পাদনার সূত্রে। গ্রন্থটির প্রথম অংশের প্রবন্ধাদিতে বিশিষ্ট ভাবুকদের বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তার প্রকাশ। বেশ কিছু নিবন্ধ নিত্যপ্রিয়কে নিয়েই, যেমন একটিতে সুধীর চক্রবর্তী লিখছেন ‘আসলে সে নিবিড় রবীন্দ্র-অনুরাগী কিন্তু অর্জুন যেমন ভীষ্মকে পায়ের কাছে অস্ত্র নিক্ষেপ করে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, নিত্য-র রকমটা তেমনই।’ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রচনা আছে নিত্যপ্রিয় ঘোষের, সঙ্গে তাঁর প্রণীত ও সম্পাদিত গ্রন্থাদির পরিচয়। ‘এক না-গবেষকের না-গল্প’ রচনাটিতে লিখছেন নিত্যপ্রিয়: ‘আমার পিসেশ্বশুর একবার বলেছেন হ্যাঁ হে, তুমি তো বইটই লেখো শুনেছি, কখনও তো পড়াও না। তাঁকে একটা বই দিয়ে এসেছিলাম। পরের বার যেতে গম্ভীরভাবে বইটা ফেরত দিয়ে বললেন, পড়িনি, পড়তে গিয়েছিলাম, কিন্তু তুমি রবীন্দ্রনাথের নিন্দে করলে!... সেই পিসেমশাই আবার একদিন বললেন, ওহে তুমি নাকি কাদম্বরী-রবীন্দ্রনাথ নিয়ে যারা কুৎসিৎ কথা বলে তাদের উপর একহাত নিয়েছ তাহলে তোমার সুমতি হয়েছে!’
প্রয়াত ঋতু গুহকে নিয়ে এ বারে বিশেষ সংখ্যা অন্য প্রমা-র (সম্পা: কল্যাণ মজুমদার, ৭৫.০০)। তাতে তাঁর রেকর্ড-ক্যাসেটের তালিকা, জীবনরেখা, সঙ্গে নিজের দু’টি লেখা। একটি আত্মস্মৃতি, অন্যটি রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে: ‘শৈলজাদা গান শেখাতেন এস্রাজের মাধ্যমে, গানে মিড়ের প্রয়োগ কতটা, টপ্পার গানে টপ্পার দানা কতটুকু, গলা কাঁপানো নয়, সেটা ওদের কাছে শিখতে হত। পরিষ্কার উচ্চারণ, কথার মাঝে দম না নেওয়া এই সব কিছু শিখে তবেই গাইতে হবে।’ তাঁকে নিয়ে লিখেছেন বিশিষ্ট জনেরা, যেমন সুভাষ চৌধুরী: ‘রবীন্দ্রসংগীতেরই শিল্পী ছিলেন তিনি, কিন্তু আমি তাঁকে দিয়ে যে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান এবং ব্রহ্মসংগীত রেকর্ডে গাইয়েছিলাম তা তুলনাহীন। আমি নিজে পরবর্তীকালে চেষ্টা করে দেখেছি আর কাউকে দিয়ে সেই ফল পাইনি।’
মহাশ্বেতা দেবীর বাহান্ন বছর আগে লেখা দুষ্প্রাপ্য ও অগ্রন্থিত একটি উপন্যাস ‘আকাশ-ছোঁয়া’ পুনরায় প্রকাশ পেল গল্পসরণি-তে (সম্পা: অমর দে, ২০০.০০)। শুভাপ্রসন্নর প্রচ্ছদ সংবলিত এটি ‘মহাশ্বেতা দেবী বিশেষ সংখ্যা’। এতে তাঁর ‘নিজের কথা’, জীবনপঞ্জি, গ্রন্থপঞ্জি সবই রয়েছে, তাঁর সম্পর্কে এক বিস্তারিত ধারণা পাবেন পাঠক সংখ্যাটি থেকে। শুভাপ্রসন্নর মতো শিল্পী ছাড়াও তাঁকে নিয়ে লিখেছেন অমর মিত্র স্বপ্নময় চক্রবর্তীর মতো সাহিত্যিক, কিংবা সুধাংশু দে’র মতো প্রকাশক। আর ‘অ্যাক্টিভিস্ট মহাশ্বেতা’কে নিয়ে শ্যামলী খাস্তগীর তাঁর আকস্মিক প্রয়াণের মাস দু’য়েক আগে বলেছিলেন ‘শান্তিনিকেতনের পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে... প্রতিবাদ আন্দোলনে মহাশ্বেতাদির যথেষ্ট ভূমিকা আছে। বিশেষ করে শান্তিনিকেতন ও এই অঞ্চলের আদিবাসীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে মহাশ্বেতাদি সজাগ ছিলেন।’ গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক ও নবীন কিশোরের নেওয়া দু’টি সাক্ষাৎকারের অনুবাদও সংকলিত হয়েছে। আর রয়েছে তাঁর সাহিত্য নিয়ে একগুচ্ছ আলোচনা ‘মহাশ্বেতাচর্চা’।
রবীন্দ্রনাথের দিদি সৌদামিনী দেবীর পিতৃস্মৃতি ও অন্যান্য রচনা (সংকলন ও সম্পা: সুতপা ভট্টাচার্য অভিজিৎ সেন। দে’জ এবং স্কুল অব উইমেন্স্ স্টাডিজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, ৬০.০০) প্রকাশ পেল। শুরুতেই তাঁর সম্পর্কে সুতপা জানিয়েছেন ‘দেবেন্দ্রনাথের ব্রাহ্ম-উপাসনারীতি পালন করেছেন তিনি চিরজীবন, কিন্তু হিন্দু, মুসলমান কিংবা খৃষ্টানধর্ম সম্বন্ধে তাঁর শ্রদ্ধা এবং আগ্রহ ছিল যথেষ্ট।’ |
|
|
|
|
|