|
|
|
|
|
|
|
নাটক সমালোচনা... |
|
আনন্দীর জীবন রহস্য |
এক অন্য মাত্রা পেল শেখর সমাদ্দারের নির্দেশনায়। লিখছেন বিপ্লবকুমার ঘোষ |
আনন্দী নাটকটি সবুজপত্রে ছাপা হয়েছিল আষাঢ় ১৩২১-এ। তখন রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে। রবীন্দ্রনাথ কোনও দিনই কোনও নির্দিষ্ট ধর্মে বিশ্বাস করেননি। কিন্তু যে ধর্মাচরণে আছে বিশ্বপ্রেমের বাণী, সেই ধর্মই তাঁর প্রিয় ছিল। শেখর সমাদ্দারের এই নাটকে সেই সময়ের বৈষ্ণব এবং সকল ধর্মকে এক বিশ্বাসের তীর্থক্ষেত্রে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বলা যায়, এই নাটকে আনন্দী বোষ্টমী এবং কবির আনন্দরূপের সন্ধান প্রায় একই সঙ্গে। আভাষের প্রযোজনা ও নির্দেশনায় শেখর সমাদ্দার পুরোপুরি সাফল্যের দাবি করতে পারেন।
সম্প্রতি নাটকটি চিরাচরিত কাহিনির বাইরে এক আনন্দরূপের সন্ধান। ১৮৮৯-১৮৯৫-এ শিলাইদহে থাকাকালীন কবির সঙ্গে দেখা করতে আসত এক বৈষ্ণবী। সে কবিকে গৌর বলে ডাকত এবং নানা ভক্তিতত্ত্ব শোনাত। এ কথা কবি নিজেই ‘যাত্রীর চিঠি’তে (১১ ফেব্রুয়ারী, ১৯২৫) ক্রাকোভিয়া জাহাজে বসে লিখেছেন। বোষ্টমীর ইতিহাস তাঁর জীবনের কি না তা অবশ্য কেউ জানে না। এই সময়েই তাঁর আর এক প্রাপ্তি গগন হরকরার সান্নিধ্য। |
|
শেখর সমাদ্দার সেই বোষ্টমীকে দেখিয়েছেন একটু অন্য ভাবে। তিনি থাকেন পাটবাড়ির বাবাজী বৃন্দাবন দাসের আশ্রয়ে। বৈষ্ণবের আচার সে পালন করে না। এই আখড়া নিত্যানন্দ প্রভুর অনুগামী হলেও অদ্বৈতবাদী নয়। সেই আখড়ায় আনন্দী শোনায় এক দুখীর ঈশ্বরসাধনার গল্প। ঠাকুরের রথ তার দুয়ারে আসে ফুলের রূপ ধরে।
এখানে এক লেখককে দেখানো হয়েছে যিনি প্রায়ই শহর ছেড়ে চলে যান নির্জন প্রকৃতির অজ্ঞাতবাসে। কেবলমাত্র অরূপের সাধনায় নয়, নির্জনে নিয়ত আক্রান্ত তার ক্ষুব্ধ সত্তার বিশ্রামের খোঁজে আত্মসাধনায় মগ্ন হতে। ঘটনা থেকে ঘটনা এক পালার আসরে আনন্দী কখন যেন হয়ে ওঠে লেখকের চরিত্রে এক পূর্ণ নারী। শেষ পর্যন্ত ভালবাসাই যে সব সাধনার শেষ কথা এই কথাটিই আরও বেশি প্রযোজ্য হয়ে ওঠে এই নাটকে। নাটকের চরিত্র বিশ্লেষণ এবং অভিনয়ে প্রত্যেক কলাকুশলী হয়ে ওঠেন জীবন্ত চরিত্র। আর আছে পালাগান কীর্তন।
আনন্দী (বড়) ঋতুপর্ণা বাগচি দেখিয়েছেন এই কঠিন চরিত্রেও নিজেকে কী ভাবে তুলে ধরতে হয়। লেখকের চরিত্রে শেখর সমাদ্দার নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। বোষ্টমীর সঙ্গে তার আলাপের পরিচয় পর্বগুলি বা যে মুহূর্তে নারীর কামনা-বাসনা আর বঞ্চনা তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছিল সেই দৃশ্যগুলিতে শেখর অসামান্য, অনবদ্য। আনন্দীর (ছোট) চরিত্রে সংঘমিত্রা চক্রবর্তী, বৃন্দাবন দাসের চরিত্রে অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় সুন্দর। দামিনী চরিত্রে অমৃতা দাস, শচীশের চরিত্রে দেবজিৎ সোম মন্দ নয়। তবে নাটকের প্রাপ্তি বাউলের গানে সুপ্রিয় হরির কণ্ঠ।
এই নাটক শুরুর প্রাক্ মুহূর্তে মঞ্চে
অতিথি আসনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা অনুপ মতিলাল। |
|
|
|
|
|