সঙ্গীত সমালোচনা...
লোকগানের নাইয়া
ম্প্রতি আইসিসিআর মঞ্চে ‘উজানিয়া’ পরিবেশন করল লোকসঙ্গীত সন্ধ্যা ‘লোকগানের নাইয়া’। নির্মলেন্দু চৌধুরীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয়েছিল এই অনুষ্ঠান।
শুরুতেই বরণ করা হয় উত্তরা চৌধুরী ও গীতা চৌধুরীকে। লোকসঙ্গীতের প্রতি অসামান্য অবদানের জন্য গীতা চৌধুরীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এর পর অত্যন্ত সহজ ও স্বাভাবিক ভঙ্গিতে উজানিয়ার সদস্যরা টানা আড়াই ঘণ্টা বয়ে চললেন সুরের স্রোত ধরে।
শিল্পীদের সঙ্গে কণ্ঠ মেলালেন উপস্থিত শ্রোতারাও। পরিবেশনার মূল শিল্পী নাজমুল গাইলেন নির্মলেন্দুর কুড়িটি স্মরণীয় গান।
অবশ্য প্রথম গানটি ছিল নির্মলেন্দু-বন্দনা। তাঁদের নিজস্ব নিবেদন ‘যাঁর প্রেরণায় গাইছি আমরা রাঙা মাটির পথ ধরি’। তারপর শিল্পী একে একে গাইলেন ‘সাগরকূলের নাইয়া’, ‘লোকে বলে বলে রে’, ‘নাইয়ারে চাপাও নৌকা’, ‘ঘাটে কেউ ছিল না’, ‘ও রসের কালিয়া’,
‘ভালো কইরা বাজাও গো দোতারা’, ‘দোহাই আল্লা মাথা খাও’, ‘সোহাগ চাঁদ বদনী’।
অনেক দিন পরে শোনা গেল ‘আকাশের বিজলি হানা, বুক হল মোর হানাফানা, বুকের কাপড় উড়িয়া গেল রে’ গানটি। এক সময়ে এই গানটি নিয়ে অশ্লীলতার অভিযোগ তুলেছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এই লোকগানটি বরং আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গ্রামবাংলার মানুষের কাছে।
গানের মাঝে মাঝেই ছিল ভাষ্য পাঠ। বাংলাদেশের অজ পাড়া গাঁ থেকে কলকাতার মানুষকে গান শোনাতে এসেছিলেন নির্মলেন্দু। কিন্তু তিনি কী ভাবে জয় করে নিয়েছিলেন মানুষের মন? সেই সব নানা অজ্ঞাত কাহিনি শ্রোতাদের শোনালেন নির্মলেন্দুর গুণগ্রাহীরা ।
নাজমুলের সহায়ক শিল্পীদের অনবদ্য সহযোগিতা ও যন্ত্রশিল্পীদের সুবিন্যস্ত অবদান অনুষ্ঠানটিকে প্রাণবন্ত ও উপভোগ্য করে তুলেছে। বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে তবলা, ঢোল, বাঁশি, কী বোর্ড, দোতারা, গিটার নজর কেড়েছে। নাজমুলের সঙ্গে কণ্ঠ সহযোগিতায় ছিলেন তুহিনা দেব, আমিনুল হক, রীতা বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দনা ঘোষ, রানা ও মালবিকা।

এক আঁধারে দুই আলো
সুর ও সাধনার একটি উপস্থাপনা ‘এক আঁধারে দুই আলো’ সম্প্রতি দেখা গেল মধুসূদন মঞ্চে। প্রথম পর্বে আবৃত্তি নিবেদন করলেন বাচিক শিল্পী ঈশিতা দাস অধিকারী। দ্বিতীয় পর্বে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশনায় ছিলেন কিংশুক রায়। কয়েকটি ছোট ছোট পর্বে বিন্যস্ত করে ঈশিতার কখনও একক, কখনও সহযোগী শিল্পীদের নিয়ে উপস্থাপনা দীর্ঘ ও নিরলস আবৃত্তি চর্চার প্রমাণ দেয়। পর্বগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রবীন্দ্রকবিতা ‘ছড়ার ছন্দ’ ও ‘নারী’। এ ছাড়াও ভাল লাগে ‘শিকড়’, ‘জেলের চিঠি মাকে’। কবি মল্লিকা সেনগুপ্তের রচনা অবলম্বনে এক ভোটার নারীর বারোমাস্যা শিল্পীর আবৃত্তিতে ও সহযোগী নৃত্যশিল্পীদের উপস্থাপনায় অত্যন্ত উপভোগ্য হয়েছিল। সহযোগী আবৃত্তিশিল্পীদের সঙ্গে ঈশিতার উপস্থাপনায় কিছুটা সাযুজ্যের অভাব ঘটেছে মাঝে মাঝে। ‘হোরিখেলা’ কবিতার উচ্চারণে সুরের আধিক্য গল্পরসকে ক্ষুণ্ণ করেছে। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল কিংশুক রায়ের রবীন্দ্রসঙ্গীত। শিল্পীর কণ্ঠে ‘আমি হেথায় থাকি শুধু’, ‘তাই তোমার আনন্দ আমার পর’ সুগীত। কোনও নির্দিষ্ট বিষয়-ভাবনা না থাকায় প্রতিটি গানের পরেই কিছুটা গ্রন্থনা (গ্রন্থনায় মনীষা ভট্টাচার্য) কখনও কখনও অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে।
এ দিন অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট অতিথি শ্যামলকুমার সেন, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন চন্দ্রমৌলি বন্দ্যোপাধ্যায়, বৃষ্টি রায় এবং শ্রীমন্তী দাশগুপ্ত।

হয়তো তোমারই জন্য
মান্না দে’র সুরে সবচেয়ে বেশি বাংলা গান গেয়েছেন হৈমন্তী শুক্ল। মান্নার জন্মদিনে হৈমন্তী তো ছিলেনই, আরও ছিলেন পল্লব ঘোষ।
‘সুখের দিনগুলি দূরে চলে যায়’, ‘এত সুখ কেন চলে চলে যায়’, ‘কেন নয়নে আবির ছড়ালে’ মান্না-হৈমন্তী জুটির এক একটা গান বাংলা গানে মাইলফলক। হৈমন্তীর গলায় গানগুলি অন্য প্রাণ পেল । কলাকুঞ্জে এই সন্ধ্যায়ও তার প্রমাণ মিলেছে। বহুশ্রুত ‘আমার বলার কিছু ছিল না’ তো গাইতেই হয়েছে। শ্রোতাদের আক্ষেপ, হৈমন্তীর জন্য সময় বেশি ছিল না বলে। শুধু তাঁর গলায় একটি চমৎকার সন্ধ্যা তৈরি হতে পারত।
পল্লব ঘোষ মান্নার পরিচিত তিনটি গানই শোনান। ‘খুব জানতে ইচ্ছে করে’, ‘যখন কেউ আমাকে’, ‘হয়তো তোমারই জন্য’। অনুষ্ঠানে গান শোনান সুরকার দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় ও জ্যোতিপ্রকাশ চট্টোপাধ্যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দীপঙ্করের ‘জবাব চেও না এই প্রশ্নের’। শুরুতে মান্না দে সঙ্গীত অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় মান্নার প্রিয় দুই বিশিষ্ট সুরকার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায়কে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.