পরামশর্দাতা না মেলার দাবি
পিপিপি মডেলে হাসপাতাল গড়ার কাজ বন্ধ রাজ্যে
রামর্শদাতা হিসেবে কোনও সংস্থাই নিজেদের নাম নথিভূক্ত না করায় পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) রাজ্যে সুপার স্পেশ্যালিটি ও মাল্টি-স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ার প্রস্তাব অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। ফলে, কলকাতার হাসপাতালগুলিতে জেলা থেকে আসা রোগীর চাপ কমানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর পরিকল্পিত দাওয়াই আপাতত কার্যকর হচ্ছে না।
ক্ষমতায় এসে রাজ্যের বিভিন্ন শহর ও জেলায় পিপিপি মডেলে মাল্টি-স্পেশ্যালিটি ও সুপার স্পেশালিটি (সর্বোচ্চ পরিকাঠামোযুক্ত) হাসপাতাল গড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার হাসপাতালগুলিতে রোগীর বিপুল চাপ কমাতেই এই পরিকল্পনা নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রস্তাবিত প্রকল্পে বলা হয়েছিল, রাজ্য সরকার জমি দেবে। হাসপাতাল তৈরি করে চালাবে কোনও বেসরকারি সংস্থা। মাল্টি-স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হবে ২৫০-৩০০ শয্যার। সুপার স্পেশ্যালিটি ৫০ শয্যার। প্রাথমিক ভাবে এই প্রকল্পের জন্য ৬টি জায়গাও বাছা হয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, এর মধ্যে যে কোনও ৫টি জায়গায় প্রথম দফায় এই হাসপাতালগুলি হবে। পাঁচটির মধ্যে একটিকে আবার মেডিক্যাল কলেজে উন্নীত করা হবে। কিন্তু পরিকল্পনামতো কাজ না এগোনোয় হাসপাতালের ফাইল আপাতত আলমারিতে তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
কিন্তু কেন মুখ্যমন্ত্রীর ওই সাধের প্রকল্পকে হঠাৎ ঠাণ্ডা ঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন স্বাস্থ্য-কর্তারা?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে ওই সব হাসপাতাল তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশন-কে। ঠিক হয়েছিল, মেডিক্যাল কর্পোরেশন ও পিপিপি মডেলের জন্য নির্বাচিত বেসরকারি সংস্থার মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে তৃতীয় কোনও বেসরকারি সংস্থাকে পরামর্শদাতা সংস্থা হিসাবে নিয়োগ করা হবে। তারা প্রস্তাবিত হাসপাতালের জায়গা ঘুরে দেখবে, প্রযুক্তিগত, আর্থিক, আইনি পরামর্শও দেবে ও সঠিক সময়ে যাতে কাজ শেষ হয়, তা নজরদারি করবে।
ওই পরামর্শদাতা সংস্থা চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। প্রথমে ১৬ মে আবেদনপত্রের শেষ দিন ঠিক হয়েছিল। তারপর তা বাড়িয়ে ৩০ মে করা হয়। তা সত্ত্বেও কোনও সংস্থাও সেই কাজের জন্য আবেদন করেনি। কোনও সংস্থা পাওয়া যাবে না আন্দাজ করে এরই মধ্যে ২৩ মে মেডিক্যাল কর্পোরেশন তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়ে দেয়, অনিবার্য কারণে প্রক্রিয়া স্থগিত করা হল।
কেন ৩০ মে পর্যন্ত কোনও সংস্থা আবেদন করছে কি না, তা না দেখেই প্রক্রিয়া স্থগিত করা হল? মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পুনীত যাদব এ ব্যাপারে বলেন, “কোনও কোনও হাসপাতালের জায়গা নিয়ে একমত হওয়া যাচ্ছে না। তাই সুপার স্পেশ্যালিটি ও মাল্টি-স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ার প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।” পুনীতের অভিযোগ, বিভিন্ন বৈঠকে উৎসাহী বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। কিন্তু পরে তারা আর কেউ আবেদন করেননি। যদিও সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।
কেন কথা বলেও পরে উৎসাহ হারিয়ে ফেলল বেসরকারি সংস্থাগুলি? স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে বৈঠক করা দুটি সংস্থার তরফে রজতশুভ্র রায় এবং সুমেধা সেন বলেন, “আমরা তো রাজিই ছিলাম। স্বাস্থ্য দফতরই মাঝপথে জানাল, তারা প্রকল্প স্থগিত রাখছে। তাই আমরা আর আবেদনপত্র পাঠালাম না।”
স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে পিপিপি মডেল চালু হয়েছিল বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে। জেলা হাসপাতাল স্তরে সিটি স্ক্যান-আল্ট্রাসনোগ্রাফি সেন্টার, প্যাথলজিক্যাল সেন্টার চালু করা হয়েছিল বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে। ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্তরেও প্রায় ৪৫টি ডায়গনস্টিক ক্লিনিক (এর মধ্যে হুগলি জেলায় অনেকগুলি ক্লিনিক ছিল) এই মডেলে চালু হয়েছিল। সেই ব্যবস্থা কিন্তু এখনও চলেছে। তবে আমরি, কেপিসি-র মতো কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে রাজ্য সরকার বামফ্রন্ট আমলে যে চুক্তি করেছিল তা-ও যথাযথ ভাবে কাজ করেনি। পিপিপি মডেলে মেয়ো হাসপাতাল চালুর চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। এ বার নতুন সরকারও পিপিপি মডেলে স্বাস্থ্য পরিষেবার স্বাস্থ্য উদ্ধার করতে গিয়ে প্রথম রাউন্ডেই হোঁচট খেল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.