বহরমপুরে নতুন পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র (পিএসকে) চালু হয়েছে এ মাসেই। সেখান থেকে দিনে অন্তত দু’শো পাসপোর্ট দেওয়া যেতে পারে। কলকাতার পাসপোর্ট অফিসে চাপ কমাতে এটাই এখন কর্তৃপক্ষের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছে।
গোড়ায় ঠিক হয়েছিল, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বীরভূম, নদিয়া, ও দুই দিনাজপুরের লোক বহরমপুর কেন্দ্র থেকে পাসপোর্ট পাবেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ওই ছ’টি জেলা মিলিয়ে পাসপোর্টের চাহিদা তুলনায় কম। তাই ব্যবস্থা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের যে কোনও প্রান্তের মানুষ (এমনকী কলকাতার লোকও) চাইলে বহরমপুরের সেবা কেন্দ্রে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এর পরেও অবশ্য বহরমপুরের পাসপোর্ট জোগান ক্ষমতা সবটা কাজে লাগছে না। সেখান থেকে এখন দিনে গড়ে ১৬০-১৭০টি পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। তবে দেশের মুখ্য পাসপোর্ট অফিসার এম কে পরদেশি বুধবার দিল্লি থেকে ফোনে বলেন, বহরমপুর কেন্দ্রের সুবাদে কলকাতার পাসপোর্ট অফিসের উপরে ‘অত্যধিক’ চাপ কমানো যাবে বলে তাঁরা আশাবাদী।
বস্তুত এক দিনে যত পাসপোর্ট বানানো সম্ভব, কলকাতায় চাহিদা তার ২০%-৩০% বেশি। কলকাতা থেকে এখন দিনে প্রায় ১২০০ পাসপোর্ট দেওয়া হয়। আবেদনপত্র জমা পড়ে রোজ গড়ে হাজার দেড়েক। পরদেশির কথায়, “দেশের অন্যত্র যেখানে পিএসকে মারফত অনলাইনে পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে, সেখানে অসুবিধে হচ্ছে না। হচ্ছে শুধু কলকাতাতেই। কারণ, এখানে পাসপোর্টের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।”
চাহিদা মেটানোর সংস্থান কতটা আছে?
অভিযোগ, কলকাতায় পাসপোর্ট-অফিসারের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় বিপত্তি ঘটছে। যে কারণে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা চালু করে অভিজ্ঞ কর্মীদের অফিসার পদে উন্নীত করার দাবি তুলেছেন পাসপোর্ট-কর্মীরা। তাঁদের আরও অভিযোগ: অল ইন্ডিয়া পাসপোর্ট এমপ্লইজ ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি করে কর্তৃপক্ষ কথা দিয়েছিলেন, আপাতত ২০% ক্ষেত্রে অনলাইন চালু করে বাকি ৮০% পাসপোর্ট আগের মতো হাতে দেওয়া হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি পুরোটাই অনলাইন করে দেওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে কর্মীদের দাবি।
কী রকম সমস্যা? কলকাতার পাসপোর্ট অফিস সূত্রের খবর, এখানে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না।
অনেক ক্ষেত্রে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে সরাসরি কলকাতার মুখ্য পাসপোর্ট অফিসারকে আবেদনপত্রে সই করে দিতে হচ্ছে। ফলে পুরনো পাসপোর্ট অফিসে আবার সেই লাইনই দিতে হচ্ছে।
এই অবস্থা কেন? পরদেশি বলেন, “পাসপোর্ট পেতে লাইনে যাতে দাঁড়াতে না-হয়, সে উদ্দেশ্যেই অনলাইন ব্যবস্থা। মাঝে কলকাতা অফিসে হজযাত্রীদের পাসপোর্ট বানাতে হয়েছিল। এক সঙ্গে অনেক চাপ পড়ে গিয়েছিল। আশা করি, কিছু দিনের মধ্যে মানুষের হয়রানি বন্ধ হবে।”
তবে আরও কিছু দাবি-দাওয়া ঘিরে পাসপোর্ট-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কর্মীদের বিবাদ জোরালো হয়ে উঠছে। যার জেরে এ দিন সকালে দিল্লিতে কর্মী ইউনিয়নের নেতা গিরিরাজ শর্মা অনশনেও বসে যান। দুপুরে কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁকে নিরস্ত করা হয়। সূত্রের খবর: কর্মীদের দাবি মানার জন্য তিরিশ দিন সময় চেয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। কলকাতায় ইউনিয়নের সম্পাদক অংশুমান বিশ্বাস বলেন, “তার পরেও কিছু না-হলে পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা স্থির করা হবে।” |