একদল ছেলেমেয়ের মধ্যে থেকে ‘লিডার’ অর্থাৎ দলপতিকে খুঁজে বের করতে হয় বলে এই খেলার নাম-- ‘লিডার ধরা’। খেলোয়াড়দের পর্যবেক্ষণ শক্তির পরিচয় মেলে এই খেলায়। ১০-১৫ জন ছেলেমেয়ে একত্রে কিংবা পৃথক ভাবে এই খেলা খেলতে পারে। প্রথমে ‘উবু-দশ-কুড়ি’ হিসেবে একজনের ‘মোড়’ নির্ধারণ করা হয়। ‘মোড়ধারী’ ছাড়া বাকি খেলোয়াড়রা মাঠের মধ্যে বৃত্তাকারে বসে শুরু হয় খেলা। ১৫-২০ ফুট দূরে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় মোড়ধারীকে। সেই সময় বৃত্তাকারে বসে থাকা খেলোয়াড়রা নিজেদের মধ্যে একজনকে ‘লিডার’ নির্বাচন করে নেয়। নির্বাচনের পর ‘এসো বাছাধন, ধরো দেখি লিডার কোনজন?’-- জাতীয় ছড়া কেটে মোড়ধারীকে ডাক দেওয়া হয়। ডাক শুনে মোড়ধারী তখন বৃত্তে প্রবেশ করে। |
নিয়ম হল, মোড়ধারীর নজর এড়িয়ে লিডার কখনও কান বা নাক চুলকানো, কখনও বা কাল্পনিক থালায় খাওয়া-সহ নানা রকম ভঙ্গী পরিবর্তন করতে থাকবে। বাকি খেলোয়াড়দেরও লিডারকে অনুসরন করে দ্রুততার সঙ্গে ভঙ্গী পরিবর্তন করতে হয়। যদি এক বা একাধিক খেলোয়াড়কে মোড়ধারী পূর্বের ভঙ্গিমায় ধরে ফেলতে পারে, তাহলে ওই সব খেলোয়াড়দের ‘মরা’ হিসেবে বৃত্তের বাইরে চলে যেতে হয়। অপেক্ষা করতে হয় ফের ‘জীবিত’ হওয়ার। পাশাপাশি, অবশ্য মোড়ধারীকে বলতে হয় কে লিডার। এই চিহ্নিতকরণ ভুল হলে, প্রতিবারের জন্য বৃত্তের বাইরে বসে থাকা একজন করে খেলোয়াড় ‘জীবিত হয়ে’ ফের খেলায় সামিল হওয়ার সুযোগ পায়। আর চিহ্নিতকরণ সঠিক হলে, ‘মোড়’ মেনে নিতে হয় লিডারকে। সেক্ষেত্রে ‘মরা’ সমস্ত খেলোয়াড়ের ‘জীবিত’ হয়ে বৃত্তে প্রবেশ করার সুযোগ মেলে। কিন্তু ফের নতুন লিডারকে মোড় মানতে হয় বলে, বেশিরভাগ খেলোয়াড় ওই দায়িত্ব নিতে চায় না। তখন গণনার মাধ্যমে নতুন লিডার নির্বাচন করা হয়। তবে খেলোয়াড়দের নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ থাকে বলে অনেকের মধ্যেই ‘লিডার’ হওয়ার প্রবণতাও লক্ষ করা যায়।
ময়ূরেশ্বরের নবগ্রামের কেশব ভাণ্ডারী, লাভপুরের উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়রা বলেন, “আজও জ্বল জ্বল করছে ওই খেলার স্মৃতি। এক সময় ওই খেলায় লিডার চিহ্নিত করতে গিয়ে কতবার যে বোকা বনেছি তার হিসেব নেই! আবার লিডার হয়ে কিংবা গণনায় মোড়ও খেটেছি।” তাঁদের আক্ষেপ, “আজ আর ছেলেমেয়েদের মধ্যে ‘লিডার ধরা’ খেলা চোখেই পড়ে না।” |