এ বার কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার মুচলেকা দিয়ে প্রায় দেড় বছর পর গ্রামে ফেরার ছাড়পত্র মিলল ১১ জন সিপিএম কর্মী ও তাঁদের পরিবারের। মঙ্গলবার কংগ্রেসের ঝাণ্ডা কাঁধে নিয়ে গিরিয়ায় গ্রামে ঢুকলেন সেই ঘরছাড়ারা।
জেলা কংগ্রেসকে অবশ্য এ নিয়ে বিশেষ ‘বিব্রত’ দেখাচ্ছে না। স্থনীয় বিাধায়ক কংগ্রেসের আখরুজ্জাম্মান বলেন, “শান্তির স্বার্থেই স্বতোঃপ্রনোদিত এই দলবদল। এর মধ্যে জোর জবরদস্তির কিছু তো নেই।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য যা শুনে বলছেন, “পরিবর্তনের জমানায় আর কত সন্ত্রাস দেখতে হবে বলুন তো!”
রঘুনাথগঞ্জ থানার বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া পদ্মাপাড়ের পঞ্চায়েত গিরিয়া। ৯টি গ্রাম নিয়ে ওই পঞ্চায়েতের সমস্ত গ্রামই আশির দশকে ছিল সিপিএমের দূর্গ। গত ৩৪ বছর ধরে সব ক’টি নির্বাচনেই গিরিয়া থেকেছে সিপিএমের দখলে। লালদুর্গে সেই সময়ে কংগ্রেস কর্মীরা মাসের পর মাস থেকেছেন গ্রামছাড়া। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে গিরিয়া পঞ্চায়েতের ১০টি আসনের একটিতেও প্রার্থী দিতে পারেনি কংগ্রেস। ফলে ১০টি আসনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল সিপিএম। এ হেন লালদুর্গে পাশা বদলায় ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে।
জঙ্গিপুর লোকসভা আসনের প্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায় গিরিয়া থেকে ২২৪৮টি বেশি ভোট পান। এরপরই ক্রমশ ফাটল ধরে লালদুর্গে। ২০১১ সালের বিধানসভার নির্বাচনে গিরিয়ায় কংগ্রেসের ভোটের ব্যবধান বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৫০০। পরিবর্তনের ওই হাওয়ায় গিরিয়া এখন কংগ্রেসের দখলে। তাই সিপিএমের নেতা-কর্মীরা ঘরছাড়া সেই থেকেই। এমনকী গিরিয়া পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান-সহ ১০ জন সদস্যই গ্রামছাড়া হয়ে রয়েছেন। সেই থেকে পঞ্চায়েত অচল। শেষ পর্যন্ত পঞ্চায়েত বোর্ড ভেঙে দিয়ে বিডিও-কে প্রশাসক নিয়োগ করে রাজ্য সরকার। |
সি পি এম প্রধান মানোয়ারা বেগম বলেন, “গ্রাম এখন কংগ্রেসের দখলে। পঞ্চায়েত সদস্যরা গ্রামছাড়া। যাঁরা গ্রামে আছেন তাঁরা কংগ্রেস করার শর্তে গ্রামে থাকার ছাড়পত্র পেয়েছেন। আমি বহু লড়াই করে পঞ্চায়েতে গিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পুলিশ দিয়ে আর কত দিন চলা যায়। তাই শেষ পর্যন্ত এক বছর থেকে গ্রাম ছেড়ে সুতির মদনপুরে শ্বশুরবাড়িতে রয়েছি। এখনও সি পি এমের সঙ্গেই আছি।”
সি পি এমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্গ ভট্টাচার্য বলেন, “সি পি এমের এখনও প্রায় ২৫ জন নেতার পরিবার গ্রাম ছাড়া হয়ে রয়েছে। কথা ছিল মঙ্গলবার বিকালে পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে ঘরছাড়া নেতা-কর্মীদের ঘরে ফেরানো হবে। কিন্তু তার আগে এ দিন সকালেই হুমকি সন্ত্রাসের ভয় দেখিয়ে দলবদল করানো হয়েছে দলীয় কর্মীদের। তাঁদের বাধ্য করানো হয়েছে দলবদল করতে।” এঁদের মধ্যে আছেন সিপিএমের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য নুরুল হোদা,দলের পঞ্চায়েত প্রধানের ভাই মতিউর রহমান। দুই সদস্য নবীর শেখ ও মজিবুর রহমান। মঙ্গলবার গিরিয়ার কালীতলায় এঁদের দলবদল করিয়ে গ্রামে ফেরাতে কংগ্রেসের তরফে একটি ছোটখাটো অনুষ্ঠানও করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় কংগ্রেসের দলীয় পতাকা। সেই পতাকা কাঁধে চড়িয়ে একে একে গ্রামে ঢোকেন হোদা, মতিউর, নবীরেরা। নুরুল হোদা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে গ্রাম ছাড়া হয়ে রয়েছি। তাই নিরুপায় হয়েই সিপিএম ছেড়ে কংগ্রেসে এসেছি। আমরা গ্রামে শান্তিতে থাকতে চাই।”
কংগ্রেস ব্লক সম্পাদক প্রকাশ সাহার মতে, “গিরিয়ায় এখন পরিবর্তনের হাওয়া। পুরোপুরি শান্তির পরিবেশ। এক সময় সিপিএমের সন্ত্রাসে গিরিয়ায় ৩ থেকে ৪টি পুলিশ ক্যাম্প বসাতে হয়। এখন রয়েছে মাত্র ১টি ক্যাম্প। কোথাও কোনও অশান্তি নেই। ওঁরা নিজের ইচ্ছায় কংগ্রেসের পতাকা হাতে নিয়েছেন।” পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “গিরিয়ায় ঘরছাড়াদের ঘরে ফিরতে উদ্যোগ নিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু তার আগেই সেখানে দলবদল সংক্রান্ত পরিস্থিতি ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। তাই ঘরে ফেরানোর পুলিশি উদ্যোগ এখনই নেওয়া হচ্ছে না।” |