|
|
|
|
আনন্দ করেই দেখুন না, নিন্দুকদের বার্তা শাহরুখের |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
নাক-উঁচু নিন্দুকের মতো সব কিছু নিয়ে ব্যাঁকাট্যারা কথা না বলে একটু দিল খুলে আনন্দ করুন না!
আইপিএল ট্রফিটা পাশে নিয়ে নিজের বাড়িতে বসে প্রথম সাংবাদিক বৈঠক। শাহরুখ খান দৃশ্যতই বিপুল খুশি, তৃপ্ত, আত্মবিশ্বাসী এবং অবশ্যই অনেকখানি নিশ্চিন্ত।
কলকাতা নাইট রাইডার্স এবং তাঁকে ঘিরে এই কয়েক বছরে হাজারো বিতর্ক তাঁর দিকে ধেয়ে এসেছে। এসে চলেছে। ওয়াংখেড়ের ঘটনার রেশ এখনও যথেষ্ট টাটকা। বিশেষত মুম্বইয়ে। তার পরে কলকাতায় বিজয়োৎসবের প্রাচুর্য এবং চেন্নাইয়ের মাঠে তাঁর উল্লাস প্রদর্শন নিয়েও নানা মহলে নানা কথা বলা হচ্ছে। শাহরুখ আজ তাঁর সব কথারই জবাব দিয়েছেন। কিন্তু এ দিন তিনি আর বিতর্কিত টিমমালিক নন, মাথা-গরম চিত্রতারকা নন। মুখে এক গাল হাসি, কথায় ঠাট্টার সুর, গলায় বিজয়ীর পরিতৃপ্তি।
চেন্নাইয়ের মাঠে তাঁর লম্ফঝম্ফ, ইডেনে মহোৎসব নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, শাহরুখ বরং তাঁদেরকেই পরামর্শ দিচ্ছেন ‘একটু আনন্দ করে দেখুন না! ভাল লাগবে!’ কারণ তাঁর জীবনদর্শনই বলেন, ছোট-বড় যেমনই সুযোগ আসুক, আনন্দ করা উচিত! কিন্তু ব্যক্তিগত টিমমালিকের জয় নিয়ে এত হইচই? “কীসের ব্যক্তিগত? কোনটা ব্যক্তিগত? একটা ম্যাচ দেখার জন্য গোটা দেশ সন্ধে আটটা থেকে টিভি খুলে বসে, সেটা ব্যক্তিগত? অর্ধেক সরকারি অনুষ্ঠান তো সম্প্রচারই হয় না! মন্ত্রীরা ইফতার পার্টি দেন না? কত জনের জন্য সেটা? আইপিএল যদি আমার ইফতার হয়, কত জন তার থেকে আনন্দ নিলেন?”
মোদ্দা কথাটা শাহরুখের মতে, আনন্দের বহিঃপ্রকাশকে এ দেশে খুব ভাল ভাবে নেওয়া হয় না বলেই তাঁর আচরণ নিয়ে টিভি চ্যানেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুষ্ঠান করতে হয়, নানা রকম মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা খোঁজা হয়। ‘‘আমাদের দেশের অনেক সমস্যা আছে। উন্নয়নে আমরা প্রথম সারিতে নেই! তাই বলে আনন্দ করতে বাধা কীসের? আমি জানি না, মানুষ আনন্দ প্রকাশ করতে এত ভয় পায় কেন?” প্রত্যেকটা মানুষেরই আনন্দের নিজস্ব অভিব্যক্তি আছে। শাহরুখেরও আছে। তিনি সেটাই চেন্নাইয়ে করেছেন বলে দাবি করলেন। “সত্যি বলতে কী, ওই দিন আমার মনে হচ্ছিল, আমি উড়ে যেতে পারি। মেয়ে আমাকে ধরে না রাখলে আমি হয়তো উড়েই যেতাম! আমি সে দিন ৫০ জনের আনন্দ বোধহয় আমি একা প্রকাশ করেছি। সবাই তো আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ পায় না। আমি পেয়েছি বলেই এত কথা উঠছে!”
শুধু আইপিএল নিয়েই আনন্দ-উৎসব হয়, সেটাও মানলেন না শাহরুখ! “বিশ্বকাপ জয়ের দিন আনন্দ করিনি? গাড়ি করে ফারহানের বাড়িতে যাচ্ছিলাম আমরা। করিশমা ছিল। দক্ষিণের এক অভিনেত্রী ছিলেন। মুম্বইয়ের রাস্তায় খুবই আনন্দ করেছি। পতাকা উড়িয়েছি! গাড়ির থেকে মুখ বার করে চেঁচিয়েছি! সকাল আটটা অবধি পার্টি করেছি। আমি তো চাই, বিশ্বনাথন আনন্দকে নিয়েও উৎসব হোক!”
দেখাই যাচ্ছে, শাহরুখের এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে বিতর্কের জবাব আছে, কিন্তু ঝাঁঝালো প্রতি-আক্রমণ নেই। ঠাট্টা আছে, শ্লেষ নেই। শাহরুখ বরং এ দিন বলগুলোকে খেলেছেন ব্যাটের আলতো টোকায়। বলেছেন, “আমাকে একটা কথা বুঝতে হবে। আমি যে বয়স এবং যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে সব রকম অপ্রীতিকর কথা নিয়ে সব সময় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা আমার সাজে না।” এই কথাটা এল ওয়াংখেড়ে প্রসঙ্গে। ওয়াংখেড়ের ঘটনার পরদিন বলেছিলেন, “যা ঘটেছে, তা যদি আবার ঘটে, তাহলে যা করেছি তাই করব।” আজ বললেন, “মেজাজ হারানোর মতোই ঘটনা ঘটেছিল। গালি দেওয়ার মতোই অবস্থা ছিল। কিন্তু তবু বলব ঠিক করিনি। বাচ্চাদের সামনে গালি দিয়ে ঠিক করিনি। দর্শকদের কথাও ভাবা উচিত ছিল।” বলেই গর্বিত পিতা জানান, সন্তানরাই এই ভুলটা ধরিয়ে দিয়েছে তাঁকে। এও বললেন, বিষয়টা তিনি নিজে ভাবেননি। কারণ নিজেকে তিনি ‘রোল মডেল’ বলে মনে করেন না। “অনেক খারাপ খারাপ কাজ করি। রাতে ঘুমোই না, হইহুল্লোড় পার্টি করি, গাদা গাদা কফি খাই। ফিল্মের লোকেদের কেউ ভাল লোক বলে ভাবেও না।” ফিল্মের লোক বলেই তাঁর দলকে সব সময়ই চাপে থাকতে হয়েছে। ভাল-খারাপ দু’রকম চাপই অনেক বেশি টিমের উপরে পড়েছে। এখন ‘সেটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে কেকেআর’, তাই কেকেআর-মালিকের ফুরফুরে মেজাজের পাশে ঝলমল করছে ট্রফিটা। পাঁচ বছরের প্রতীক্ষার পর অবশেষে অর্জিত ট্রফি।
শাহরুখ বরাবর বলে এসেছেন, তিনি হারতে ভয় পান। আইপিএল তাঁকে হারতে শেখাল। বললেন, “প্রীতিদের (জিন্টা) দেখে অনেক শিখেছি। কী ভাবে পরাজয়কে গ্রহণ করতে হয়, কী ভাবে হাসিমুখে থাকতে হয়, খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়াতে হয়, এগুলো শিখেছি। আগে হারলে ঘর থেকে বেরোতাম না। সেটা ঠিক নয়। কত জনের পরিশ্রম, কত মানুষের কষ্ট জড়িত আছে! দাদা (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) কত সময় খায়নি, ক্রিস গেইল কত বার কেঁদেছে!” শাহরুখ নিজেকে ভেবে এসেছেন টিমের পিতার মতো। “ছেলেদের সব সময় বলেছি, পরিশ্রম আর লড়াই করলে ফল পাবেই। পাঁচ বছর ধরে সেই কথাটা বলে চলা, বিশ্বাস না খোয়ানো খুব সহজ কাজ ছিল না।” সেই জন্যই এখন তাঁর মনে হয়, “জেতা-হারাটাই সব নয়।” তাঁর মনে হয়, যারা কেকেআর-এ বাঙালির সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তারা ‘টিম’ শব্দটার মানে জানে না। “বাঙালি না থাকলে ভারতীয় দলের খেলা দেখেন না তাঁরা? কলকাতার হয়ে খেলতে গেলে কলকাতার হতেই হবে?” ‘টিম’, এই শব্দটার মানেই তো পর্দায় শিখিয়েছিলেন ‘কবীর খান’। গত ক’দিন ধরে শাহরুখের গালে কবীরের মতোই হাল্কা দাড়ি। একটা প্রশ্নের উত্তরে বললেনও, বড্ড ঘোরাঘুরি গেল। ভাল করে চান করা দরকার।” তার পরেই হাসি “দেখুন না, এক্ষুনি কোনও চ্যানেল দেখাতে শুরু করবে ব্রেকিং নিউজ! শাহরুখ তিন দিন চান করেননি!!!” |
|
|
|
|
|