নিউ টাউনকে প্লাস্টিক-বর্জিত ও পরিবেশবন্ধু করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে হিডকো। পরিবেশবন্ধু সেরা আবাসনকে পুরস্কৃত করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে হিডকো-র এই উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। অভিযোগ, নিউ টাউনের বিভিন্ন বড় বড় অফিস ও আবাসনের সামনে প্রতিদিনই প্লাস্টিক-সহ প্রচুর আবর্জনা জমছে। এমনকী, নর্দমায় প্লাস্টিক ও মাটির ভাঁড় পড়ে নর্দমাগুলি দিয়ে জল বেরোনো কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, হিডকো প্লাস্টিক-বর্জিত উপনগরী গড়ে তোলার কথা বলছে ঠিকই, কিন্তু তা কার্যকর করার বিষয়ে তাদের তরফে বিশেষ উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। |
উপনগরীর পথে জমে রয়েছে আবর্জনা। নিজস্ব চিত্র |
ওই এলাকায় তথ্যপ্রযুক্তির অফিস সংলগ্ন আবাসনগুলিতেই এই সমস্যা বেশি বলে অভিযোগ উঠেছে। যেমন, নিউ টাউন বাসস্ট্যান্ডের কাছে তথ্যপ্রযুক্তির একটি বহুজাতিক অফিসের সামনে ফুটপাথ জুড়ে বসে গিয়েছে খাবারের ছোট ছোট স্টল। ওই সব স্টল থেকে ফেলা খাবারের প্লাস্টিক থেকে শুরু করে নানা ধরনের আবর্জনা জমছে আশপাশের আবাসনের সামনে। ওই প্লাস্টিক ও বর্জ্য মিশছে সামনের নর্দমায়। এলাকার এক আবাসনের বাসিন্দাদের মতে, কলকাতার অফিসপাড়ায় খাবারের প্যাকেট ও নোংরা পড়ে রাস্তার যে রকম চেহারা হয়, নিউ টাউনে তাঁদের আবাসনের সামনের জায়গাটার চেহারাও তেমন। বাসিন্দাদের মতে, আবাসনের বাইরের অবস্থা যদি এই হয়, তা হলে আবাসনের ভিতরটা শুধু পরিবেশবন্ধু হয়ে কী লাভ হবে? নিউ টাউনের অ্যাকশন এরিয়া ওয়ানে এক আবাসনের বাসিন্দা মধুছন্দা সেনগুপ্ত বলেন, “আমাদের আবাসনের সামনে সৌর্ন্দযানের জন্য কিছুটা ফাঁকা জায়গা আছে। সেখানটা আমরা বাঁশ দিয়ে ঘিরেও রেখেছিলাম। নানা ধরনের গাছ লাগানো হয়েছিল। এখন ওই জাগাটাই প্লাস্টিক আর নানা ধরনের জঞ্জাল ফেলার জায়গায় পরিণত হয়েছে। এমনকী, আমাদের লাগানো গাছগুলির ডালও কাটা হয়েছে।” ‘নিউ টাউন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর জয়েন্ট সেক্রেটারি সত্যব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মাত্র কয়েকটি অফিস তৈরি হওয়াতেই এই হাল হয়েছে নিউ টাউনের। এর পরে অফিসের সংখ্যা বাড়লে এখানকার অবস্থা তো কলকাতার মতোই হয়ে যাবে। বাম আমলে এই সমস্যা নিয়ে আমরা মন্ত্রী ও হিডকো-র অফিসারদের কাছে বেশ কয়েক বার দরবার করেছিলাম। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। নতুন মন্ত্রী ও হিডকো-র অফিসারদের কাছে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। আশা রাখি, এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করবেন তাঁরা।”
হিডকো-র আধিকারিকেরা অবশ্য জানিয়েছেন, এই সমস্যা নিয়ে তাঁরা ইতিমধ্যেই চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন। ওই সংস্থার চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, “নিউ টাউনকে পরিবেশবন্ধু উপনগরী হিসেবেই গড়ে তোলা হচ্ছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর জন্য ইতিমধ্যেই নানা ধরনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ৪০ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিক ব্যবহার যাতে বন্ধ হয়, সে ব্যপারেও প্রচার চালানো হয়েছে।” দেবাশিসবাবু জানিয়েছেন, ওই এলাকার বেশ কয়েকটি শপিং মল ৪০ মাইক্রনের কম প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি অফিসের পাশে খাবারের স্টলগুলি থেকে যে সমস্ত জঞ্জাল ও প্লাস্টিক ফেলা হচ্ছে, তা তোলার জন্য নির্দিষ্ট গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই গাড়ির সংখ্যা পরে আরও বাড়ানো হবে। আশা করা যায়, সামনের বর্ষার আগে সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে। |