প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্য যেমন নদীর বহমানতা প্রয়োজন তেমনই পানীয় জল, সেচের জল, বন্যার জল বের করা এ সবের জন্য নদীর গুরুত্ব আবহমান কাল থেকেই। মানুষ স্রেফ স্বার্থসিদ্ধির জন্য যেমন বনজঙ্গল ধংস করছে, দূষণ বাড়িয়ে দূষিত করছে প্রকৃতিকে, তেমনই প্রকৃতির এই অমূল্য সম্পদ বিভিন্ন নদীকেও রূপ দিচ্ছে শ্মশানের। এ রাজ্যের বেশির ভাগ নদীর অবস্থা শোচনীয়। অবৈধ ভাবে বালি তোলা, ড্রেন-নালার জল নদীতে ফেলা (যেখানে পলি-প্লাস্টিকের আবর্জনাই বেশি), মজে যাওয়া নদীকে সংস্কার না-করা এ সবই দায়ী নদীগুলির প্রায় বিলুপ্তির জন্য। এ ছাড়া নদীর পাড়গুলি একটু একটু করে দখল হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি তৈরির জন্যও। নতুন সরকার এসেছে। আশা করব, নদীগুলির পুনরুদ্ধার তথা জীবনদানে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেবে।
সুদর্শন নন্দী। রাঙামাটি, মেদিনীপুর
|
বড় মাপের এক হৃদয়বান মানুষ |
কলকাতার কড়চায় (১৪-৫) প্রকাশিত কাঞ্চন চক্রবর্তী মহাশয় সম্পর্কিত ছোট্ট প্রতিবেদনটি পড়ে পুরনো কিছু কথা মনে জেগে উঠল। বিদেশ থেকে শিল্পকলা বিষয়ে পাঠ সাঙ্গ করে দেশে ফিরে তিনি কয়েক বছর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বি টি কলেজে শিল্প ও কলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছিলেন। সেই সময়ে (১৯৬৫-’৬৬) আমি শিক্ষক-শিক্ষণ প্রশিক্ষার্থী হিসাবে তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। এমন অকপট সারল্যে বিম্বিত মানুষ কমই চোখে পড়ে। মানুষের সঙ্গে সহজ মেলামেশায় তাকে আপন করে নিতে পারতেন অনায়াস মাধুর্যে। তখন কল্যাণী শিক্ষক-শিক্ষণ পাঠক্রম গ্রহণ করতে হত বাধ্যতামূলক আবাসিক হিসাবে। মনে পড়ে, গ্রীষ্মকালে রাতের আহারের পর মাঝে মাঝে হস্টেলের ছাদে তিনি বিশেষ ক্লাস নিতেন। তাঁকে পেয়েছিলাম কলেজের শিক্ষামূলক ভ্রমণকালেও। অনায়াস স্বাচ্ছন্দ্যে তিনি মিশে যেতেন আমাদের সঙ্গে, অথচ মধুর দৃঢ়তায় করতেন সমগ্র ভ্রমণসূচির বাস্তবায়ন। খোলা গলায় যখন রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন, তখন তাঁর প্রাণের গভীর থেকে সরল আনন্দ যেন মুক্ত ডানা মেলে বেরিয়ে আসত।
পরবর্তী কালে শান্তিনিকেতনে কলাভবনে তিনি যখন অধ্যাপনা এবং অধ্যক্ষতা করতেন তখনও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। এন্ড্রুজ পল্লির কোয়ার্টারে থেকে তাঁর নিজের হাতের রান্না খেয়েছি। তাঁর জ্ঞান, মেধা বা পাণ্ডিত্যের তেমন খোঁজ রাখিনি। কিন্তু একজন বড় মাপের এবং হৃদয়বান মানুষ হিসাবে তাঁকে দেখেছি এবং তাঁর স্নেহ পেয়ে ধন্য হয়েছি। শান্তিনিকেতনে দেখেছি, সেখানকার প্রচুর নামকরা বড়মাপের মানুষও তাঁকে কত ভালবাসার সঙ্গে নিজেদের গণ্ডির মধ্যে টেনে নিয়েছেন।
অনেক দিন পরে তাঁর কথা পড়ে স্মৃতিতে এবং শ্রদ্ধায় আপ্লুত হলাম। ধন্যবাদ জানাই, কড়চার প্রতিবেদককে ও প্রণাম জানাই কাঞ্চনবাবু স্যারকে।
নির্মল সান্যাল। কৃষ্ণনগর, নদিয়া |