তথ্য পাচার হয়েছে কি, তদন্তে বিদেশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক
পাক চরবৃত্তির আঁচ পেয়ে
বন্ধ ই-পাসপোর্টের প্রকল্প
ঠিক হয়েছিল পাসপোর্টও হবে স্মার্ট কার্ডের মতো। যাতে বসানো থাকবে একটি ‘চিপ’। তাতেই ডিজিটাল আকারে ধরা থাকবে পাসপোর্ট মালিকের যাবতীয় তথ্য। এমনকী, নজরে থাকবে পাসপোর্ট ধারকের গতিবিধিও। এমন একটা অভিনব প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেওয়ার পরেও বন্ধ করে দিতে হল পাক চরবৃত্তির আঁচ মেলায়।
এই ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট) তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছিল আমস্টার্ডামের জেমাল্টো নামে একটি সংস্থাকে। জানা গিয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের যোগাযোগ। সরাসরি সংস্থাটি বা সেখানকার কোনও কর্মী মারফত পাকিস্তানে তথ্য পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়াতেই প্রকল্পটির কাজ অনেকটা এগিয়েও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এমনকী, ইতিমধ্যেই ভারতের কিছু তথ্য পাকিস্তানের হাতে গিয়ে পড়েছে কি না, তা নিয়ে যৌথ ভাবে তদন্তও শুরু করেছে বিদেশ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বিদেশ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির রিপোর্টে জেমাল্টো সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সংস্থাটির সন্দেহজনক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে মন্ত্রকের যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।’
ই-পাসপোর্টের পাইলট প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিল ২০০৮ সালে। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়, প্রথমে শুধু কূটনীতিকদের জন্য তৈরি হবে ই-পাসপোর্ট। পরে তা চালু করা হবে সাধারণের জন্যও। সেই অনুযায়ী পরীক্ষামূলক ভাবে অল্প কয়েক জন কুটনীতিক ও সরকারি পদাধিকারীর জন্য ই-পাসপোর্ট তৈরিও হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশের মুখ্য পাসপোর্ট অফিসার এম কে পরদেশি। এ কাজে পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল জেমাল্টোর। এ বার সাধারণের জন্য ই-পাসপোর্ট তৈরির জন্য টেন্ডার ছাড়া হয় অর্থ মন্ত্রকের অধীনস্থ নাসিকের ইন্ডিয়া সিকিউরিটি প্রেস থেকে। বরাত পায় ওই সফটওয়্যার সংস্থাটিই। কিন্তু জল এতটা গড়িয়ে যাওয়ার পরে গোয়েন্দাদের নজরে আসে, সর্ষের মধ্যে ভূত!
দেখা যায়, ওই সফটওয়্যার সংস্থাটি, এমনকী তাদের পূর্বসূরি সংস্থা ‘অক্সাল্টো’-র সঙ্গেও পাকিস্তানের যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। অন্যান্য কিছু সূত্রের ভিত্তিতেও সন্দেহ দেখা দেয় যে, পাক সরকারকে তথ্য পাচারের চেষ্টা হচ্ছে। এর পরই প্রকল্পটিকে হিমঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিদেশ মন্ত্রক জানিয়ে দেয়, সাধারণের জন্য ই-পাসপোর্টের প্রকল্পটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই তথ্য পাচার হয়েছে কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন সরকারের কাছে।
জানা গিয়েছে, জেমাল্টো পাকিস্তানের বিভিন্ন স্মার্ট কার্ড প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। সংস্থাটির ওয়েবসাইট থেকেও স্পষ্ট যে, পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। ২০০৬-এ ‘জেমপ্লাস’ ও ‘অক্সাল্টো’ নামের দু’টি সংস্থা মিলে তৈরি হয় এই জেমাল্টো। তারও বছরখানেকের বেশি আগে অক্সাল্টো-র সঙ্গে ইএমভি কার্ড (ইউরো-পে, মাস্টার কার্ড ও ভিসা) তৈরির চুক্তি হয়েছিল পাকিস্তানের ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের। সম্প্রতি তাদের ইএমভি কার্ড তৈরি করে দিয়েছে জেমাল্টো। পাকিস্তানের বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্য-কর্তার সঙ্গে এই সংস্থার লোকজনের ‘যোগাযোগ’ রয়েছে বলেও জানতে পেরেছে নর্থ ব্লক।
জেমাল্টো জানিয়েছে, পেশাদার সংস্থা হিসেবে তারা পাকিস্তান ছাড়াও আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স-সহ ৫০টি দেশের বেসরকারি এবং কিছু ক্ষেত্রে সরকারের ই-প্রশাসনের এবং ই-কার্ড তৈরির কাজ করেছে। কিন্তু পাক সরকারের কোনও কাজে যুক্ত নয় তারা। সংস্থার এক মুখপাত্রের কথায়, “আমাদের সংস্থা কখনও পাকিস্তানের কোনও সরকারি প্রকল্পে যুক্ত থাকেনি।”
কিন্তু এতেই আশ্বস্ত হচ্ছে না বিদেশ মন্ত্রক। তাদের বক্তব্য, জেমাল্টো যদি সরাসরি পাক সরকারের সঙ্গে যুক্ত না-ও থাকে, তবু আইএসআই বা কোনও মৌলবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে এই সংস্থার পরোক্ষ যোগাযোগ থাকাটা অসম্ভব নয়। সে কারণেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে সম্পূর্ণ নিঃসন্দেহ না হয়ে দেশের মানুষের বিভিন্ন তথ্য ওই বিদেশি সংস্থাটির হাতে তুলে দেওয়া হবে না।
বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ সংস্থাটির সমস্ত তথ্য এবং আগের ইতিহাস খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে। জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে যে, ইতিমধ্যেই একটি ‘সেল্ফ ডিসক্লোজার’ রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে জেমাল্টোর কাছ থেকে। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের ডিপার্টমেন্ট অফ ইকনমিক অ্যাফেয়ার্স-এর পক্ষ থেকেও একটি বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। এখনও জবাব দেয়নি সংস্থাটি। দিল্লির সন্দেহ ও উদ্বেগ দুই-ই বাড়ছে তাতে।
ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক আলোচনার প্রক্রিয়া চালু থাকলেও দু’দেশের মধ্যে আস্থার ফাটল যে এতটুকুও মেরামত হয়নি, এই ঘটনা সেই সত্যকেই ফের তুলে ধরল বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। সাউথ ব্লকের বক্তব্য, সন্ত্রাসের প্রশ্নে পাকিস্তান প্রতিশ্রুতি পালন না করা পর্যন্ত ‘কাজের কাজ’ কিছু হবে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের পাক-নীতি বা চলতি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা প্রক্রিয়ায় এখনই কোনও বদল ঘটাতে চাইছে না দিল্লি। তবে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নেওয়ার প্রশ্নে এতটুকু ঢিলে দিতেও রাজি নয় সরকার। ই-পাসপোর্টের প্রকল্প শিকেয় উঠলেও বিষয়টি এখন গভীরে গিয়ে তদন্ত করে দেখতে চায় ভারত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.