পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন সিপিএম এবং তৃণমূলের সদস্যেরা। মঙ্গলকোটের ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএমের চার জন ও তৃণমূলের দু’জন সদস্য বিডিও-র কাছে চিঠি দিয়ে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছেন। মঙ্গলকোটের বিডিও প্রদীপ মজুমদার জানান, আগামী ৪ জুন অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ১৭টি। তার মধ্যে ৭টি কংগ্রেস, দু’টি তৃণমূল ও ৮টি সিপিএমের দখলে রয়েছে। কংগ্রেস ও তৃণমূল জোট করে এই পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করেছিল। পরে কংগ্রেস ও সিপিএম থেকে নির্বাচিত দু’জন সদস্যের মৃত্যু হয়। চলতি বছরে কংগ্রেস প্রধান সাক্ষীগোপাল ঘোষের কাজকর্ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে তৃণমূল। গত মাসে পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান তৃণমূলের জিতেন লোহার পদত্যাগ করেন। এর পরেই তিনি ও দলের অন্য পঞ্চায়েত সদস্য নবকুমার ঘোষ বিডিও-র কাছে গিয়ে প্রধানের উপরে অনাস্থার কথা জানান।
এই ঘটনার পরেই সিপিএমের তিন সদস্য মহকুমাশাসকের (কাটোয়া) কাছে গিয়ে তাঁরা কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন বলে জানান। পরে ওই তিন সদস্যের এক জন, কুলসুনো গ্রামের হাফিজুল রহমান ফের সিপিএমে থেকে যাচ্ছেন বলে জানান প্রশাসনকে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই গত ২১ মে বিডিও-র কাছে সিপিএমের চার জন ও তৃণমূলের দু’জন এক সঙ্গে চিঠি দিয়ে প্রাধানের বিরুদ্ধে অনাস্থার কথা জানান। অনাস্থায় যোগ দেওয়া সিপিএম সদস্যেরা হলেন কুলসুনো গ্রামের আরিফা বিবি, হাফিজুল রহমান, গীতা মাঝি ও ধান্যরুখি গ্রামের নমিতা দাস।
এ দিন সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য আরিফা বিবির বাড়িতে গিয়ে তাঁর দেখা মেলেনি। তবে তাঁর স্বামী হাসান শেখের দাবি, “পঞ্চায়েত প্রধানের স্বেচ্ছাচারিতা তো রয়েছেই। পাশাপাশি, বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে খেঁড়ুয়া গ্রামের ৮১ জন গ্রামছাড়া। তৃণমূল তাঁদের ঘরে ফেরানোর প্রতিশ্রতি দিয়েছে। তাই তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আমার স্ত্রী অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেছেন।” আর এক সিপিএম সদস্য হাফিজুল রহমান বলেন, “দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে আমরা তৃণমূলের সঙ্গে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছি।” আর তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য জিতেন লোহার বলেন, “সিপিএমের সঙ্গে আমরা হাত মেলাতে পারি না। তবে কংগ্রেসের পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে আমরা এক হয়েছি। যা করেছি তা দলীয় সিদ্ধান্ত মেনেই।” প্রধান সাক্ষীগোপালবাবুর অবশ্য দাবি, “আমার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা। এখন সিপিএম এবং তৃণমূলের মধ্যে আঁতাত হয়েছে। এলাকার মানুষ সবই বুঝতে পারছেন।” সিপিএম বা তৃণমূল, দু’পক্ষই অবশ্য পরস্পরের সঙ্গে ‘হাত মেলানো’র কথা মানতে নারাজ। সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক দুর্যোধন সর বলেন, “দলীয় স্তরে কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই পঞ্চায়েত সদস্যেরা অনাস্থার চিঠি দিয়েছেন। তৃণমূলের সঙ্গে থাকার কোনও প্রশ্নই নেই।” তৃণমূলের বর্ধমান জেলার অন্যতম পর্যবেক্ষক অলোক দাসের আবার দাবি, “সিপিএমের সঙ্গে অনাস্থা প্রস্তাবের চিঠি দেওয়া হয়নি।” প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “সিপিএমের ‘বি-টিম’ কে, তা মঙ্গলকোটের ঘটনা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।” |