ট্রেন থেকে নামিয়ে মহিলাকে ধর্ষণের মামলায় কাটোয়া আদালতে চার্জশিট দিল পুলিশ। তাতে মহিলার নিজের বয়ান ছাড়াও তাঁর ১১ বছরের মেয়ের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় কাটোয়া-আমোদপুর ন্যারোগেজ রেলে ডাকাতির সময়ে ওই মহিলাকে নামিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ এখনও পর্যন্ত চার জনকে গ্রেফতার করেছে। তিন জনের নামে হুলিয়া জারি করেছে আদালত।
বুধবার বিকেলে পুলিশ ১৮৬ পাতার চার্জশিট জমা দেয়। তাতে বলা হয়েছে, মহিলার বর্ণনা শুনে সিআইডি যে ছবি আঁকিয়েছিল তার সঙ্গে রেজাউল মির্জা ওরফে বাবু নামে এক দুষ্কৃতীর চেহারার মিল রয়েছে। ছবি দেখে ধৃতেরাও তা চিহ্নিত করেছে। পুলিশের অনুমান, সে-ই মহিলাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে ধর্ষণ করেছিল। দ্বিতীয় বার ধর্ষণের চেষ্টা হলে নয়ন শেখ ও ফরিদ শেখ নামে দু’জন বাধা দেয়। বীরভূমের লাভপুর থানার চৌহাট্টা গ্রামের ওই দু’জনকে পুলিশ আগেই গ্রেফতার করেছে। গত ১০ মে কাটোয়া উপ-সংশোধনাগারে গিয়ে অভিযোগকারিণী তাদের চিহ্নিতও করেছেন। |
প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ বর্ধমানের কেতুগ্রামে পাঁচুন্দি ও অম্বল স্টেশনের মাঝে ট্রেন থেকে একটি শিশু পড়ে গিয়েছে বলে হইচই শুরু হয়ে যায়। ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়তেই এক দল দুষ্কৃতী গার্ডের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে লুঠপাট শুরু করে। ১১ বছরের মেয়ের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তার বিধবা মাকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ তদন্তে জেনেছে, বীরভূমের র্কীণাহার থেকে উঠে দুষ্কৃতীরা মহিলার কাছেই বসেছিল। ট্রেন থামতেই তারা তাঁর কাছ থেকে দুল কাড়তে যায়। না পেয়ে ট্রেন থেকে নামিয়ে পাশের ঝোপে তাঁকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ও ১ মে বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দিতে মা ও মেয়ে একই বক্তব্য জানিয়েছেন। প্রথমে রেলপুলিশ তদন্ত করছিল। ঘটনার রাতেই কাটোয়ার কেশিয়া থেকে তারা সেন্টু শেখ ও নুর মহম্মদ নামে দু’জনকে ডাকাতির অভিযোগে গ্রেফতার করে। ডাকাতির মামলা এখনও তাদেরই হাতে। কিন্তু তারা এখনও চার্জশিট দেয়নি।
২৯ ফেব্রুয়ারি রেলপুলিশের হাত থেকে ধর্ষণ-কাণ্ডের তদন্তের ভার নেয় কেতুগ্রাম থানা। ৩ মার্চ নয়ন ও ফরিদকে গ্রেফতার করা হয়। আঁকা ছবির সূত্র ধরে মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার বদুয়া গ্রামে রেজাউল মির্জা, বীরভূমের নানুর থানার পোষলা গ্রামের কালাম শেখ এবং কেতুগ্রামেরই কায়েশ শেখ নামে তিন জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে পুলিশ তাদের বাড়ি থেকে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। কিন্তু তারা ধরা না পড়ায় হুলিয়া জারি করেছে কাটোয়া আদালত।
পুলিশ সাক্ষী হিসেবে ১৫ জনের নাম জানিয়েছে। তার মধ্যে কাটোয়া জিআরপি-র ওসি থেকে চিকিৎসকেরা রয়েছেন। অভিযোগকারিণী জামাকাপড় ও অন্যান্য নমুনা কলকাতায় কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। তবে তার রিপোর্ট পুলিশ এখনও পায়নি। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “আশা করি, তাড়াতাড়ি ফরেন্সিক রিপোর্ট পাব। তা পেলেই অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।” তদন্ত-পর্বে অভিযোগকারিণীর তো বটেই, তাঁর ১১ বছরের মেয়ের সাহসও সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। শুধু বিচারকের কাছে জবানবন্দি দেওয়াই নয়, উপ-সংশোধনাগারে গিয়ে দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করেছে সে-ও। এ দিন সে বলে, “শয়তানগুলো কবে শাস্তি পাবে, রোজ সেটাই ভাবি।” তার মা বলেন, “ওরা শাস্তি পেলে তবেই আমার লড়াই শেষ হবে।” |