গলায় আটকে ছিল জ্যান্ত কইমাছ। ছটফট করছিলেন বছর পঁচিশের যুবকটি। এমন পরিস্থিতিতে অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে কলকাতার হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরিমল রায় বুঝতে পারেন, কলকাতায় পৌঁছনোর আগেই রোগী শ্বাসরোধ হয়ে মারা যেতে পারেন। শেষমেশ বসিরহাট হাসপাতালেই ওই যুবকের অস্ত্রোপচার করেন তিনি। সুস্থ আছেন বাদুড়িয়ার খামারপাড়ার বাসিন্দা সরিফুল সর্দার।
‘রেফার’ করার পথে না হেঁটে ঝুঁকিপূর্ণ ও জটিল অস্ত্রোপচার করে জেলাতেও যে রোগীকে বাঁচানো যায়, সম্প্রতি তা দেখিয়েছে পুরুলিয়া। তলপেটে আট ইঞ্চির কাটারি ঢুকে গিয়েছিল এক কিশোরের। অস্ত্রোপচার করে তাকে বাঁচান পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। সে প্রসঙ্গ টেনে রাজ্যের একাধিক স্বাস্থ্য-কর্তা বলেন, “সামান্য জটিলতা থাকলেই জেলা থেকে রোগীকে কলকাতার হাসপাতালে পাঠানোর একটা প্রবণতা রয়েছে। পুরুলিয়া বা বসিরহাটের ওই চিকিৎসকেরা সেই প্রবণতার শিকার হননি। সেটাই প্রশংসনীয়।”
কী করে জ্যান্ত মাছ ঢুকল সরিফুলের গলায়? |
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় তিন বন্ধুর সঙ্গে বাড়ির কাছেই মাঠে বসেছিলেন সরিফুল। চোখে পড়ে, পাশেই জলাশয়ে ভাসছে কইমাছের ঝাঁক। জলে ঝাঁপিয়ে একটি মাছ ধরেন সরিফুল। হাতে ধরা মাছটিকে মুখে কামড়ে আরও মাছের সন্ধানে জলে হাতড়াচ্ছিলেন সরিফুল। আচমকা কথা বলতে গিয়ে মুখে কামড়ে ধরে থাকা মাছটি চলে যায় তাঁর গলায়। ধারাল কাঁটায় ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকে গলার ভিতরের অংশ। যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে নিস্তেজ হয়ে পড়েন ওই যুবক।
বাদুড়িয়া থেকে বসিরহাট হাসপাতালে পৌঁছতে লাগে প্রায় আধ ঘণ্টা। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে সরিফুলকে সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ বসিরহাট হাসপাতালে আনা হয়। ততক্ষণে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়েছে তাঁর।
সরিফুলের আত্মীয়দের পরিমলবাবু জানিয়ে দেন, এই অবস্থায় কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যেতে পারেন ওই যুবক। সে ক্ষেত্রে একটা ‘চেষ্টা’ করে দেখা যেতে পারে। শনিবার সন্ধ্যায় মিনিট পনেরোর দ্রুত অস্ত্রোপচারে মাছটিকে দু’টুকরো করে কেটে সরিফুলের গলা থেকে বের করে আনেন ওই চিকিৎসক। পরিমলবাবুর কথায়, “পরিস্থিতি খুবই জটিল ছিল। আমাদের এখানে যা পরিকাঠামো আছে, তাতে অস্ত্রোপচারে ঝুঁকি থাকলেও ছেলেটিকে ওই অবস্থায় কলকাতায় পাঠালে মৃত্যু নিশ্চিতই ছিল। মনে হল, যা থাকে কপালে। চেষ্টা করে দেখি।”
বসিরহাট হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, “পান থেকে চুন খসলে অনেক রোগীর বাড়ির লোক এখন ডাক্তারদের উপরে হামলা চালান। সে জন্যই অনেক ক্ষেত্রে ডাক্তারেরা ঝুঁকি নিতে চান না। তবে পরিমলবাবুর ভূমিকা সত্যিই উল্লেখযোগ্য।”
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সরিফুল বলেন, “ডাক্তারবাবুর জন্যই প্রাণে বাঁচলাম। জীবনে আর কখনও অন্তত ওই ভাবে কই মাছ ধরতে যাব না।!” |