আয়রন (আইএফএ) ট্যাবলেট নিয়ে বিপত্তি হিমন্ত বিশ্বশর্মার পিছু ছাড়ছে না। বুধবার থেকেস্কুলে আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খেয়ে, অসমে শোনিতপুর, দরংয়ের কয়েকশো ছাত্রী দফায় দফায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। এখনও তাদের অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সাফাইয়ে মোটেই তুষ্ট নন অভিভাবকেরা। তার উপরে গোহপুরের হাওয়াজান উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য পাঠানো আইএফএ ট্যাবলেট অষ্টম শ্রেণির ছেলেদের খাইয়ে দেওয়া হয়। এদের মধ্যে চারজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভতি। কাল ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরে ট্যাবলেট বিতর্কে ফের ঘৃতাহুতি পড়ে।
আজ মন্ত্রী হিমন্তের সমালোচনা করে বিবৃতি পাঠায় আলফা। ঘটনার জেরে, জেলা জুড়ে স্কুলে মধ্যাহ্নভোজ খেতে ছাত্ররা নারাজ। কিছু স্কুলেপ্রধান শিক্ষকের উপরে হামলাও হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে মন্ত্রীর কাছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দাবি করা হয়েছে।
আইএফএ ট্যাবলেট খেয়ে ছাত্রীদের অসুস্থ হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে গোহপুর, কলাবাড়ি, ঘাহিগাঁও-সহ নানা এলাকায় আসু, এজেওয়াইসিপি, আটসা প্রতিবাদ মিছিল বের করে। আপাতত ১০ দিনের জন্য রাজ্যের সব স্কুলে এই ট্যাবলেট খাওয়ানো বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হিমন্ত। অবশ্য হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন, নতুন যারা অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য এসেছে, তাদের অনেকেই আতঙ্কের শিকার। আর যারা এখনও নিজেদের অসুস্থ বলে দাবি করছে, তারাও অন্যের কথা শুনে এমন ভাবছে। কারণ, এই ওষুধের প্রভাব ২৪ ঘণ্টার বেশি থাকে না।
হিমন্ত বলেন, “জাতীয় নারী স্বাস্থ্য সমীক্ষা অনুযায়ী অসমের ৬৯ শতাংশ মেয়েই রক্তাল্পতার শিকার। এই রক্তাল্পতাই নারী মৃত্যুহার বৃদ্ধির প্রধান কারণ। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই ২০০৭ সাল থেকে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য প্রকল্প ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে নবম ও দশম শ্রেণীর ছাত্রীদের সপ্তাহে একটি করে ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খাওয়াবার প্রকল্প চালু হয়।”
ট্যাবলেট খেয়ে অসুস্থতার কারণ হিসাবে মন্ত্রী বলেন, “রাজ্যের বহু মেয়ে না খেয়ে স্কুলে আসায়, ট্যাবলেটের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়। এতদিন তা বিক্ষিপ্তভাবে হয়েছে। তাই নজরে আসেনি। এ বার অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়লেওওষুধ খাওয়া বন্ধ করা ঠিক হবে না।”
অবশ্য আসু মন্ত্রীর এই বক্তব্যে সন্তুষ্ট নয়। অসুস্থ হওয়া বহু মেয়েও দাবি করে, তারা খেয়েই স্কুলে এসেছিল। পরেশপন্থী আলফার এতগুলি মেয়ে অসুস্থ হওয়ায় হিমন্তকে দায়ী করে বলে, “কোথায় ট্যাবলেটগুলির গুণগত মান যাচাই হয়েছে তা সকলকে জানাতে হবে। ছাত্রীদের দেহে লোহার পরিমাণ না জেনেই সকলকে নিয়ম করে আয়রণ ট্যাবলেট খাওয়ানোও ঠিক হয়নি।
আলফার কার্যনির্বাহী সভাপতি অভিজিৎ অসম বলেন, “সিরাম ফেরিটিন হাতের কাছে মজুত রেখে এই ট্যাবলেট খাওয়াতে হয়। নাগাড়ে ট্যাবলেট খাইয়ে গেলেই হয় না। ছাত্রীদের রক্ত নিয়মিত পরীক্ষা করাও প্রয়োজন। এতজনের অসুস্থতার জন্য, খালি পেটকে দায়ী করে, মন্ত্রী দোষ এড়াতে চাইছেন।” |