সিটি স্ক্যান বা এমআরআই কী ভাবে করতে হয়, হাতেকলমে তা শিখতেই পারছেন না রেডিওলজির স্নাতকোত্তর ছাত্রছাত্রীরা! কারণ, সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ‘পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ (পিপিপি) মডেলে চলা স্ক্যান-এমআরআই সেন্টারে বেসরকারি সংস্থাগুলি দামি যন্ত্রে ছাত্রদের হাতই দিতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ। সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের কাজ পর্যবেক্ষণে গঠিত স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটি গত সপ্তাহে কলকাতার কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শনে গেলে রেডিওলজির বিভাগীয় প্রধানেরাই লিখিত ভাবে এই অভিযোগ করেছেন।
ওই চিকিৎসকেরা বলেছেন, “সরকারি কলেজ থেকে পাশ করা রেডিওলজির অধিকাংশ পড়ুয়াই এ কারণে অদক্ষ থেকে যাচ্ছে। সরকার অবিলম্বে ব্যবস্থা নিক।” কমিটির রিপোর্ট পেয়ে মেডিক্যাল কলেজে পিপিপি মডেলে এমআরআই-স্ক্যান সেন্টার চালুর ‘মউ’-এর নিয়ম বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এত দিন মউ-এ লেখা থাকত, মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সব রকম সাহায্য করতে হবে। তবে হাতেকলমে যন্ত্র চালাতে দিতে হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা থাকত না। নতুন মউ-এ স্পষ্ট লেখা থাকবে, ছাত্রদের এমআরআই ও সিটি স্ক্যান যন্ত্র চালাতে দিতে হবে। যে সংস্থা রাজি হবে না, তারা বাদ যাবে। রেয়াত করব না।”
সুশান্তবাবু আরও জানান, প্রত্যেক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে বলা হয়েছে, রেডিওলজির ছাত্রদের পিপিপি পরিচালিত স্ক্যান সেন্টারে যন্ত্রে হাত দিতে দেওয়া না হলে তাঁরা যেন নিজেরা এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন। দরকারে চুক্তি মাঝপথে ভেঙে নতুন সংস্থাকে আনা হবে। বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্যতম সদস্য ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানান, ছাত্রছাত্রীরা যাতে বিভাগে বসে মনিটরে স্ক্যান সেন্টারের কাজ দেখতে পারেন, সেই প্রস্তাবও তাঁরা সরকারকে দিচ্ছেন।
কী ভাবে হেনস্থা হচ্ছেন পড়ুয়ারা? মেডিক্যালের রেডিওলজির প্রধান অশোক ভদ্রের কথায়, “সেন্টারে ছাত্রদের নিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি, কখন দয়া করে ঢুকতে দেবে। ঢুকতে দিলেও বসতে দেয় না। ছাত্রদের দূর থেকে দাঁড়িয়ে কাজ দেখতে হয়। যন্ত্রে হাত দিতে চাইলে বেসরকারি সংস্থার চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানেরা বলেন, ৫-৬ কোটির যন্ত্র খারাপ হয়ে যাবে। ছাত্রছাত্রীরা নামী কলেজ থেকে রেডিওলজি পাশ করছে, অথচ কিচ্ছু কাজ শিখছে না!”
এসএসকেএমের রেডিওলজি বিভাগের সদ্য প্রাক্তন চিকিৎসক রেজাউল করিমেরও অভিযোগ, দিনে এক জনের বেশি ছাত্রকে স্ক্যান সেন্টারে ঢুকতে দেওয়া হয় না। যন্ত্র ছুঁতে দেওয়া হয় না। প্রত্যেক মেডিক্যাল কলেজ থেকে রেডিওলজির ছাত্রেরা যন্ত্র চালানো শিখতে বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিতে ভিড় জমায়। কারণ, একমাত্র সেখানেই যন্ত্র পুরোপুরি সরকারের। ভিড়ের চোটে কেউই ভাল করে কিছু শিখতে পারে না। একই অভিযোগ তুলে এনআরএসের রেডিওলজির প্রধান আশিসকমল মান্নাও বলেন, “সরকারি হাসপাতালের রেডিওলজির ছাত্র এবং টেকনিশিয়ানের ডিপ্লোমা কোর্সের ছাত্রছাত্রীরা কিচ্ছু শিখছে না। এ দিকে যন্ত্র চালাতে জানাই তাঁদের প্রধান কাজ। এর ফলে পরে চাকরি পেতে এবং কাজ করতে তাঁরা অথৈ জলে পড়ছেন।”
যে বেসরকারি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে যন্ত্রে হাত দিতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তারা কেউই এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। |