নির্বাচনী আচরণবিধির গেড়োয় রক্তসঙ্কট শুরু হয়েছে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে।
পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়েছে, কাউকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হলে দাতা জোগাড় করে আনতে হচ্ছে সেই রোগীর পরিবারের লোকজনকেই। সমস্যা মেটাতে আগামী সপ্তাহেই বিশেষ রক্তদান শিবিরের আয়োজন করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে অনুরোধ করা হয়েছে আইআরবি, সিআইএসএফ-এর মতো বিভিন্ন সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীকেও। হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাস বলেন, “মূলত নির্বাচনী আচরণবিধি শুরু হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা সংস্থা রক্তদান শিবির আয়োজন না করতে পারছেন না। সে কারণেই এমন রক্তসঙ্কট।”
নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হয়ে গেলে রক্তদান শিবির আয়োজন করতে পারে না রাজনৈতিক দলগুলি। কারণ সেক্ষেত্রে ভোটারদের প্রভাবিত করার সুযোগ থেকে যায়। তাই যে কোনও নির্বাচন এলেই অল্পবিস্তর রক্তের সঙ্কট দেখা দেয় সরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে। দুর্গাপুরের মহকুমা হাসপাতালও তার ব্যতিক্রম নয়।
তবে এ বার পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে তীব্র দাবদাহের কারণে। আবহাওয়ার কারণে অরাজনৈতিক সংস্থাগুলিও রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে উঠতে পারছে না। সব মিলিয়ে রক্তের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে।
আমলাজোড়া এলাকা থেকে মায়ের চিকিৎসা করাতে এসেছেন শ্যামল সাধু। তিনি বলেন, “মায়ের রক্ত বি পজিটিভ গ্রুপের। আমার এক বন্ধু এসে রক্ত দিয়ে যায়। না হলে যে কী হত জানি না।” দুর্গাপুর মহকুমা ব্লাড ডোনার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক কবি ঘোষ বলেন, “নির্বাচনী আচরণবিধির জন্য রক্তদান বন্ধ থাকা খুবই দুঃখের। যাঁরা এই নিয়ম করেছেন তাঁরা বা তাঁদের পরিজনদেরও তো রক্তের প্রয়োজন হতে পারে। তাই বিষয়টি অন্য ভাবে ভাবা দরকার। আমরা ৩ জুনের জন্য অপেক্ষা করছি।” তাঁর বক্তব্য, “রাজনৈতিক দলগুলি ভাষণের প্রতিযোগিতা না করে রক্তদান নিয়ে প্রতিযোগিতা করুক।”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, রক্তের জন্য সমস্যায় পড়ে রোগীরা ভাবছেন রক্ত থাকলেও কর্তৃপক্ষ তা দিতে নিমরাজি। অনেক সময় রক্ত থাকলেও রোগীকে দেওয়া যাচ্ছে না। হয়তো যে গ্রুপের রক্ত মজুত রয়েছে, রোগীর তা লাগবে না। সেক্ষেত্রে দাতার উপরেই ভরসা করতে হচ্ছে। হাসপাতালের চিকিৎসক তথা প্রাক্তন সুপার মিহির নন্দী বলেন, “এই পরিস্থিতি যে কোনও রোগীর জন্যই ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া বিপদ হলে তখন দায়ভার এসে পড়বে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপরই।” হাসপাতাল সুপার দেবব্রত দাস জানান, পরিস্থিতি সামলাতে আগামী সপ্তাহে হাসপাতালের উদ্যোগে বিশেষ রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন, “পাশাপাশি আইআরবি, সিআইএসএফ-এর মতো বাহিনীগুলিকে অনুরোধ করা হয়েছে রক্তদান শিবির করার জন্য। সে গুলি হলে আশা করি পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে।” |