বৃষ্টির জন্য হা-পিত্যেশ করে বসে ছিল কলকাতা। সঙ্গে গোটা দক্ষিণবঙ্গ। ১২ দিন পরে রবিবার সন্ধ্যায় অবশেষে কাটল সেই খরা।
গত কয়েক দিন ধরে যে ভাবে বাতাসে জলীয় বাষ্প ঢুকছিল, তাতে অস্বস্তি বাড়ছিল। বিক্ষিপ্ত ভাবে কোথাও কোথাও সামান্য বৃষ্টি ছাড়া আর কোনও সুখবর দিতে পারছিল না আবহাওয়া দফতর। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যায় আকাশ কালো করে নামল বৃষ্টি। তার আগে বইল কালবৈশাখী।
কোনও আভাস-ইঙ্গিত ছাড়াই এ দিন কালবৈশাখী আসায় বিস্মিত আবহবিদেরা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের এক আবহবিদ ঠাট্টা করে বললেন, “কেকেআর-এর খেলা আছে। বৃষ্টি তো হবেই। কলকাতায় কেকেআর-এর যে ক’টা খেলা হয়েছে, তার বেশ কয়েকটিতেই বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে একটি খেলা তো ভেস্তেই যায়। হোক না খেলা চেন্নাইয়ে। কেকেআর-এর খেলা বলেই কলকাতার আকাশ ফের গর্জেছে। বৃষ্টি নেমেছে।” |
সন্ধ্যার ঝড়-বৃষ্টি ক্রিকেটপ্রেমীদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। তাপমাত্রা বেশ কিছুটা কমায় জমিয়ে খেলা দেখেছেন মানুষ। কিন্তু যাঁরা আইপিএল উপলক্ষে পাড়া সাজিয়েছিলেন ফেস্টুন, ব্যানার, পোস্টারে, তাঁদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে বৃষ্টি। সব সাজ লন্ডভন্ড। তবে ইডেনে জায়ান্ট স্ক্রিন লাগানো হয়েছিল সিএবি অডিটোরিয়ামে। তাই তা রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু রাস্তায় জল জমে যাওয়ায় একটা সময়ে ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রও বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। এত আয়োজন শেষ পর্যন্ত মাঠে মারা যাবে না তো! বৃষ্টি তাড়াতাড়ি থামায় সেই দুশ্চিন্তা অবশ্য কেটেছে।
কিন্তু বৃষ্টির কোনও পূর্বাভাস ছিল না আলিপুর আবহাওয়া দফতরের। সাধারণত কালবৈশাখী তৈরি হতে তাপমাত্রা যতটা বাড়তে হয়, এ দিন তেমন পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি। ঝাড়খণ্ড বা ওড়িশা মালভূমিতে উল্লম্ব মেঘ তৈরি হওয়ার অনুকূল পরিস্থিতিও ছিল না। জলীয় বাষ্প সেই উচ্চতা পর্যন্ত পৌঁছচ্ছিল না। তবু এ দিনের ঝড় কালবৈশাখীই, বলছে আবহাওয়া দফতর। এ বিষয়ে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “রবিবার দুপুর থেকেই দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় ভাবে তৈরি হচ্ছিল বজ্রগর্ভ মেঘ। বায়ুপ্রবাহের আনুকূল্যে সেই মেঘপুঞ্জগুলি এক সময়ে একে অপরের সঙ্গে জুড়ে তৈরি করল মালা। আর মালার ফুলগুলি মিশেই তৈরি হল উল্লম্ব মেঘ। যা ভেঙে বৃষ্টি নামল শহর ও সংলগ্ন এলাকায়। সঙ্গে ঝড়।”
আবহবিদদের বিশ্লেষণ, প্রথমে স্থানীয় ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয় বিহার সংলগ্ন দক্ষিণবঙ্গের বর্ধমান শিল্পাঞ্চলে। একই সময়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হতে থাকে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও বীরভূমে। সেই মেঘপুঞ্জগুলি একে অপরের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে বাঁকুড়া ও বর্ধমানে বৃষ্টি নামে। এর মধ্যেই হুগলি, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও কলকাতায় আলাদা ভাবে তৈরি হতে থাকে বজ্রগর্ভ মেঘ। সেই মেঘগুলি জুড়ে গিয়ে তৈরি হয় উল্লম্ব মেঘ। তাতেই এ দিনের ঝড়-বৃষ্টি।
এই বৃষ্টি কি চলবে? আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, এ দিনের ব্যাপারটা ছিল সাময়িক। আজ, সোমবার ফের অস্বস্তিকর আবহাওয়া থাকবে কলকাতা-সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে। |