|
|
|
|
বাড়ির অমতে পড়া চালিয়ে সাফল্য সামসুল-সফিকুলের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বসিরহাট |
সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষায় অঙ্কে ৬ পাওয়ার পরে বাবা চেয়েছিলেন আর পড়াশোনা নয়, কাজ করে সংসারের হাল ধরুক ছেলে। সেই ছেলেই নিজের চেষ্টায় মাধ্যমিক সমতুল আলিম পরীক্ষার মেধাতালিকায় নবম স্থান পেয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির গাবাটি এএইচএম সিনিয়র মাদ্রাসার শেখ সামসুল আলমের প্রাপ্ত নম্বর ৭৩২। সাতটি বিষয়ে লেটার। ওই মাদ্রাসারই আরও এক ছাত্র সফিকুল সাঁপুই পাঁচটি বিষয়ে লেটার-সহ ৭২৫ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় ১৩ তম স্থান পেয়েছে।
দুই ছাত্রের জন্য গর্বিত প্রধান শিক্ষক শেখ আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, “সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার দুঃস্থ পরিবারের ছেলে হয়েও যে ভাবে পরিশ্রম করে ওরা এই সাফল্য পেয়েছে তাতে আমরা খুশি।” বেড়মজুর গ্রামে বাড়ি সামসুলের। বাবা শেখ মনসুর আলি ইটভাটায় কাজ করেন। বাবাকে সাহায্য করতে পড়াশোনার ফাঁকে সামসুলও মাঝেমধ্যে ইটভাটায় গিয়ে কাজ করে। বাবাও চেয়েছিলেন ছেলে রোজগার করুক। কিন্তু বাধা দেন মা সাহানুর বিবি এবং দাদু বাবুর আলি। যে ভাবেই হোক পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জেদ ধরেছিল সামসুলও। প্রতিদিন প্রায় ২০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে মাদ্রাসায় যাওয়া-আসা। তার উপর কোনও গৃহশিক্ষক ছাড়াই এমন ফল করেছে সামসুল। তবে পাশে পেয়েছিল মাদ্রাসার শিক্ষকদের। তিন ভাইবোনের মধ্যে বড় সামসুলের কথায়, “ঠিক করেছিলাম যাই হোক, পড়াশোনা চালিয়ে যাব। আরও পড়াশোনা করব। ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করতে চাই। ভাইবোনকেও স্কুলে পাঠাব।”
একই ইচ্ছা সফিকুলের। মাদ্রাসা থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে রামপুর গ্রামে বাড়ি তার। বাবা রফিকুল সাঁপুই নদীতে মাছ ধরেন। শাড়িতে জরি বসানোর কাজ করেন মা রোকেয়া বিবি। সংসারের টানে মাঝেমধ্যে মাছ ধরতে যেতে হয় সফিকুলকেও। রফিকুল বলেন, “বরাবর চেয়েছি ছেলেটা পড়াশোনা করে আমাদের মাথা উচু করুক। তাই ওর এই সাফল্যে আমরা খুব খুশি। ওর মাও চান ছেলে আরও পড়ুক। কিন্তু এই অভাবের সংসারে কত দূর তা পারব জানি না।” কিন্তু সাফল্যেও মন খারাপ সফিকুলের। তার কথায়, “অঙ্কে এক নম্বরের জন্য লেটার হল না। এই আক্ষেপটা থেকেই গেল।” |
|
|
|
|
|