প্রখর গ্রীষ্মে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে পরিবহণ শিল্পও। বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক তপন অধিকারী বলেন, “গরমে রুটের বাসের সংখ্যা অবশ্য কমেনি। কিন্তু এখন যেটা হয়েছে সকাল ১১টার পর থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত বাসে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এমনিতেই এখন স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ায় বাস যাত্রী স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই কমে গিয়েছে। সেই সঙ্গে অত্যধিক গরমে বাড়ির বাইরে অনেকেই বের হতে চাইছেন না।”
ডিষ্ট্রিক্ট মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক জয়দেব মণ্ডলও বলেন, “এত গরমের মধ্যে চালকদের পক্ষে বাস চালানো সম্ভব হচ্ছে না। সর্ব ক্ষণ ইঞ্জিনের গরম, কাঁচের উপরে রোদের তাপ, রাস্তার গরম হাওয়াসব মিলিয়ে প্রানান্তকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে চালকদের।” তাঁর দাবি, “গরমের কারণেই বহরমপুর-সাগরপাড়া রুটের বাস চালক ব্রজকান্ত দাস (৫১) ও বাস কর্মী রাজেন ভাস্করের (৫৫) মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা দু’জনেই সারা দিন কাজ করে বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে তাঁদের মৃত্যু হয়।” জয়দেববাবু বলেন, “অবিলম্বে বৃষ্টি না হলে বাস কর্মীদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।”
মুর্শিদাবাদ জেলা নিত্য বাস যাত্রী সমিতির পক্ষে সমরেন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, “প্রকৃতির কারণে সব দিক থেকেই অব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। এখন সঠিক সময়ে বাস পাওয়া যাচ্ছে না, বিশেষ করে দুপুরের দিকে বাস অপ্রতুল। সকালের দিকে ভিড়ে ঠাসা বাসে অফিসে পৌঁছেও রেহাই নেই। অফিসেও প্রয়োজনীয় পানীয় জলের অভাব রয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সমস্ত অফিসই সমান।”
এদিকে ঝলসানো রোদে বহরমপুরের রাস্তায় অসম্ভব হারে রিকশা ভাড়া বেড়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে কমে গিয়েছে রিকশা সংখ্যাও। বহরমপুর রিকশা চালক সমিতি সভাপতি শান্তিপদ দত্ত বলেন, “দুপুরের দিকে রোদের তেজে কেউ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। ফলে যাত্রী হচ্ছে না। এজন্য ওই সময়ে রিকশা চলছে কম। এছাড়াও অল্পেতে রিকশা চালকরা কাহিল হয়ে পড়ছেন। তাঁরাও রোদ এড়াতে দুপুরের দিকটি এড়িয়ে চলছেন।” তাঁর দাবি, গত বুধবার ‘সানস্ট্রোকে’ পলাশ চৌধুরী (৩৭) নামে এক রিকশা চালকের মৃত্যু হয়েছে। রিকশা চালিয়ে দুপুরের দিকে মালিকের কাছে তা জমা রেখে মাছমারা লিচু বাগানের মধ্যে দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে খেজুর গাছের নিচে তাঁকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে নিউ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
চড়া রোদের তাপ এড়াতে মুখে রুমাল বেঁধে ও মাথায়-গলায় বড় রুমাল জড়িয়ে বহরমপুরের রাস্তায় মোটরবাইক ও স্কুটার চালাতে দেখা যাচ্ছে। দুপুরের পর থেকে শহরের রাস্তা প্রায় খাঁ-খাঁ করছে। বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া কৃষ্ণনাথ রোডে পথচারীদের জল খাওয়ানোর জন্য বন্দোবস্ত করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ওই রাস্তায় ধারে ছাতা দিয়ে আড়াল করে দুটো মাটির বড় কুঁজোয় জল ভরে রাখা হয়েছে। পথচলতি মানুষ ওই জলে তেষ্টা মেটাচ্ছেন। সন্ধ্যার পরে ভাগীরথীর পাড় লাগোয়া রাস্তায় পুরবাসিন্দাদের যে ভিড় দেখা যায়, রবিবার আইপিএল ফাইনালের জন্য তা অবশ্য দেখা যায়নি। |