সারা দিন গরমের জন্য খাঁ খাঁ শহর। রাতেও বিলকুল তাই। কেবল শেষ বিকেলে ঝড়-বৃষ্টির পরে আইপিএল ফাইনাল দেখতে বসার আগে ঘণ্টা খানেক যেন প্রাণ ফিরে পেল কৃষ্ণনগর সহ দুই জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। কিন্তু বহরমপুরে আকাশ কালো হয়ে রইল সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত। অসহ্য গুমোটে কষ্ট পেতে হল সারা দিন। তবে তাপপ্রবাহ অন্য দিনের তুলনায় জামাইষষ্ঠীর দিন কমই ছিল।
গত এক মাস ধরে যেখানে মুর্শিদাবাদের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি’র নিচে নামেনি, সেখানে এদিন বহরমপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.২ ডিগ্রি। এদিন দুপুরের পর থেকে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণও কমে যায়। সকালের দিকে ৯২ শতাংশ থাকলেও পরে দুপুরের দিকে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে হয় ৬৯ শতাংশ। জেলা কৃষি দফতরের সিনিয়র মেটরোলজিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট নিগমানন্দ পাল বলেন, “টানা কয়েক দিন বহরমপুরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় ৩-৪ ডিগ্রি বেশি ছিল। এদিন অবশ্য তাপমাত্রা অনেকটাই কমে যায়। তবে এদিন সকালের দিকে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ বেশি ছিল। দুপুরের দিকে তা কমে যাওয়ায় হাঁসফাঁস অবস্থা তৈরি হয়েছে।”
কৃষ্ণনগর শহরে কিন্তু রবিবার সন্ধ্যায় বেশ ছুটির মেজাজই তৈরি হয়ে গিয়েছিল রাতারাতি। সকালে হাঁসফাস অবস্থায় কাটানোর পরে বিকেলের দিকে আকাশ ভরে মেঘ জমে। তারপরে শুরু হয় এলোমেলো ঠাণ্ডা হাওয়ার দাপট। বৃষ্টিও হল। তবে তেমন কিছু নয়। কিন্তু তাতেই রাস্তায় নেমে পড়লেন অনেকে। খোশমেজাজে বৃষ্টিতে ভিজলেন ছেলে থেকে বুড়ো কৃষ্ণনাগরিকেরা। পোস্ট অফিস মোড়ের চায়ের দোকানদার ঝন্টু দাস বলেন, “এমনিতে রবিবার ভাল ব্যবসা হয়। কারণ এই দিন শহরের ছেলেরা শহরেই থাকেন। তাঁরা চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে আসেন। কিন্তু এই গরমে কেউই বেরোচ্ছিলেন না। যাঁরা বেরোচ্ছিলেন, তাঁদেরও কেউ আর চায়ের দোকানের দিকে ঘেঁসছিলেন না। কিন্তু সন্ধ্যায় এক পশলা বৃষ্টির পরে পরিস্থিতি পুরো বদলে গেল। সারা দিন মাছি তাড়ানোর পরে তখন আর দম ফেলার ফুরসৎ পাচ্ছিলাম না।” কিন্তু সেটা কেবলই ঘণ্টা দেড়েক। তারপরে আবার আইপিএল দেখতে রাস্তাঘাট ফাঁকা।
তবে বৃষ্টি হলে তার প্রভাব তো থাকে কিছু ক্ষণই। তারপরে সেই আবার গরম। গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মীদের মধ্যে ‘ছুটি’ নিয়ে সপরিবারে বেড়াতে যাওয়ার ধূম পড়েছে। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজীব কুমার বলেন, “এই সময়ে স্কুল-কলেজে গ্রীষ্মকালীন ছুটি থাকে। ফলে অভিভাবকদের মধ্যে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। সেই রকম বেড়াতে যাওয়ার জন্য ৭-১০ দিনের ছুটির আবেদন জমা পড়ছে বিভিন্ন সরকারি দফতরে। তাঁরা ফিরে এলে অন্যরাও একই কারণ দেখিয়ে ছুটির আবেদন করছেন এবং তা মঞ্জুরও করতে হচ্ছে।”
তবে গরমের কারণে শ্রমিক-ঘাটতি দেখা দেওয়ায় বহরমপুর পুর-এলাকার বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ থমকে রয়েছে বলে অভিযোগ। বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, “জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দিনমজুর যাঁরা প্রতি দিন বহরমপুরে আসেন, গরমে তাঁরা আসছেন না। ফলে শহরকে আলো দিয়ে সাজানো বা সবুজায়নের কাজ করার মতো দিনমজুরের অভাব দেখা দিয়েছে। আগে যেখানে দিনে ১০টি করে বিদ্যুতের খুঁটি বসত। শ্রমিকের অভাবে সেখানে ৩টে খুঁটিও বসানো যাচ্ছে না। একই কারণে বেশ কিছু রাস্তা সংস্কারের কাজও থমকে রয়েছে।” |