প্রবল ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেই গত ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশ বায়ুসেনার যুদ্ধ বিমান মুর্শিদাবাদের সালারের রাইগ্রামের তিল খেতে অবতরণ করতে বাধ্য হয়। তার ৩২ দিন পরে রবিবার ওই যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ খুলে বাংলাদেশ নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারত-বাংলাদেশ বায়ুসেনার যৌথ দল রাইগ্রামে গিয়েছেন।
কালবৈশাখীর কোপে দিক হারিয়ে গত ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যা নাগাদ প্রবল বৃষ্টির মধ্যে রাইগ্রামের তিল খেতের মধ্যে ওই যুদ্ধবিমানের জরুরি অবতরণে বাধ্য হন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৪১ নম্বর ফ্লাইং স্কোয়াডের ফ্লাইং ক্যাডেট রাশেদুল ইসলাম ওরফে রাশেদ। বিমানটি খুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বায়ুসেনার তরফে কম্যান্ডার আশাদুল করিমের নেতৃত্বে ১২ জনের একটি দল এবং ভারতীয় বায়ুসেনার ৫ জনের একটি দল মুর্শিদাবাদে পৌঁছায়। ১৭ জনের ওই দলটি কান্দিতে একটি হোটেলে রয়েছেন। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজীব কুমার বলেন, “জরুরি অবতরণের ফলে ওই যুদ্ধ বিমান অকেজো হয়ে পড়ে। ফলে তা উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা না থাকায় যুদ্ধ বিমানের যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই মত রাজ্য সরকারের নির্দেশ পেয়ে ওই যুদ্ধ বিমান নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে যাবতীয় সাহায্য করছে জেলা প্রশাসন।” |
গত ২৫ এপ্রিল মুশির্দাবাদের সালারের রাইগ্রামে জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশ বায়ুসেনার
একটি যুদ্ধবিমান। রবিবার থেকে ওই যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ খোলার কাজ শুরু হয়েছে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক |
এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ তাঁরা কান্দি থেকে গাড়িতে করে ৩০ কিমি দূরে রাইগ্রামে পৌঁছন। এক সঙ্গেই ওই যুদ্ধ বিমানের যন্ত্রাংশ খোলার কাজ শুরু হয়। কিন্তু দুপুর তিনটে নাগাদ প্রবল ঝড়-বৃষ্টির মুখে কাজ থমকে যায়। বৃষ্টির হাত থেকে রেহাই পেতে তাঁরা তাঁবুর মধ্যে আশ্রয় নেন। পরে এদিনের মতো কাজ শেষ করে তাঁরা কান্দি ফিরে যেতে বাধ্য হন। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “বিমানের সমস্ত যন্ত্রাংশ খুলতে ২-৩ দিন লাগবে। ফলে মঙ্গলবারের আগে তা নিয়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে রাইগ্রাম থেকে লরিতে করে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ওই যন্ত্রাংশ খুলে বিমানটি নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” জরুরি অবতরণের পরেই যুদ্ধবিমান থেকে বেরিয়ে রাশেদ স্থানীয় মনিরুদ্দিন শেখের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখান থেকেই বিষয়টি সালার থানা জানতে পারে। ১৫ মিনিটের মধ্যেই সালার থানার ওসি সুব্রত মজুমদার বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। মনিরুদ্দিনের ভাই মহম্মদ জহিরুল শেখ বলেন, “সেই সময়ে লোডশেডিং ছিল। অন্ধকারের মধ্যে বিকট একটা আওয়াজ শুনতে পাই। তার পরেই দেখি বাড়ির বাইরে পাইলটের পোশাক পরে অল্পবয়সী এক জন দাঁড়িয়ে আছে। বাইরে তখন প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল।”
তত ক্ষণে বিমান অবতরণের কথা দাবানলের মতো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ওই রাতেই মোটরবাইক-সাইকেল, রিকশাভ্যান, গাড়িতে করে বহু মানুষ ঘটনাস্থলে জড়ো হন। ওই রাতেই অবশ্য যুদ্ধবিমানটির চারদিক বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। ওই রাতেই বহরমপুর থেকে পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর, কান্দি থেকে মহকুমাশাসক দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য থেকে ঘটনাস্থলে যান। বিমান অবতরণের পরেই যুদ্ধবিমানের ওই চালকের বাঁ পায়ে আঘাত লাগায় সালার ব্লক মেডিক্যাল অফিসার সত্যজিৎ সরকার তাঁর চিকিৎসা করেন। ওই রাতেই তাঁকে নিয়ে এসে বহরমপুর সার্কিট হাউসে রাখা হয়। পরের দিন ২৬ এপ্রিল দুপুরে জেলা প্রশাসনের তরফে তাঁকে বহরমপুরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর পরেই ভারতীয় বায়ুসেনার বিশেষ হেলিকপ্টারে করে তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে সালার থানার পুলিশি প্রহরায় ওই বিমানের যন্ত্রাংশ খুলে বিমানের পাশেই জমিতেই রাখা হচ্ছে। পরে সমস্ত যন্ত্রাংশ সেখান থেকে ট্রাক্টরে করে রাইগ্রাম মোড়ে কান্দি-সালার রাজ্য সড়কে নিয়ে গিয়ে রাখা হবে। সেখান থেকে লরিতে করে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদর কার্যালয় যশোর নিয়ে যাওয়া হবে। এসডিও দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “ভারত ও বাংলাদেশ বায়ুসেনার ১৭ জনের ওই দলটি কান্দিতে একটি হোটেলে রয়েছেন। তাঁরা গাড়িতে করেই কান্দি থেকে যাতায়াত করছেন। এমনকী তাঁরাই উদ্যোগী হয়ে লরি করে ওই যুদ্ধ বিমানের যন্ত্রাংশ থেকে বিভিন্ন অংশ খুলে নিয়ে যাবেন বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এজন্য জেলাপ্রশাসনের কোনও অর্থ ব্যয় হচ্ছে না।” |